পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հb- বিভূতি-রচনাবলী মুছছে। আমার জাঠতুতো ভাই হেসে বললে—ঐ আখ, তোর বাবা কি করচে 1 চেয়ে দেখি ঘরের কোণে থাটে বাবা তিনটে বালিশের তুলো ছিড়ে পুটলি বাধচেন। তুলোতে বাবার চোখমুখ, মাথার চুল, সারা গা এক অদ্ভুত রকম হয়েছে দেখতে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলুম—কি হয়েচে বাবা ? বাবা বললেন—চা-বাগানে আবার চাকরি পেয়েছি—ছোট সাহেব তার করেচে ; সকালের গাড়িতে যাব কিনা তাই পুটুলিগুলো বেঁধেছেদে এখন না রাখলে—কটা বাজল রে খোকা ? আমার বয়স কম হলেও আমার বুঝতে দেরি হ'ল না ষে এবার বাবা মাতাল হননি। এ অন্ত জিনিস। তার চেয়েও গুরুতর কিছু। ঘরের দৃপ্তটা আমার মনে চিরকালের মতো একটা ছাপ দিয়ে গিয়েছিলে—জীবনে কখনও ভুলিনি—চোখ বুজলেই উত্তরজীবনে আবার সেরাত্রির দৃপ্তটা মনে এসেছে। একটা মাত্র কেরোসিনের টেমি জলচে ঘরে—তারই রাঙা ক্ষীণ আলোর ঘরের কোণে বাবার তুলে-মাখা চেহারা—মাথায় মুখে কানে পিঠে সৰ্ব্বাঙ্গে ছেড়া বালিশের লালচে পুরানো বিচিওয়ালা তুলে, যেকৃেতে বসে মার্কাদচেন—দরজার কাছে কৌতুক দেখতে খুড়ীমা জ্যাঠাইমারা জড় হয়েচেন—খুড়তুতে ভাই-বোনের হাসচে।“দাদাকে ঘরের মধ্যে দেখতে পেলাম না, বোধ হয় বাইয়ে কোথাও গিয়ে থাকবে। পরদিন সকালে আমাদের ঘরের সামনে উঠানে দলে দলে লোক জড় হতে লাগল। এদের মুখে শুনে প্রথম বুঝলাম বাবা পাগল হয়ে গিয়েছেন। সংসারের কষ্ট, মেয়ের বিয়ের ভাবনা, পরের বাড়ির এই যন্ত্রণা—এই সব দিনরাতভেবে ভেবে বাবার মাথা গিয়েছে বিগড়ে । অবিপ্তি এসব কারণ অহমান করেছিলুম বড় হলে, অনেক পরে। বেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকের ভিড় বাড়তে লাগল, যারা কোনো দিন এর আগে বাবার সঙ্গে মৌখিক ভদ্র আলাপটা করতেও আসেনি তারা মজা দেখতে আসতে লাগল দলে দলে। . বাবার মূর্তি হয়েছে দেখতে অদ্ভূত। রাত্রে না ঘুমিয়ে চোখ বসে গিয়েছে—চোখের কোণে কালি মেড়ে দিয়েছে যেন। সৰ্ব্বাঙ্গে তুলে মেখে বাবা সেই রাতের বিছানার ওপরেই বসে আপন মনে কত কি বকছেন । ছেলেপিলের দল এপাড়া-ওপাড়া থেকে এসেছে। তারা ঘরের দোরে ভিড় ক'রে দাড়িয়ে । কেউ বা উকি মেরে দেখচে—হাসাহসি করচে। আমাদের সঙ্গে পড়ে এই পাড়ার নবীন বাড়য্যের ছেলে শান্ট-সে একবার উকি মেরে দেখতেই বাবা তাকে কি একটা ধমক্‌ দিয়ে উঠলেন। সে ভান-করা ভয়ের মুরে বলে উঠল—ও বাবা! মারবে নাকি ? বলেই পিছিয়ে এল। ছেলের দলের মধ্যে একটা হাসির ঢেউ পড়ে গেল । একজন বললে—আবার কি রকম ইংরিজি বলছে দ্যাখ– আমি ও সীতা কাঠের পুতুলের মত দাড়িয়ে আছি। আমরা কেউ কোন কথা বলচি নে । আর একটু বেলা হ’লে জ্যাঠামশায় কি পরামর্শ করলেন সব লোকজনের সঙ্গে—আমার মাকে উদ্দেশ করে বললেন—বেীমা, সবই তো দেখতে পাচ্চ—তোমাদের কপাল ছাড়া আর কি বলব। ভূষণকে এখন বেঁধে রাখতে হবে—সেই মতই সবাই করেছেন। ছেলেপিলের বাড়ি— পাড়ার ভেতরকার কাণ্ড-ওরকম অবস্থায় কখন কি ক'রে বসে, তা বলা যায় না--ত তোমার একবার বলাটা দরকার তাই— - আমার মনে বড় কষ্ট হ’ল—বাবাকে বধিবে কেন ? বাবা তো এক বকুনি ছাড়া আর কারুর কিছু অনিষ্ট করতে যাচ্ছেন নী—কেন তবে—