পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \లి(N) বম্ব টাউন হলের সামনে মাঠে ঘাসের ওপরে সন্ধ্যার কিছু পূর্বে বসেছিলুম—আমি তো দূরের আকাশ দিয়ে পূৰ্ব্বদিকে সব সময়ই চেয়ে । কতদূরে কোথায় কে কি করচে, সেই চিন্তাতেই ভরপুর। সভান্তে জ্যোৎস্নারাত্রে রায় বাহাদুর বসন্ত ভৌমিকের বাড়ি চা-পার্টি । খুব গোলাপ ফুটেচে বসন্তবাবুর বাগানে। তিনি আমাকে তার পড়ার ঘর দেখালেন—বেশ সাজানে, আর অনেক বই আছে। এদেশে ঘর তৈরী করার পদ্ধতি আমার বেশ মুদৃশু লাগল। প্রবোধবাবুর বাড়িতেও আবার অনেককে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল—অনেক রাত পৰ্য্যস্ত গল্পগুজব করে বসন্তবাবু মজলিশ জমিয়ে রাখলেন। পরদিন সকালে আবার সভা। দুপুরে একটু ঘুমুই। বৈকালের দিকে শহরের কয়েকটি গণ্যমান্ত ভদ্রলোক দেখা করতে এলেন । বৈকালে সভার সময় মোটর থেকে নেমেই দেখি ভিড়ের মধ্যে থেকে জেলি ও পাগলা আমাদের গায়ের দেখা করতে ছুটে এল । ওরা এখানে লালমনিরহাটে রেলে কাজ করে, আমি এখানে এসেচি শুনে লালমনিরহাট থেকে দেখা করতে এসেচে। সভার পরে প্রবোধবাবুর বাড়িতে চা খেয়ে সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে স্টেশনে রওনা হলুম। শহরের কয়েকটি ভদ্রলোক আমায় তুলে দিতে এলেন। খুব জ্যোৎস্না, পূৰ্ব্বদিকের আকাশও খুব উজ্জল । গরম একেবারেই নেই। পাৰ্ব্বতীপুরে গাড়ি বদল করে নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেসে চড়ে বসলুম। জ্যোৎস্বারাত্রে পদ্মা দেখে বড় ভাল লাগল। ভোর হল রাণাঘাট স্টেশনে—তখনও আকাশে নক্ষত্র রয়েচে । কলকাতার বাসায় গিয়ে স্নান করে বসে আছি, এমন সময় নীরদবাবুর ড্রাইভার এসে খবর দিলে গাড়ি এসেচে। নীরদবাবু সস্ত্রীক গালুডি যাচ্ছেন, আমায় সেই সঙ্গে যেতে হবে। তথনি জিনিসপত্র বেঁধেছেদে আবার রওনা। নাগপুর প্যাসেঞ্জার বেলা তিনটার সময় গালুডি পৌছলো। পথে খড়গপুরের পরে উচু ডাঙ্গা ও শালবলের দৃপ্ত দেখবার লোভে দুপুরে একটু ঘুম এল না চোখে । 事 বহুদিন পরে আবার নামলুম গালুডি—আজ বছর তিন-চার আসিনি—১৯৩৪ সালের পূজোর পর আর কখনো আসিনি। তবে সে গালুডি এখন অনেক বদলে গিয়েচে। নেকড়েডুংরি পাহাড়টা স্তাড়, তার নীচেকার সে চমৎকার শালচারার জঙ্গলট অদৃশ্য। কে পাথর কেটে নিয়ে যাচ্চে পাহাড়টা থেকে, রোজ সকালে একদল গরুর গাড়ি এসে পাথর কেটে বোঝাই করে নিয়ে যায়—পাহাড়টা এবার গেল। এদিকে কারো জ্ঞান নেই যে ওটা চলে গেলে গালুডির একটা beauty spot 5Col (for অপরাহ্লে মুবর্ণরেখা পার হয়ে কুমীরমুড়ি গ্রামের জঙ্গলে বসে রইলুম কতক্ষণ। প্রথমে যাচ্ছিলুম রাখা মাইনস-এ। কিন্তু বেলা গিয়েচে দেখে ভরসা হল না। এক জায়গায় ধাতুপ ফুলের ঝাড় দেখে দাড়িয়ে গেলাম—কাছেই একখানি বড় পাথর। হঠাৎ দেখি বনের মধ্যে একটা গোলগোলি ফুলের গাছে হলদে ফুল ফুটে রয়েছে অজস্র। সেখানে ঢুকে দেখি বনে লতানে পলাশ গাছে পলাশ ফুটেচে, তা ছাড়া এক রকম বন যুঁই-এর মত কি ফুল ফুটেচে কামিনী ফুল গাছের মত গাছে। মোরাম ছড়ানো মাটি—ঠিক যেন কয়লার টুকরো ছড়ানো পড়ে রয়েচে । বসে বসে মনে হল কাল ঠিক এ সময় রংপুরে টাউনহলের ক্লাবঘরে বসে চা খাচ্চি—আর আজ এ সময় সুবর্ণরেখার ধারের বনে ! কোথায় ছিলুম কোথায় এসেচি ! চাদ উঠেছে ঠিক সেই গোলগোলি ফুলগাছের পেছনে। প্রকাও গাছটা—আমাদের দেশের একটা মাঝারি গোছের আমড়া গাছের মত। ফুলগুলো অনেকটা দূর থেকে দেখতে স্বৰ্য্যমুখী ফুলের মত। কতক্ষণ বসে রইলুম, তারপর জ্যোৎস্না ফুটবার পূর্বেই লতানে পলাশের একটা গুচ্ছ তুলে নিয়ে মুবর্ণরেখা পার হয়ে গালুডি চলে এলুম। বি. র. ৪—২৩