পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ÖÖ ð বিভূতি-রচনাবলী বাড়িতে সেদিনকার মিটিং ও আমার মানপত্র দেওয়া সম্বন্ধে খুব কথাবাৰ্ত্ত হল। ইন্দু বল্লে— আজ যদি আপনার বাবা-মা বেঁচে থাকতেন ! সকালে টুকোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ছেলেবেলায় টুকো খেলত আমার ছোট বোন মণির সঙ্গে সে আজ ১৫।১৬ বছর পরে বিধবা হয়ে গ্রামে ফিরে এসেচে। এসে আমায় নমস্কার করলে—ওর মুখ ভুলেই গিয়েছিলুম—এখন দেখে মনে হল—ই, এ মেয়েকে আগে দেখেছিলুম বটে। পরদিন সকালে নটার ট্রেনে কৃষ্ণনগর সাহিত্য-সম্মেলনে গেলুম। গাছে গাছে শিমূলফুল ফুটে লাল হয়ে আছে। সজনী, অমল বোস, সুনীতি বসু, প্রবোধ সান্তাল, বিজয়লাল সকলের সঙ্গে কৃষ্ণনগর স্টেশনে দেখা । অতুল গুপ্ত ও যামিনী গাঙ্গুলী একখানা মোটরে আসছিলেন, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় তাতেই আমায় উঠিয়ে দিলেন। মনোমোহন ঘোষের যে বাড়িতে আজকাল কলেজিয়েট স্কুল, ওখানেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। ঢুকেই দেখি প্রবোধ সান্তাল বসে খাচ্চে। আমি ও ইউনিভার্সিটির প্রিয়রঞ্জনবাবু একসঙ্গে খেতে বসে গেলুম। খেয়েই সভাস্থলে যাই। প্রমথ চৌধুরী সভাপতি। কৃষ্ণনগর রাজবাটার নাটমন্দিরে সভা বসেচে। কখনও এর আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মধ্যে ঢুকিনি—যদিও এর আগে বাল্যকালে একবার কৃষ্ণনগর এসেছি। তার অভিজ্ঞতা খুব অদ্ভুত। আর বছর দুই আগে কয়েক ঘণ্টার জন্তে যে এসেছিলুম আমার ছোট ভাইয়ের জন্যে পাত্রী দেখতে, সে কৰ্ত্তব্যের মধ্যেই গণ্য নয় । কৃষ্ণনগরে বাবার সেই মা—আমাদের আলুভাতে ভাত খাওয়ানো—আমার হতাদর–কত কথাই মনে পড়ে। সেই আর এই ! সে গল্প আর একদিন করব । কৃষ্ণনগর থেকে সেই রাত্রে রাণাঘাটে এসে খগেনমামার বাড়িতে রইলুম—তাও সেই বাল্যে ওদের বাড়ি শুয়েছিলুম, আর কখনও থাকিনি। একটা সরস্বতীঠাকুর বিসর্জন দিতে গেল শোভাযাত্রা করে অনেক রাত্রে । বেজায় শীত পড়ল রাত্রে ! পরদিন এলুম এগায়োটার ট্রেনে গোপালনগরে। স্টেশনে আবার খগেন মিত্র ও প্রভাতকিরণ বসুর সঙ্গে দেখা । রেস্তোরাতে বসে চ খেতে খেতে চণ্ডীদাস সম্বন্ধে আলোচনা করা গেল অনেকক্ষণ । দেশে গিয়ে বেশ লাগল। তখনি ন'দির কাছে একটু তেল চেয়ে নিয়ে নদীতে স্নান করে এলুম। ওপাড়ার সেই কুমুৱণী ক্ষার কাচছে। শুকনো ফুল পড়ে আছে কত বনসিমতলার ঘাটে। পরশু কতক্ষণ ঘাটে বসেছিলুম, বনের কুল পেকেচে একটা ডালে, দরিদ্র পল্লীজননী আর কি দিয়েই বা আদর করবেন ? তবুও কত স্মৃতি জড়ানো রয়েচে এই বনসিমতলার ঘাটের সঙ্গে ! খুকু ওখানে দাড়িয়ে গল্প করত নেয়ে উঠে—এই তো সেদিনও । সেদিন এসে খুব ঘুমুলাম দুপুরে। উঠে দেখি বেলা গিয়েচে । চড়কতলায় এসে বসলুম, মুসলমান মাস্টারটি কোথা থেকে সন্ধান পেয়ে এসে পড়েচে অম্নি। চাচা এসে আগুন করলে ও বক্‌ বক্‌ শুরু করলে। ইন্দু রাত্রে একটি বিদেশী পথিক সেদিন কেমন করে শিঙেতলার মাঠে বেঘোরে মারা গিয়েছিল—সে গল্প করলে। সে কাহিনী বড়ই করুণ । পরদিন সকালে সীতানাথ জেলের নৌকাতে বনগায়ে চলে এলুম। ভেবেছিলুম খুকুদের সঙ্গে দেখা করতে যাব—কিন্তু ঘটে উঠল না। রাত্রে খুব চমৎকার জ্যোৎস্নায় মন্মথবাবুর বাড়ি বসে হরিবাবু, যতীনদ, ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া গেল। বিপ্রদায়বাবুর বাড়ি সত্যনারায়ণের সিল্লীর প্রসাদ পাওয়া গেল । সেখান থেকে এসে কাল গিয়েছিলুম রাজপুরে।