পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ రిన এরা কিছু চায় না। 鬱 -હ গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়ে গেল। কাল ঘাটশীল থেকে ফিরেচি। সঙ্গে ছিল হরিবোলার ছেলে মাদার। ও ফিরে গেল দেশে । ঘাটশীলায় বড় গরম পড়েছিল, ছুদিন কেবল বৃষ্টি হয়েছিল। রোজ বিকেলে বেড়াতে যেভূম গালুডি রোডে সেই শাল বনটার মধ্যে, সেখান থেকে বনমাটির পথ যেখান দিয়ে পার হয়ে গেল সেই উচু জায়গায়। দূরের দিক্‌চক্রবালে নীল শৈলশ্রেণী মুক্ত ভূপৃষ্ঠের আভাস এনে মনকে বন্ধনশূন্ত করে দিত অপরাহের ছায়াভরা আকাশতলে, সেখানে বসে বসে মুগ্রভার চিঠি, খুকুর চিঠি পড়তুম। কোথায় রায়গড়, কোথায় মিরালী, সে এখন হয়তো এই বিকেলে বসে চুল বাধছে, এমনি সব কত ছবি মনে পড়ত। একদিন খুব ঝড়বৃষ্টি এল, রাস্তার ধারের ছোট্ট সঁাকোর মধ্যে ঢুকে অতি কষ্টে বৃষ্টির ধারা থেকে নিজেকে রক্ষা করি । পরশু বসে ছিলুম কত রাত পৰ্য্যস্ত ফুলডুংরি পাহাড়ের নীচে । একে একে দুটি একটি করে কত তার উঠল অন্ধকার আকাশে—আমি যেন বিরহী তরুণ দেবতা, যুগাস্তের পর্বত শিখরে বসে কত জন্মের প্রণয়িনীর কথা ভাবচি । কোথায় এক ক্ষুদ্র গ্রাম্য নদীর তীরে বনসিম তলার ঘাট, সেখানে যে বালিকাছিল, সে আর সেভাবে কখনো ও ঘাটে থাকবে ন—কত বছর চলে যাবে, বালিকার দেহে নামবে জরা, কতকাল পরে বৃদ্ধ যখন এক এক ঘটি হাতে ঘাটের পাড় বেয়ে উঠবে, তখন সে কি ভাববে না তার অতীত কৈশোরের কথা—কত প্রণয়-লীলার স্থান—বনসিমতলার ঘাটটার কথা ! গৌরীর কথা মনে হল। অনেক দূরে আর এক গ্রাম্য নদী, তার ধারে একটা দোতলা বাড়ি—কতকাল আগে সেখানে যে মেয়েটি ছিল, তার দেহের নশ্বর রেণু হয়তো ওই নদীতীরের মৃত্তিকাতেই মিশিয়ে আছে এই কুড়ি বছর। সে জীবনে কিছুই পায়নি—সে বঞ্চিতার কথা আজ এই সন্ধ্যায় বিশেষ করে মনে এল । আর এক বঞ্চিত হতভাগী মিনতি । ওকে কখনো চোখে দেখিনি, কিন্তু ওর নাম শুনেচি । ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, ওর হুঃখ দূর হোক । কিন্তু স্বপ্রভার দুঃখ কে দূর করবে । তার মন তো সাধারণ মেয়ের মন নয়—সে যে চিরজীবন কঁদিবে, তার কি উপায় করব ? ওর জন্তে মন যে কি ব্যাকুল হয়েচে আজ ক'দিনই। নির্জনে বসলেই ওর কথা সারা মন জুড়ে থাকে । ওর সঙ্গে দেখা করাই চাই, মন বড় ব্যাকুল হয়েচে দেখবার জন্তে । কাল বনগী থেকে এলাম। অজিতবাবুর বদলি উপলক্ষে সাহিত্যসভা ছিল। অজিতবাবু লিখেছিলেন, যাবার সময়ে আসবেন । ক’দিন বেশ কাটল । এবার ওদের পাড়ামুদ্ধ সকলে ডেকে ডেকে আনন্দ করলে, গল্প করলে । স্বনীতিদিদি, শুকুর মা সবাই। বাস্তবিক মেয়ের কি ভালো তাই ভাবি ! ওদের মধ্যে খারাপও অাছে জানি, নিজেই তার অনেক পরিচয় অনেক জায়গায় পাইনি কি আর । কিন্তু ভালো যখন হয় ওরা তখন তার তুলনা পুরুষদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। গৌরী, মুপ্রভ, খুকু, কল্যাণী, অন্নপূর্ণ–এদের প্রত্যেককে আমি জেনেচি— এরা দেবীর মত । কি যত্ন-আদর করত স্বপ্রভা ! তার কথা আজকাল সৰ্ব্বদা মনে আছে। ভোল৷ কি যায় ? না তা সম্ভব এই তো জীবন ! o কল্যাণী ছোট মেয়ে অবিপ্তি। কিন্তু সে এরই মধ্যে মেয়েদের স্বাভাবিক সেবাপ্রবৃত্তি আয়ত্ত করে নিয়েছে। ক'দিন বড় যত্ন করলে। বাইরের ঘরটাতে টেবিল ঢাকা পেতে, পরিপাট করে