পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭২ বিভূতি-রচনাবলী যারা ভালবাসা কি কখনো জানে না, সত্যিকার ভালবাসা কি কখনো পায় নি—তারা ‘নিঃস্বার্থ ইত্যাদি বাজে কথা ব্যবহার করে।. ভালবাসা মনের এক অদ্ভুত রসায়ন—উভয় মনের সমান যোগ ভিন্ন এ দিব্য, অপূৰ্ব্ব অতীন্দ্রিয়, দুৰ্ল্লভ রসায়ন তৈরী হয় না। যে হতভাগ্য এ আস্বাদ করে নি—সে শাস্ত্র থেকে, দর্শন থেকে, পাজিপুথি থেকে বড় বড় নিঃস্বর্থতার বুলি আওড়ুয় গিয়ে –কিন্তু যে জীবনে এর আস্বাদ পেয়েছে সে জানে, ওসব লম্বা লম্বা কত অস্তঃসারশূন্ত ওঁ ফাক, অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অর্থহীন। ভগবান এইজন্তই বোধহয় মানুষকে ধরা দেন ন—অনেক সাধনা যে করে সে তার ধরা দেওয়ার মূল্য দেয়—সহজভাবে ভগবান আমাদের গায়ে এসে ঢলে পড়লে, তার চেয়ে মহকুমার তুলসী দারোগার বন্ধুত্বের মূল্য আমাদের কাছে বেশী দাড়াত। ওপরের কথা যে বলা হল এটা কিন্তু ভালবাসার অবস্থার প্রথম দিকের কথা নয়—অত্যন্ত প্রাইমারী স্টেজে আলাদা কথা । সেখানে অনেক সময় ভালবাসা দিয়ে ঈপ্সিত বস্তুকে পাবার চেষ্টা করতে হয়—সে অন্ত কথা। যখন কেউ কাউকে ভালো জানে না, সে অবস্থায় কেউ কাউকে খুব খারাপ বা গায়ে পড়াও ভাবে না—তখন দুজনেই দুজনের কাছে খানিকট রহস্যমণ্ডিত থাকে কিনা—কেউ কাউকে খুব খারাপ ভাবতে পারে না। কিন্তু খানিকট ভালবাসার পরে যখন দেখবে যে সে তোমার ভালবাসা নিতে পারচে না, নানা রকম চেষ্টা করেও যখন তার মধ্যে ভালবাসার প্রেরণা দিতে পারবে না তখন তার ঘাড়ে পড়ে ভালবাসা দিতে যেও নী—তাতে সে বিরক্ত হয়ে উঠবে, তোমাকে ঘৃণা করবে, তোমার ভালবাসার মূল্য সে দিতে পারবে না বরং উন্টোই হবে—তখন তাকে ছেড়ে দিও। [ এই ডায়েরীট লিখলাম কেন ? কোন ব্যক্তিগত কারণ আছে। কিন্তু সেটা আজ আর লিখলুম না। ] বিষ্ণুপুরে গিয়েছিলুম অমুকুলবাবুর নিমন্ত্রণে। কি অমায়িক ভদ্রলোক ! কি আতিথেয়তা ও সৌজন্য ! সত্যি, অমন ব্যবহার, অমন একটি প্রতিশুভ্ৰ পারিবারিকতার আবহাওয়া কতকাল ভোগ করিনি । বিষ্ণুপুরে জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন মন্দিরগুলি আমার মনে এক অদ্ভুত ভাব জাগিয়েচে। প্রসিদ্ধ দলমাদল কামান এখন লালবাধ বলে প্রকাও দীঘির একপাশে বসানো আছে। অমুকুলবাবুর কাছারীর জনৈক পেয়াদা আমার নিয়ে গিয়ে দেখালে। জোড়াবাংলা বলে একটি মন্দিরের পাথর বাধানে চাতালে আমি ও অমুকুলবাবু বসে রইলুম স্বৰ্য্যাস্তের সময়ে। বড় ভালো লাগল। বাকুড়া ও মেদিনীপুর জেলার মাটি রাঙা, সব শাল ও কেঁদে বন—বড় চমৎকার দৃপ্ত, কাকুরে মাটি, কাদা নেই—খটখটে শুকনো । দেখি ফিরবার সময়ে দূরপ্রসার সবুজ মাঠের প্রান্তে দিকচক্রবালের শোভার বৈকালের দিকে কত কথাই মনে এল! দুরে আমার গ্রাম—আজ রবিবার, এতক্ষণে সকলে হাটে যাচ্চে। যুগল ময়রার দোকানের সামনে ফণিকাকা দাড়িয়ে আছে, খাজনা আদায় করচে—এই ছবিই কেবল যেন মনের চোখে ভাসছিল । বস্কার জল অতি ভীষণভাবে আমাদের গ্রামের চারিদিক ঘিরচে । আজই সকালে চালকী থেকে এখানে এসেচি। প্রথমে মধু পাগলা ( আদাড়ি জেলেনীর নাতি ) মাছ ধরচে পাকা রাস্তার ধারে। সে পথ দেখিয়ে দিলে। সাজিতলার বাকে দাড়িয়ে নদীর দৃপ্ত যেন পদ্মা কি সমূত্রের