পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ لك هي الإبقا ছুতোর ঘাটার কাছে দেখি, রাখাল বাড়য্যের স্ত্রী স্নান করে আসচেন। বহুম, ও খুড়ীম। আপনার ভাই চলে গিয়েচে ? উনি বল্লেন, সে তো সেদিনই গিয়েচে । আমিও যাব । এদেশে আবার মানুষে বাস করে ? বল্লুম, কেন, এদেশের ওপর হঠাৎ অত চটে গেলেন যে ! কোথায় যাবেন ? বল্লেন, ভাইয়েদের কাছে চলে যাব। তারপর ওঁর ভাইদের গুণ-কাহিনী আমার কাছে সবিস্তারে বলতে লাগলেন । আমি তার হাত এড়িয়ে খানিকটা এসে দেখি পথের ধারে পাতাল-কেড়ে হয়ে আছে। আদাড়ির নাতি মধুকে ডাকলুম, সেও বলে,—এগুলো পাতালকেড়ে। তারপর ভেদলা ঘাসের শয্যায় মাঠের মধ্যে গামছা পেতে কতক্ষণ শুয়ে রইলুম। বেশ লাগে ! স্বান করে বড় আনন্দ পেলুম আজ—নদীর জল যেমন ঠাণ্ড, তেমনি যেন কাকের চোখের মত স্বচ্ছ ! বাড়ি এসে শুনি ওগুলো নাকি পাতাল-কেড়ে নয়। সকালে ভাণ্ডারখোলা গেলুম, কাকার মেয়ে শৈলর সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে গেল গুটকে। রাস্তা বেজায় খারাপ—যাবার সময় রোদ ছিল খুব—পাল্লা ছাড়িয়ে বড় মাঠ—গাছপালা কম— কেবল একটা বড় বটগাছ আছে—হরিশপুরের মধ্যেও গাছনেই—ভাণ্ডারখোলা গিয়ে পৌছুলাম বেলাতখন দশটা। ওদের চণ্ডীমণ্ডপে আগে একবার-গিয়েছিলুম, দেবব্রতের কথা ভাবতুম তখন। শৈলর সঙ্গে দেখা হল—অনেক দুঃখ করলে সে । ভাইয়ের দেখে না, নিয়ে যায় না । আসবার সময় বাড়ির বাইরে তেঁতুল-তলার পথে দাড়িয়ে রইল—প্ৰণাম করে বল্লে, আপনি এসেচেন বড় শাস্তি হয়েচে আমার । আমি যদি মরেও যাই—আমার মেয়ে দুটোকে দেখবেন আপনারা । বড় কষ্ট হল মেয়েটাকে দেখে—ভালো ঘরেই বিয়ে হয়েছিল, খুব অবস্থাপন্ন ঘরে। কিন্তু ওর কপালক্রমে অল্প বয়সে বিধবা হল—এখন ভামুর-দেওরের ওকে ফাকি দেবার চেষ্টায় আছে। ফিরে আসবার সময় হরিশপুর ছাড়িয়েই কালো কাজল মেঘ বারাকপুরের দিকে জুড়ে যাচ্ছে —মাদেলার বিলের ওপর দিয়ে। সে এক অপূৰ্ব্ব দৃপ্ত। একটা বটগাছতলায় আশ্রয় নিলুম— ততক্ষণে বসে ‘War and peace' পড়লুম গাছতলায়। ঝম্‌ ঝম্ বৃষ্টি নামল । রাস্তায় হয়ে গেল ভয়ানক কাদা। পথ হাটা যায় না—কেবল পা পিছলে যাচ্ছে। কাউকে পাড়ায় বলে যাইনি। এসে রোয়াকে বসেচি—খুকু ন'দিদিদের ঘরে কলের গান বাজিয়ে পাড়ার মেয়েদের শোনাচ্ছিল—নম্বর মার মুখে শুনলে আমি এসেচি। বার হরে এসে চুপি চুপি বললে—কোথায় গিয়েছিলেন ? —ভাণ্ডারখোলা । ও গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল । তারপর খুড়ীমা ঘাটে গেলে, ও এসে অনেকক্ষণ রইল। বল্লে-মাকে পঞ্চাশবার জিগ্যেস করেচি—ম, বিভূতিদা গেল কোথায় । একবার ভাবলুম বনগী! কিন্তু বলে যেতেন তাহলে। এই দিনই খুকু রাত্রে প্রস্তাব করলে কোথাও বেড়ানো যায় কি না। বল্লে, নৌকোয় করে বনগ। ওরা যাবে ৫ই আষাঢ়। তারপর সব ঠিক করা হবে। খুব উৎসাহ মনে । একদিন সকালে পামচকে গিয়ে ব্যথায় সারাদিন কষ্ট । কোথাও নড়তে চড়তে পারিনি। রাত্রে গোপাল ভাত দিয়ে গেল আমার বাড়ি। এদিন নৌকো করে খুড়ীমা, আমি এবং খুকু বনগী এলুম সন্ধ্যার সময়। বননিমতলার ঘাট থেকে বিকেলে আমরা বিদায় নিলাম, ও রেকর্ডের বাক্স বইচে, বল্লাম--রেকর্ডগুলো দে । ও বল্লে—আচ্ছা, খোড়া পীর ! থাক—আমিই বইচি |