পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩৬১ শম্ভু কি করে মারা গেল ইন্দু সেই গল্প করছিল। . ওখান থেকে উঠে আমরা কুঠীর মাঠের দিকে গেলুম, সন্ধ্যার কিছু আগে মেঘান্ধকার আকাশের নীচে এপার ওপারের খামল মুক্ত মাঠ ও বনানীর, ক্ষুদ্র নদী ইছামতীর কি শোভা ! পচাকে আর সঙ্গে নিয়ে যাব না—কথা বলে সব মাটি করে দেয় । ভীষণ ঝড়বৃষ্টি সকাল থেকে। এক মুহূর্তের জন্তে বিরাম নেই। খুড়ীমা এলেন বৃষ্টি মাথায় চা নিয়ে । বল্লেন—খুকু করেচে, বলছিল, বিভূতিদাকে একদিন চা করে খাওয়াব বলেছিলাম, তা আজ করি। একটু পরে চায়ের বাটি ওদের বাড়ী দিতে গিয়েচি, খুকু বল্লে—জল খাবেন না ? মা জিগ্যেস করল। অর্থাৎ মুড়ি দিয়েছিল চায়ের সঙ্গে তাই জল খাব কিনা জিগ্যেস করচে । জলের ঘাট ওর কাছেই ছিল, নিয়ে জল থেলাম । তারপর গোপালনগর এলাম ‘আরণ্যক’-এর প্রফ, ডাকে দিতে। মাঝের গায়ের জিতেন সাধু দেখি তেরোখানা মোটর নিয়ে চলেচেন । চালকীর জিতেনদা' একখানা মোটরে ছিলেন—সেখানায় দেখি মোটেই স্থান নেই। কাজেই তখন রেল লাইন দিয়ে হেঁটেই পাচ মাইল রাস্ত চলে গেলুম। পূৰ্ব্ব দিকের আকাশ চমৎকার নীল দেখতে হয়েচে । আমি স্টেশনে পৌঁছেচি, অন্ধকারও নামল । অমূল্যবাবুদের বাড়ি গিয়ে সারারাত জাগ, বিজয় মুখুজ্যে আর অনাথ বোসের গান হল । রাত চারটে যখন বেজেচে তখন বীরেন সামনের একটা বাড়ির দোতলায় শোয়াতে নিয়ে গেল আমায়। তথন ঘুম হওয়া সম্ভব নয়, একটু পরেই ফর্স হয়ে গেল। আমি মিস্থদের বাড়ি চলে এলুম। সেখানে ওরা ছাড়লে না-খাওয়া-দাওয়া করিয়ে তবে ছেড়ে দেয় বেলা দুটোর পরে। আড়াইটার ট্রেনে জিতেন ঠাকুরের দলবলের সঙ্গে গোপালনগরে নামি। ওরা মোটরে কলকাতা চলে গেল। তারপর নামল ঘোর বৃষ্টি। আমি এখানে ওখানে বসে গল্প করে সন্ধ্যার আগে বাড়ি এলুম। খুড়ীমা ডাকছেন ও বাড়ি থেকে, বিভূতি এলে নাকি ? বল্লুম-ই খুড়ীম। তারপরে ওদের ওখানে ঘরে গিয়ে কাল রাত্রের ঘটনা বর্ণনা করি। - সকালে বিশেষ কাজে গোয়াড়ী যেতে হয়েছিল। একটা বড় চমৎকার অভিজ্ঞতা হোল । আজ প্রায় ৩৩ বছর পরে আমাদের বাল্যের চাটুয্যে বাড়ির ঠাকুরমায়ের নাতনী লীলাদিদির সঙ্গে দেখা হল। গোয়াড়ীর মধ্যে এক সময়ে যদু চাটুয্যে বিখ্যাত উকিল ছিলেন, লীলাদিদির সঙ্গে তার বড়ছেলে হরি চাটুয্যের বিবাহ হয়েছিল। লীলাদিদি এক সময়ে খুব সুন্দরী ছিলেন —আমি ৩৩ বছর পূৰ্ব্বে বাবার সঙ্গে একবার সেখানে গিয়েছিলাম, বছর সাতেক বয়স তখন। লীলাদি কড়ায় করে মাছ ভাজছিলেন—সেকথা আমার মনে আছে। এখন তিনি বৃদ্ধ । কাল ওঁদের বাড়ি গিয়ে দেখি যদুবাবুর বাড়ির পূৰ্ব্বের সে সমৃদ্ধি কিছুই নেই। চাকরে বাড়ির মধ্যে ডেকে নিয়ে গেল, গিয়ে দেখি এক বৃদ্ধ বসে আছেন—এই বৃদ্ধ যে ৩৩ বছর পূৰ্ব্বের সেই সুন্দরী লীলাদিদি (এখনও আমার একটু একটু মনে আছে বাল্যে দৃষ্ট তার সে অপূৰ্ব্ব রূপ), তা বুদ্ধি দিয়ে বুঝলেও মন দিয়ে গ্রহণ করা শক্ত। লীলাদিদির এক ছোট বোন, তার নাম যোগমায়া—ছেলেবেলায় আমার খেলার সার্থী ছিল। লীলাদিদিই বল্পেন—যোগমারা আমার মেজমেয়ের বয়সী। সুতরাং যোগমায়া লীলাদিদির চেয়ে অনেক ছোট। আমার চেয়ে বছর চারেকের বড় ছিল যোগমায় । খুকুদের বাড়িতে বাশের ও থলের দোলায় করে খেলা করেছিলুম মনে আছে। কার কাছে যেন শুনেছিলুম—লেও আজ ১৫২০ বছর আগে, যে যোগমারা মারা গিয়েচে। মনে হুঃখ হয়েছিল।