পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ፃ8 বিভূতি-রচনাবলী পাডাটা। সেখান থেকে রোজ মাছ ধরা দেখতে যেভূম নদীর ধারে। ইন্দু মাছ ধরত—ওর একটা ভাড় আছে, সেটাতে রোজ মাছ পড়বেই পড়বে। গুটুকে থাকত। মাছ খুব সন্তা হয়েছিল। সম্প্রতি কালীপূজোর আগে কলকাতায় এসেচি। চূড়ামণি যোগ গেল গত সপ্তাহে। রাত তিনটের সময় উঠে জগন্নাথ ঘাটে ও তারাসুন্দরী পার্কে গিয়ে ভলান্টিয়ারী করলুম। কত ছেলেমেয়ে হারিয়ে যেতে লাগল, তাদের যথাস্থানে পাঠালুম। আমাদের স্কুলের রামচন্দ্র দত্ত তার সেবা-সমিতির সেক্রেটারী, সে-ই আমায় যেতে বলেছিল। সকালে ফিরে বনগী গেলুম। খুকুদের বাসায় গিয়ে দেখি খুড়ীমা গঙ্গাস্বানে গিয়েছেন—খুকুর সঙ্গে গল্প-গুজব করলুম, প্রায় সাড়ে পাঁচটা পৰ্য্যস্ত, খাওয়া-দাওয়া করলুম ওখানে । সম্প্রতি হটু চাকরি পেয়ে কাল রাত্রে বেলডাঙ্গ চলে গেল। জাঙ্গিপাড়ার বৃন্দাবনবাৰু অনেক দিন পরে এসেছিলেন—কাল তার সঙ্গে বসে অনেক কথা হয়, অনেক কাজ করা গেল ওয়েলিংটন স্কোয়ারে বসে । ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলুম, পরশু এসেছি। প্রথমে খুকুদের নতুন বাড়িতে গিয়ে দেখি ওরা সেই দিনই এসেচে। ও ঘর বাট দিতে এল আমার ঘরে—কত গল্প হল । রাত্রে অন্নদীশঙ্করের স্ত্রী লীলার গল্প ও চিরপ্রভা সেনের গল্প করলুম। ভোরে উঠে চালকী। সেখান থেকে বারাকপুর ইন্দুদের বাড়ি । হরিপদদাদা সেখানে উপস্থিত, সে কাঠের ব্যবসা করচে। ইন্দু গল্প-গুজব করলে, সে কচুগাছ পুতছিল। আমার বাড়ি গিয়ে চাবি খুলে জিনিসপত্র রেখে স্বান করতে গেলুম। অনেকদিন পরে কুঠার মাঠে ভূষণের ক্ষেত্রে বেড়াতে গিয়ে ভারী আনন্দ হল । তবে বস্তার জলে ছোট এড়াঞ্চির গাছ সব মরে গিয়েছে দেখলুম। স্নান করে বাড়ি গিয়ে রোয়াকে বসে লিথলুম হোটেলের গল্পটা। গুট কে এল—সে ভারি খুশি আমি যাওয়াতে । তাকে নিয়ে বিকেলে হাটে যাই। বিজনের ডাক্তারখানায় গল্প করলুম, মুটুর চাকরির কথা বলি। তারপর মাছ কিনে সন্ধ্যার অন্ধকারে চালুকী এলুম। পথে লন্ঠনটা ধরিয়ে নিলুম একজন লোককে দিয়ে। বনের মধ্যে সাইকাটাতে কতক্ষণ বসে। চালকী এসে তারাপদর সঙ্গে গল্প—দিদির বাড়ি গিয়ে কতক্ষণ কথা বলি। সকালে উঠে লিখি। দুপুরের পরে বনগা খুকু দের বাসায় এলুম। খুকু একটু পরে এসে বল্লে—একেবারে গা ধুয়ে এলুম—আপনার পাল্লায় পড়লে আর তো যেতে পারব না। তারপর কমলের চিঠি, সুপ্রভার কবিতা পড়লে । বেলা পড়ে এল। বল্লে—চলুন, ছাদে যাই, দেখিয়ে আনি। ছাদে গিয়ে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বললুম। মেরী এণ্টয়নেট ছবির গল্প করি। নিস্তব্ধ বৈকাল, ছায় পড়ে আসচে খয়রামারির দিকে । বেশ লাগল। চোদ্দ বছর বয়সে কি দেখেছিল সে সম্বন্ধে কথা । তারপর চা খেয়ে ওখান থেকে বার হয়ে লিচুতলায় এলুম। আগের দিন যখন রাত্রে থাকি, বেরুবার সময় বল্লে— সকাল করে আসবেন, দেরি করবেন না। লিচুতলায় বিশ্বনাথের সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলন সম্বন্ধে আলোচনা, রাত আটটার ট্রেনে কলকাতা । আজ নীরদবাবুর বাড়িতে সোমনাথবাবুর সঙ্গে সাহিত্য সম্বন্ধে নানা কথা হল। তারপর পার্ক ষ্ট্রট দিয়ে চৌরঙ্গী পৰ্য্যস্ত হেঁটে এলুম। বেশ লাগছিল শহরের এই জনস্রোত্ত। মেট্রোর সামনে খুব ভিড়, Marie Antoinete ছবি দেখানো হচ্ছে, নৰ্ম্ম শিয়ারার নেমেচে প্রধান ভূমিকায়। রাস্তায় রাস্তায় সাধনা বোস, কাননবালার ছবিওয়াল বিজ্ঞাপন।