পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬8 . বিভূতি-রচনাবলী ছুটে এল। পিরোজপুরের গল্প হল অনেকক্ষণ । ওর জন্তে যে কেক পাঠিয়েছিল তা দিয়ে এলুম। পরদিন এল সুধীরবাবুর। ওদের নিয়ে হৈ হৈ করে দিন কেটে গেল। মোটরখানা ওদের রইল আমাদের আমতলায়। আমাদের ঘাটে স্নান করিয়ে আনলুম সবাইকে। নদীতে স্নান করে সব খুব খুশি । ওরা চলে গেল বৈকালে । পরদিন এল কালী চক্রবর্তীর ঘোড়া আমাকে সিমূলে নিয়ে বাবার জন্তে—অনেকদিন পরে ঘোড়ায় চড়া গেল। গোপালনগর স্টেশনের কাছে ছাতি সারিয়ে নিলুম --তারপর গণেশপুরের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা থেকে মাঠের রাস্তায় নেমে সোজা হাতীবাধা বিলের পাশ দিয়ে চললুম। কত গাছপাল, বটতলা, ঝোপঝাপ পার হয়ে যে চলেচি! আসবার সময়েও তাই। তথন বৈকালের ছায়া পড়ে এসেচে, হাতীবাধা বিলের চমৎকার শোভা হয়েচে– কতদূর জুড়ে প্রশাস্ত চক্রবালরেখা দূরত্বের কুয়াসায় অস্পষ্ট। হে ভগবান, আমি আপনার এই মুক্ত রূপের উপাসক। যদি কথনে আসেন, তবে এই রূপেই আসবেন। নভোনীলিমা যেখানে মেঘলেশশূন্ত, দিকচক্রবাল যেখানে মুক্ত, উদার—ধরার অরুণোদয় যেখানে নিবিড় রাগরক্ত, সে রূপেই আপনি দেখা দিন–রসিকলাল সেন নায়েবের বাসা থেকে আমায় মুক্তি দেন যেন। সিমুলে থেকে ফিরে যখন নদীতে যাচ্চি গা ধুতে—বেলা খুব পড়ে গিয়েচে, ছায়ানিবিড় হয়েচে বাশবন । খুকু ওদের সঙ্গিনীদের সঙ্গে ঘাট থেকে ফিরচে, বাশবনের পথে দেখা ঠিক পুটিদিদিদের বাড়ি থেকে নেমেই। ওরা সঙ্কুচিত হয়ে এক পাশে দাড়াতে যাচ্চে, বল্লুম—চলে আয়। ও আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে হাসতে হাসতে গেল, কি মুনীর হাসতে পারে। এক তরুণ মুখের প্রসন্ন হাসিতে সারাদিনের মানসিক দৈন্ত যেন এক নিমেষে ঘুচে গেল। গিরীনদাদাদের কলাবাগানের মাঠে কতক্ষণ বসলু, আকাশ রঞ্জন মেঘ-স্থূপে ভর-সবুজ মাধবপুরের চর, বাশবনের দুলুনি কেমন মুন্দর! কত বছর চলে যাবে, ঐ বনসিমতলার ঘাটে অনাগত দিনের তরুণীবধু ও মেয়েদের জলসিক্ত পদচিহ্নে আঁকা থাকবে একটি অপূৰ্ব্ব প্রণয়কাহিনী—হয়তো কেউ কখনো বলবে, ছিল এরা দুজন অতি প্রাচীনকালে—গ্রামের স্নিগ্ধ বসন্ত দিনের বাতাসে তার মূছন থেকে যাবে। সকালে যখন বসে লিখচি, তখন আকাশ বেশ পরিষ্কার ছিল, একটু পরেই এল বৃষ্টি। একবার দেখি খুকু বিলবিলে থেকে উঠে গেল, কিন্তু বোধ হয় খুবই ব্যস্ত ছিল, তাই চেয়ে দেখল ন। এদিকে। স্নান সেরে এসে যখন গেল, তখন বোধ হয় মনে পড়ল, তাই চেয়ে হেসে গেল । কালোর সঙ্গে বাওড়ের ধারের বটতলায় বেড়াতে গেলুম। একটা গাছে উঠে বসেচি, এক বৃদ্ধ তার দুই ছেলেকে নিয়ে বেলেভাঙায় কুটুমবাড়ি যাচ্চে। আমার গাছের নীচে দাড়িয়ে কতক্ষণ গল্প করে গেল। স্নান করতে জলে নেমে দেখি ভারী চমৎকার দৃপ্ত ওপারের মাধবপুরের সবুজ উলুবনের চরে। দুপুরে যখন ঘরে শুয়ে আছি, তখন খুব বৃষ্টি এল। বৈকালে বেড়াতে গেলুম বেলেডাঙার জলে—আবার ওবেলার সেই বেলেডাঙার ছেলেটার সঙ্গে দেখা । নদীজলে স্নান করে আনন্দ হল, জ্যোৎস্না এসে পড়েচে নদীজলে । চমৎকার দেখাচ্চে । রোয়াকে খুব জ্যোৎস্না। চেয়ার পেতে বসেচি, খুকু ডাকলে—প্রথমে ওদের শিউলিতলার উঠোনে দাড়িয়ে হাসচে হি হি করে, তারপর ডাকলে—বল্লে, আমুন না ? গিয়ে বসেচি, ও উঠোনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করচে। আমার ছুটি ফুরিয়ে এল শুনে বলচে—আমিও ছ’ঘরে যাব । মা এখানে থাকবে। আপনি আর সেখানে যেতে পারবেন না, মজা হবে। বহুম—মজা বেরিয়ে যাবে। বুঝবি তখন। বল্লে—তা বটে।