পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \S**) কুঁচকাটার জঙ্গল—ঘাটে স্নানরত খুকুর দিদি-বিশেষতঃ ঘাটের পথে—এই সব মিলে কি আনন্দই এল মনে ! অপূৰ্ব্ব আনন্দে কাটচে গ্রীষ্মের ছুটিটা । রোজ সকালে উঠে মনে হয় আজ না জানি কি ঘটবে। খুর থাকে বলেই আনটা ঘনীভূত হচ্ছে। আনন্মের উৎস তো এই-ই। আজ ভারী চমৎকার কালবৈশাখী হয়ে গেল বিকেলটাতে। কালবৈশাখীর যে অপূৰ্ব্ব প্রকাশ এখন সন্ধ্যার কিছু আগে। একটা চাপা রাঙা মেঘ হয়েচে এমন অপরূপ । কাল চাটগা থেকে রেণুর পত্র পেয়েচি। সে লিখেচে—বাবা আপনি একবার এখানে চলে আমুন। লিখতে লিখতে মেঘটা অতি অপরূপ রাঙা রং ধরেচে। বারাকপুরে এবার অতি সুন্দর কাটচে —তবে ঝড়-বৃষ্টি অতি কম—ক’দিন তো বেশ গরম গেল। আমি আর কালী, কুঠার গাছে ডুমুর পাড়লুম। তারপর বেলডাঙা যেতে যেতে ভীষণ কালবৈশাখীর ঝড় পেলুম। ঘোষেদের দোকানের মধ্যে আমি, কালী, আইনদির নাতি আর দোকানদার মনু ঘোষ। ঝড়ের বেগে দোচালা জীর্ণ ঘর উড়ে যায় আর কি—সবাই মিলে বাশ ধরে থাকি—তবে রক্ষণ হয়। তারপর দেখি বড় অশ্বখ গাছটা পড়ে গিয়েচে । আমার নারকেল গাছটাও পড়েচে। খুকুর নারকোল কুড়িয়ে রেখেচে সব । খুকু সন্ধ্যার সময় আমায় লণ্ঠন ধরে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল। বল্লে, আজ খুব ভালো গল্পের দিন। যাবেন না আমাদের বাড়ি ? ও রোজ সন্ধ্যার সময় আমায় নিতে আসে—ছুতো করে ন’দিদিদের বাড়ি আসে আমায় নিয়ে নেতে। যাবার সময় বলে—যাবেন কি ? আর বিকেলের দিকে অপূৰ্ব্ব কাজল মেঘ করে এল—থমকে রইল, বৃষ্টি হয় না। খুকু আজ সকাল থেকে কতবার যে এল! আমি বেলডাঙ্গার বেড়াতে গেলুম, পুলের এধারে ঘাসের ওপরে বসি । খেজুর গাছে কাদি কাদি খেজুর, শিমুল বাশ বনের মাথায় কালো কাজল মেঘ (খুকুকে দুপুরে বলছিলুম আমতলায় যখন সে দিলীপ রায়ের ‘তরঙ্গ রোধিবে কে ? বইখানা দিতে এল— তুই বলতিস—ক’লে-কাজল মেঘ ) সব মুদ্ধ মিলে বড় অপূৰ্ব্ব লাগল। এই পল্লীগ্রামের যে জীবনযাত্রা, শতাব্দীর পর শতাব্দী এই রকম, এই বঁাশ শিমূল বনে অপরাজেয় শোভা এমনি ধারা দেখা যায়—ঝিঙে ক্ষেতে এমনি ফুল ফোটে—কত বনসিমতলার ঘাট, কত গ্রাম্য মেয়ে, কত হাসি কান্না প্রেম বিরহ—এই রকম চলবে। এদের নিয়ে একটা বড় উপন্যাস লিখব আজ মাথায় এসেছে। পৃথিবীর উদ্ধে এই শুামল মেঘ-স্তপ যেমন শাস্ত, স্থির তেমরি নিৰ্ব্বিকার। মহাকাল যেন এই উপন্যাসের পটভূমি—নায়ক-নায়িকা গ্রাম্য নরনারী। Da Vinci-র শেষ জীবনের মত গভীর তার আকুতি। সন্ধ্যায় স্নান করে ফিরে এলুম—খুকু মনোরমার মার সঙ্গে বঁাশতলার পথে ঘাটে যাচ্চে। তাকেও এই উপন্যাসের মধ্যে স্থান দেব। আজ দিনটি সব দিক দিয়ে ভারী চমৎকার। বেশ মেঘ করে এল, ঘন আমতলায় চেয়ার পেতে বসে দাওয়ার কোণে দণ্ডায়মান খুকুর সঙ্গে কথা বলচি। দুপুরের পর ইন্দু, আমি, গুটকে কুঠার মাঠের পথ দিয়ে মোল্লাহাটি গেলুম। ইন্দু গেল আমডোবে। আমি ও গুটকে মোল্লাহাটি কুষ্ঠা ও নীলের হাউজঘর দেখি এতকাল পরে। কি সুন্দর স্তাম শোভ, অমৃত খেজুর গাছ জলি ধানের ক্ষেত পথের দ্ব পাশে, একটা সমাধি দেখলুম বাওড়ের ধারে মোল্লাহাটিতে। ফিরবার পথে খুব জামরুল পাড়লুম দ্বধারের গাছ থেকে। বেলা পাচটার সময় ফিরে রোয়াকে এসে বসেচি, খুকু