পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سياباني শুয়ে প্রাণ যায় আর কি গরমে আর মশায় । সারারাত চোখের পাতা বোজেনি ! এরই মধ্যে একদিন আয়েলীর সঙ্গে দেখা হল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে গত মঙ্গলবারে । আমি আয়েলীর কথা বলচি নীরদবাবুদের বাড়ি, যে ওই একটি মেয়ে, যার সঙ্গে আর দেখা হবে না—কারণ ওর মাওকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে বাপের বাড়ি চলে গিয়েচে । হঠাৎ সেদিন প্রবাসী অফিসে গিয়েচি, সেখানে দেখা ডা: প্রমথ রায়ের সঙ্গে। অনেকদিন পরে দেখা, কেউ কাউকে ছাড়তে পারিনি। অনেকক্ষণ ওখানে থেকে বার হয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে গল্প হল পুরোনো দিনের—যখন “শনিবারের চিঠি’ আপিস ছিল মানিকতলায়। প্রমথ এখন বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক—ভারী বন্ধুবৎসল, ছেড়ে দিতে আর চায় না। প্রমথ এসে আমায় উঠিয়ে দিয়ে গেল হারিসন রোডের মোড় পৰ্য্যন্ত । আমি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলরের লিস্ট দিতে গেলুম নীরদবাবুর বাড়ি—সেখানে ড্রয়িংরুমে ঢুকবার" আগেই মেমসাহেবের গলা শুনে আমি অবাক হয়ে ভাবচি কোন মেমসাহেব এখানে এল। ঢুকেই দেখি আয়েলী ও মিসেস এণ্টনি বসে। আয়েলীও আমায় দেখে খুব খুশি হল—ওরা সিঙ্গাপুর থেকে দু'একদিন হল এসেচে শুনলুম। এখন কলকাতাতেই থাকবে। ভারী আনন্দ পেলাম ওকে দেখে–আয়েলী বড় ভালো মেয়ে । ও এখানে পড়ত লা মার্টিনিয়ারে । এতদিন পড়া বন্ধ ছিল, সেইজন্যেই ওর মা মিসেস এণ্টনি ওকে আর ওর ছোট ভাই পিটিকে এখানে এনেচে । কাল বালিগঞ্জে এক ভদ্রলোকের ওখানে রাত্রে ছিল নিমন্ত্রণ। মিসেস দে বলে যে মহিলাটির সঙ্গে উষার ওখানে সেদিন দেখা হয়েছিল—তিনি চিঠি লিখেছিলেন তার স্বামীর সঙ্গে যাতে আমার আলাপ হয় তার খুব ইচ্ছা। ভদ্রলোকটির নাম কে সি দে–কিরণচন্দ্র দে। কাল সন্ধ্যাবেল তাদের বাড়ি অনেকক্ষণ কাটানো গেল। বড় অমায়িক লোক স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই । ভূরিভোজন হল অবিশুি, আইসক্রীম পৰ্য্যন্ত বাদ গেল না। মনীষা সেনগুপ্ত বলে একটি মেয়ে উপস্থিত ছিল, মেয়েটি ছেলেমানুষ। এবার বি-এ অনাসে ইংরিজীতে প্রথম হয়েচে, কিন্তু এত লাজুক ও মুখচোরা—রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে বললুম। সবাই পড়চে–মেয়েটি লজ্জায় একেবারে দুমড়ে পড়ল—কিছুতেই পড়বে না। তারপর মিসেস, দে অনেক করে একটা ছোট কবিতা পড়ালেন । বেশ কাটল সন্ধ্যাটি, সাহিত্যিক আলোচনাতে, গল্পে, আবৃত্তিতে, খাওয়া-দাওয়ায়। অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরি। পরশু ক্ষেত্রবাবুর সঙ্গে হেস্টিংসে গিয়েছিলুম। কলকাতার মধ্যে আমন চমকার ফাক জায়গা বেশী দেখিনি। ওর সন্ধান পেয়ে মনে আনন্দ হল। নীল আকাশ, ফাক সবুজ মাঠ, দূরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাৰ্ব্বেল চুড়াটা দেখা যাচ্ছে নীল আকাশের পটভূমিতে, যেন আকাশে ভাসচে বলে মনে হচ্ছে। কুলে কুলে ভরা গঙ্গ, সবুজ ঘাসে ঢাকা তীরগুলি জল ছুয়েচে । জলের ধারে নাটা ঝোপ, কালকাসুন্দা ও বনবেড়ালী—ঠিক যেন পাড়াগ। অথচ জলের ধারে ছোট বড় ছায়াতরু, সেখানে বেঞ্চি ফেলা রয়েচে–সত্যিই বড় ভালো জায়গা— অথচ বেশ নির্জন—খুব লোকজন বা মোটরগাড়ির ভিড় নেই। বাড়ি এসেই সেদিন উষার পিতার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অত্যন্ত দুঃখিত হলাম। সুরেশবাবু বয়সে আমাদের চেয়ে অনেক বেশী বড় যদিও, কিন্তু ভাগলপুরে থাকবার সময়ে মিশতেন ঠিক যেন সমবয়সীর মত। অমরবাবুর বাড়ির আড়াতে দিনের পর দিন আমাদের কত চা-পানের