পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ JG 3 নগেন বাগচীদের যে বাড়িটাতে থাকতুম—অনেক দিন সে বাড়ির সে ঘরটার পথ বন্ধ ছিল । আজ দুলির ছোট ছেলের সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে সে ঘরটার সে বারানাতে গিয়ে বসি । এইখানেই আমার মা যারা যান। তারপর কতকাল এ বাড়িটাতে আসিই নি । এইখানেই বালীক কবি পাচুগোপালের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সতেরো বছর আগে—যে আমায় প্রথম সাহিত্যক্ষেত্রে নামিয়েছিল । ফিরে এসে ফুলিদের উঠোনে মাচাতলার উকুনে ওরা পরোটা ভাজতে বসল—আমি একখান বেলে দিতে গেলুম—হল না। ফুলি ও বৌমা তো হেসেই কুটিপাটি। তারপর বৌমা বেলে দিতে লাগল—আমি শুধু নিরপেক্ষ দর্শক মাত্র। সুন্দর লেবুফুলের গন্ধ বেরুচ্ছিল । জ্যোৎস্নার মধ্যে কাল রাত্রেই কলকাতায় ফিরি। বেগুন আমায় এগিয়ে দিয়ে গেল একেবারে মেস পর্য্যন্ত। কত ধরণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির মধ্যে দিয়ে এ দিনগুলো কাটল !. না ?. 略 源 সাধে কি বলি ভগবানের দান এ জীবন, যে জানে ঠিক মত এর স্বাদ গ্রহণ করতে, সে জানে এ কি মধু! আর বছর ঠিক এইদিনে পুরী যাওয়া হল না বলে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এবার ঠিক এব দিনেই বেশ কাটল। শনিবার সুপ্রভা আসবে বলে পত্র পেলুম, বিকেলে বেড়িয়ে এসে একটা কাগজ পেলুম তাতে জানা গেল ওরা কাছাকাছি একটা হোটেলে এসে উঠেছে। দেখা করতে গেলুম ও তারপর কার্জন পার্কে বেড়াতে গেলুম ওকে নিয়ে। পরের দিন ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী হয়ে ইডেন গার্ডেনে থানিকট বসে কত গল্প করলুম। কিন্তু সকলের চেয়ে আনন্দ হল ওকে তুলে দিতে গিয়ে স্টেশনে। কেউ জানত না যে আমি স্টেশনে যাব—আমি একটি অদ্ভুত আনন্দ পেলুম। ট্রেনটি ছেড়ে চলে গেলেও কতকক্ষণ বেঞ্চিতে বসে বসে ভাবতে লাগলাম। কত ধরণের স্বহ্ম অনুভূতি ! ভাবুকত জীবনের খুব বড় একটা সম্পদ। এ যার নেই, সে সত্যিই দরিদ্র । টাকায় কি করে ? শেয়ালদ’ স্টেশনে আমার কল্যকার সেই দশ মিনিটের দাম অর্থে নিরূপিত হবার নয় । বসন্তটা এমনভাবে ভাল করে দেখিনি অনেকদিন । শিবরাত্রির ছুটিতে এবার গেলুম বারাকপুরে। কি অপূৰ্ব্ব শোভা হয়েছে চালকীর মুসলমান পাড়ার ওই কাচা রাস্তাটার ধারে ফুটন্ত ঘেটুফুলের বনের । তার ওপর নদীর ওপারে, ঠিক গাজিতলার পথের বঁাকে একটা চারা শিমুলগাছে ফুল ফুটেচে, আমি যখন বারাকপুরে যাচ্চি তখন দুপুর রোদ। কি অদ্ভুত যে দেখাতে লাগল সেই ঝম্ ঝম্ দুপুরে ওপারের সেই ফুলে ভৰ্ত্তি শিমুলচারাটা ! অপ্রত্যাশিতভাবে গিয়ে দেখি খুকুর ওখানেই আছে। অনেক দিন পরে এখানে ওদের পেয়ে মন খুশি হয়ে উঠল। আমি নদিদিদের রান্নাঘরের দাওয়ায় জল খেতে গিয়েচি, ও দাড়িয়ে আছে পুটিদিদিদের উঠোনে । বল্লুম—কি রে । তারপর ওদের দাওয়ায় বসে কতক্ষণ গল্প করলুম। দুপুরে ওদের রান্নাঘরে বসে পোলাও বিষয়ে একদিন বল্লুম। শিবরাত্রির দিন ন'দিদিদের ঘরে ওদের কাছে শিবরাত্রি ব্ৰতকথা শোনালুম। ট্যাংরার মাঠে ইন্দুর সঙ্গে একদিন কুল খেতে গেলুম—বড় খোলা মাঠ, দিক্‌চক্রবাল বড় দূরবিসর্ণ, একটা ঢিবির কাছে বসে সেদিন স্বৰ্য্যান্ত দেখলুম। ঘেটুফুল এখানেও খুব ফুটেচে। গণেশ মুচি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েচে, ট্যাংরার ধারে গরু চরাচ্ছিল। লেবুতলার ওই পথে অনেকদিন কেউ আসেনি, যখন রোয়াকে বসে থাকি, এইদিন দেখলাম নীল