পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকৰ্ণ - C বনগ্রাম সাহিত্য-সম্মেলন শেষ হল পরশু, সরস্বতী পূজোর দিন। সজনীবাবু, ব্ৰজেনদা, তারাশঙ্কর সবাই গিয়েছিল আমার বাসায়। সজনীবাবুর সঙ্গে খুকুর দেখা করিয়ে দিলাম। জুলুর মা, মাধব ঘোষাল, রমাপ্রসন্ন, গৌরবাবু, সব সকালে গিয়েছিল মোটরে । ওদের নিয়ে গেলুম বারাকপুরে । খুকুদের বাসায় চা খেয়ে গেল সবাই। বারাকপুরের আমার ঘরের মধ্যে বসল। ইন্দুদের বাড়ি সব গেল চা খেড়ে। আমাদের পুরোনো ভিটে দেখলে। মায়ের কড়াখানা দেখলে—তারপর বরোজপোতার বাশবাগানে গিয়ে সবাই পড়ল শুয়ে। কিছুক্ষণ পরে মোটর মেয়েদের নিয়ে এসে পৌছল। দুলুর মা আর খুকু দেখি বাশবাগান দিয়ে চলেচে নদীর ঘাটে। জুলুর মা বাশবাগানে এসে দাড়াল। তারপর আমরা যখন নদীর ঘাটে যাচ্চি, তখন দেখি খুকু আর দুলুর মা আর উমা আসচে। আমরা কুঠার মাঠে গেলুম, ভাঙা কুঠাঁটা দেখলুম। তারপর মেয়েদের রেখে প্রথম আমরা এলুম বনগায়ে। মেয়ের পরে এলেন। সজনী, ব্ৰজেনদাকে নিয়ে গেলুম খুকুদের বাড়ি। খুকুর সঙ্গে কথা হল। তারপরে বিরাট সাহিত্যসম্মেলন স্কুলের হলে । সত্যবাবুর পার্টির পরে সবাইকে রওনা করে দিয়ে খুকুদের বাড়ি এসে গল্প করলুম। খুকু কাছের চেয়ারে বসে কাদম্বরী পড়লে । ও আর আমি দুজনে গ্রামে কেমন বেড়ালুম । বীরভূম সাহিত্য-সম্মেলনে তারাশঙ্করদের বাড়ি এসে ক'দিন বেশ কাটালুম। কাল পরিপূর্ণ জ্যোৎস্না-রাত্রে বীরভূমের উদার, উন্মুক্ত মাঠের মধ্যে এক জায়গায় বসলুম। জ্যোৎস্নালোকিত মাঠের মধ্যে বসে দুরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে খুকুর কথা ভাবলুম। ওর দ্বারা আমাদের যে অভাব পূরণ হয়, তা আর কারো দ্বারা যে হয় না তা বলাই বাহুল্য। ওর স্নেহ, প্রীতি, ভালবাসা, হাসি, চোখের চাহনি, ছাদে প্রতীক্ষায় দাড়িয়ে থাকা—এ সবই আমার জীবনের একটা মস্ত অভাব পূর্ণ করেচে। এই কথাটাই লাভপুরে এসে পৰ্য্যন্ত মনে হয়েচে—বিশেষ করে কাল ওই নির্জন মাঠের মধ্যে বসে দুর দিগন্তের জ্যোৎস্না-প্লাবিত তালীবনের দিকে চেয়ে চেয়ে —আজ স্তন্ধ রৌদ্রদগ্ধ দুপুরে মাঠের দিকে বেড়াতে গিয়ে—ওই কথাই মনে হয়েচে বা কাল নিৰ্ম্মলশিববাবুদের বাড়ির পেছনে সন্ধ্যাছায়াচ্ছন্ন প্রান্তরের মধ্যে এক বসে ওর যে ছবিটি মনে এসেচে সেটি হচ্চে—এই শনিবার, ছাদে দাড়িয়ে ও প্রত্যেক ঘোড়ার গাড়িখানা সাগ্রহদৃষ্টিতে দেখচে । মধ্যে এখানে সুপ্রভা এসেছিল—তার সঙ্গে একদিন ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে গেলুম। তারপর সে চলে গেল। একদিন আমার মেসে এল সকালে খ্ৰীতি সেন বলে একটি মেয়ের সঙ্গে। ওকে শেয়ালদ’ স্টেশনে তুলে দিয়ে এলুম। তারপর বাড়ি গিয়ে খুকুদের সঙ্গে এসব গল্প করি। খুড়ীমার অসুখ হয়েচে। খুকু ও আমি বসে অনেক গল্প করি। মনোরম ও তার বরের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে বারাকপুর গেলুম। প্রচুর আমের বউল হয়েচে দেশে, বউলের ঘন গন্ধ সৰ্ব্বত্র । ন’দিদির সঙ্গে গল্প করি। কিশোর বোষ্টম রোয়াকটা বীট দিয়ে দিলে। বরোজপোতার বাশবনে ডোবার ওপারে কি চমৎকার একটা চারা শিমুল গাছে শিমুল ফুল ফুটেচে। শুামাচরণদা'র সঙ্গে গল্প করি। খুকুদের বাড়ির দিকে কেউ নেই—যেন শূন্ত । খুকুর কাছে সে গল্প করি পুরে গিয়ে। খুকু বলে, ‘বসুন, জিরিয়ে যাবেন। তারপর মাধব ঘোষাল একদিন তার বৌদিদি, মাসীমাকে নিয়ে বারাকপুরে গিয়ে বাশবনে বসল-মায়ের কড়াথান দেখে এল। ক্ষেত্রবাবুর সঙ্গে একদিন Salt Lake দেখতে গেলুম। পরশু গিয়েছিলুম কুটুর কৰ্ম্মস্থলে বেলডাঙা। আজ ফিরেচি। কাল এমনি সময় মালীম,