পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిdy বিভূতি-রচনাবলী একটা কাজ পড়াতে চা খাওয়া অার হল না। সেদিন মরগাঙের ধারে বেলেডাঙায় পাঠশালার নীচে গিয়ে বসেছিলুম ইন্দুর সঙ্গে। ইস্টারমনুডের দিন রত্নাদেবী দেখা করতে এলেন। তাদের সঙ্গে টাওয়ার হোটেলে খুব গল্প-গুজব করি। তিনি তার হাতে আঁকা ছবি একখানা দিলেন আমায় । আজ বহুদিন পরে গিয়েছিলুম নন্দরাম সেনের গলিতে সেই প্রসন্নদের বাড়ি। বাল্যে এখানে কিছুকাল কাটিয়েচি। আমার তরুণী মায়ের মুখের শাখ যেন এই সন্ধ্যায় এ অঞ্চলে কোথায় আজও বাজচে । প্রসন্ন বসে অনেকক্ষণ গল্প করলে । প্রসন্নের মা মারা গিয়েছেন গত ফাল্গুন মাসে। সেই মাখম বুড়ী এখনও বেঁচে আছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে এসেচি। বেশ লাগচে এবার। ছুটি হবার দুদিন আগেই এসেছিলুম, বনগারে প্রথমদিন দুপুরবেলা খয়রামারির মাঠে বেড়াতে গিয়ে বিশ্বফুলের সুগন্ধ আর দুপুরের খর রৌদ্র, নীল আকাশ আমায় স্মরণ করিয়ে দিলে একঘেয়ে কলকাতার সংকীর্ণ জীবন ছেড়ে মুক্ত প্রকৃতির কোলে এসেচি। দু'দিন পরেই বারাকপুর এলুম, খুকু এখানেই আছে, সে সকালে শিউলিতলায় দাড়িয়ে গল্প করে—বনসিমতলার ঘাটে আবার সেদিন ওর সঙ্গে দেখা নাইবার সময়ে, আজ দুপুরে যখন ঝড় উঠল, ও এলো ছুটে আম কুড়ুতে, আমি বিল বিলের ধারের আম গাছটার দুটাে আম ওর কাছ থেকে চেয়ে নিলুম—দুটাে মোটে পেয়েছিল—দুটোই দিয়ে দিল আমাকে। স্নান করে এসে রোয়াকে দাড়াতেই ছুটে ওদের সামনের উঠোনে এসে জিগ্যেস করলে—বনগায়ে যে বিয়েতে গিয়েছিলেন–বর কেমন হল তাদের ?---এসব ১৯৩৪-৩৫ সালের মুনার গ্রীষ্মাবকাশ মনে এনে দেয় । সত্যিই এবার ভারী ভাল লাগচে এখানে এসে । একদিন কুঠীরে মাঠে বৈকালে বেড়াতে গিয়েচি, দেখি দুজন লোক খাচা নিয়ে ফাদ পেতে ডাক পাখী আর গুড়গুড়ি পার্থী ধরচে । গুড়গুড়ি পার্থী ডাকে কেমন মুন্দর । আমি ও-ডাক অনেক শুনেচি, কিন্তু ও যে গুড়গুড়ি পার্থীর ডাক তা জানতুম না। কাল বৈকালে আদিত্যবাবুর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণে বিকেলে গেলু বনগ। সঙ্গে ইন্দুর ছেলে গুটুকে গেল। চালকীপাড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে কি চমৎকার গ্রাম্য-ছবি—-চাষার মেয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খাইয়ে হাত মুখ ধুইয়ে দিচ্চে, কেউ বা কাথা সেলাই করচে ঘরের দাওয়ায় বসে। সারা পথ বেশ ঝড়ের মত হাওয়া—দুপুরের অসহ গুমটের পরে শরীর যেন জুড়িয়ে গেল। চাপাবেড়ের কাছে ভীষণ মেঘ ও কালবৈশাখীর বড়। ডালপাল, ধুলোকুটাে উড়িয়ে নিয়ে আসচে–পথ দেখবার জো নেই–টং টং করে ছটা বাজল। আমি একটা শিশুগাছের গুড়িতে ছেলেটাকে নিয়ে বসি । বাসায় পৌছে ওকে কিছু খাবার খাওয়ালুম। মন্মথবাবুর লিচুতলার আড্ডায় খুব গল্প করে আদিত্যবাবুর বাড়ি নিমন্ত্রণ খাই। গরমে কিন্তু রাত্রে ঘুম হল না। জলপাইগুড়ি ছাত্র-সমিতি থেকে সেখানে যাওয়ার নিমন্ত্রণ পেয়েচি, কিন্তু এখন যাওয়া অসম্ভব । আজ সকালে স্থজনে দিব্য ঘেঁটে বারাকপুর এলুম। পথে চালকি দিদির বাড়ি গেলুম। দিদি যত্ন করে বেলের পান, চা, ক্ষীর, কাটাল খাওয়ালেন। বাড়ি আসবার একটু পরেই নামল বৃষ্টি। সেই থেকেই বাদলা চলচে—এখন বেলা পাচট, বৃষ্টি গুড়িগুড়ি পড়চে । কাল গিয়েচে যেমন অসহ গরম, আজ তেমনি ঠাও। সুপ্রভাকে পত্র দিয়েচি, তার চিঠিও এরই মধ্যে পাব আশা করচি। ইতিমধ্যে পিরোজপুর