পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

оab" বিভূতি-রচনাবলী বোমাকে নিয়ে বহরমপুর গিয়েছিলুম। জ্যোৎস্নারাত্রে গঙ্গার ধারে ঠিক যেন ইসমাইলপুরের মত মনে হল । তারপর জীবনের কত পরিবর্তন হয়ে গেছে ভাবলুম! আজ ফিরেচি তিনটের ট্রেনে। দুপুর রোদে সারাপথ ঘুমিয়েচি—তবে, বীরনগরের কাছে ঘেটুফুল দেখেচি খুব। দূরে এই ফাগুন দুপুরে একটি মাত্র গ্রাম এত গ্রামের মধ্যে, যেখানে একটি মাত্র মেয়ের কথা মনে হয়। শিউলিতলায় ডোবার ধারে দাডিয়ে আছে। স্কুল কমিটির মিটিং ছিল, মিটিংএর পর স্কুলের ছাদ থেকে বড় অনুভূতি হল অনেক দিন পরে। 'জনতার মাঝে জনগণপতি’ গানটি বহুদিন পরে গাইলুম—সঙ্গে সঙ্গে সেই অপূর্ব অনুভূতি আবার মনের মধ্যে ফিরে পেলুম। তখন খুকু ছিল না—যখন গাইতুম পঞ্চানন মান্নাকে পড়বার সময়ে। ট্রামে আসতে আসতে ভাবছিলুম, সেই যে নাগপঞ্চমীর দিন শ্রাবণ মাসে বারাকপুরে গিয়েছিলুম, খুকুদের বাডি যেভূম, ওদের হাসাতুম, ছোড় দি, ভাল কি মন্দ বলে—তারপর যেন আর কখনো বারাকপুর যাইনি—ওকে আর দেথিওনি। ও চলে যেন কাছ দিয়ে, আমি হাত বাড়িয়ে চালের বাতা থেকে কাপডের ফালি পাড়তুম—ও বলত, মা রেখেচে তুলে, হাত দেবেন না । তারপর যেন এই দীর্ঘ সাত-আট মাস ওর সঙ্গে দেখা হয় নি। খুকু একরকম ঠেলেই বারাকপুরে পাঠালে এবার। মহরম ও দোলের ছুটি আর বছর কেটেছিল গালুডি, এবার বনগা। খুব আনন্দে কাটিয়েচি। চারদিন খুকু ও আমি একবার সকালে একবার সন্ধ্যায় বসে গল্প করতুম। একদিন ওকে নক্ষত্র সম্বন্ধে আমার Radio talk-টা পড়ে শোনালুম। কমৃঝম্ দুপুরে গেলুম বারাকপুরে। সারাপথ ঘেটুফুলের কি মুগন্ধ! বিশেষ করে চাল কী আর বনগী থেকে বার হয়েই । চাল কী মুসলমান পাড়ার মধ্যে, গাজিতলার রাস্তায় বাশবনে এক চুপ করে মাঝের বাড়িখানার সামনে বসে রইলুম। বাশপাতায় আগুন ধরিয়ে দিলুম। কোকিল ডাকচে অনবরত। সেদিন মাধব ঘোষালের মোটরে বেড়াতে এসে ওর বৌদিদি ও মাসীমাকে নিয়ে এই বরোজপোতার বাশবনে বসেছিল। কাল শনিবার বেলডাঙা গিয়েছিলুম মুটুর কাছে। সারাপথ ঘেটুফুলের শোভা যা দেখলুম, তাতে মন মুগ্ধ হয়ে গেছে। এই ফুলটা বেশী আছে মদনপুর ও শিমুরালি স্টেশনের কাছে এবং রাণাঘাট পৰ্য্যস্ত রেল লাইনের দু-ধারে, আর আছে বীরনগরে স্টেশনের সামনের মাঠে। কেমন একটা মিষ্টি অথচ ঈষৎ তেতো গন্ধ বার হয় ফুল থেকে ! মুর্শিদাবাদ লাইনে ঘেটুফুল নেই, বেলডাঙা ছাড়িয়ে বহরমপুরের পথে কিছু আছে, আর আছে ‘পাগলাচণ্ডী’ বলে স্টেশনের কাছে । সন্ধ্যার আগেই বেলডাঙা থেকে ফিরলুম মামীমাদের নিয়ে, সারাপথ দূরে একটি গ্রামের ঘেটুফুলের বনের কথা চিন্তা করেচি, তার বনসিমতলার ঘাট, তার শিউলিতলা, আমতলা এই বসন্তে কি মধুর হয়েচে । একটি মেয়ের কথা মনে হয় বামুঝম্ দুপুরে তেতো ঘেটুফুলের গন্ধের মধ্যে, সে শিউলিতলার পথ দিয়ে লেবুতলার পাশ দিয়ে আমতলার উঠানে আসচে চুপি চুপি । ---এ একটা ছবি, যা এ সময় বড় মনে আসে •• গত শনিবারের আগের শনিবার মাধব ঘোষাল একটা গ্রামোফোন দিলে। তাই নিয়ে বনগী গেলুম। খুকুকে খুব গান শোনালুম, খনা' ছবি দেখাতে নিয়ে গেলুম ওদের সকলকেই।