পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ಲಿನ್ಸಿ বিভূতি-রচনাবলী আর সর্বশেষে এবার যে অজিতবাবু বনগী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন—কল্যাণীদের বাড়ি রইলাম আমি—কল্যাণীর সেবাযত্ন আমার বড় ভালো লেগেছে, সুপ্রভা ছাড়া অল্প কোন মেয়ের মধ্যে এ ধরণের সেবা করার প্রবৃত্তি দেখি নি আমি। কল্যাণী যখন শচীনবাবুদের বাড়ির সামনের পুকুরঘাটে বসে রইল—সে কথাই আমার মনে পড়ে এখনও। এই তো সবে সেদিন। আর এক সপ্তাহ পুরল। এই দিনটি আবার কত কাল আগেরকার বলে মনে হবে একদিন । একদিনের ডায়েরিটা পড়ে অবাক হয়ে ভাবব সেইদিনের সুপ্রভা, সেদিনের কল্যাণী, সেদিনের খুকু—কতকালের হয়ে গেছে ! বাসা বদলে বহু বছর পরে আবার ৪১, মীর্জাপুর ষ্ট্রটের এ দিকটাতে এলুম। অনেকদিন আগে এদিকটাতেই ছিলাম—আবার সেদিকেই এলুম। মন কেমন বড় খারাপ হয়ে গেল বিকেলে, অনেক পুরোনো কাগজপত্র ঘাটতে ঘাটতে কত পুরোনো কথাসব মনে পড়ল । বাবার জন্তে মন যেন কেমন করে উঠল, আর করে উঠল সুপ্রভার জন্তে । বারবেলা ক্লাবে যাবার আগে এই কথা কতবার মনে হল, সুপ্রভা আজ এতক্ষণ আমার চিঠি পেয়েছে। বনগী থেকে আজই এলুম। এই শ্রাবণ মাস, আজ ১লা, মটরলতা দোলানো খয়রামারির মাঠের সেই ঝোপটায় অন্ত অন্ত বছরের মত কালও বেড়াতে গেলুম। এ বছর সব বদলে গিয়েচে s সুপ্রভা নেই, খুকু নেই, জাহ্নবী নেই, বনগার বাসা নেই, ৪১নং মীর্জাপুর স্ট্রটের সে মেস নেহ । নাগপঞ্চমীর ছুটিতে সেই শ্রাবণ মাসে বারাকপুর যাওয়া, খুকুদের দাওয়ায় বসে নলে নাপিতের ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ খাওয়া, খুকুর কত কথাবাৰ্ত্ত—The apple tree, the singing and the gold l-CAFțofe fr 5:e fortgCE ! এবারও কল্যাণী বড় আনন্দ দিয়েচে। দেখ, অষ্টে কি অদ্ভুত যোগাযোগ, এ স্নেহশীলা মেয়েটি আবার কোথা থেকে এসে জুটল বল তো ! কোথায় ছিল ও আর বছর এমন সময় ? অথচ এ বছর ওদের বাড়ির সঙ্গে কেমন একটা আত্মীয়তা হয়ে গিয়েচে–যেন কত কালের আলাপ ! আমি কলকাতায় আসি-না-আসি তাতে কল্যাণীর কি ? অথচ সে অামায় আসতে দেবে না—এই মধুর শাসনটুকু করত স্বপ্রভা, করত খুকু—আবার এ এল কোথা থেকে কে বলবে । কাল (২৯শে জুলাই ) আবার বনগা থেকে এলুম। এবারও ওদের ওখানেই ছিলুম গিয়ে । কল্যাণীর যত্ন সমানই । কাল কিছুতেই আসতে দেবে না কলকাতায়—সোমবার থাকব, মঙ্গলবার থাকতে হবে। বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবার জো নেই—মন্মথদ কিম্বা মুন্সেফের বাড়ি গিয়ে যে একটু গল্প করব, তাতে ঘোর আপত্তি ওঠাবে। —গা ছয়ে বলে যান ঠিক সাতটার সময় আসবেন । যদি না আসেন তবে আমি কিন্তু মরে যাব । তাতেই বা কি, আমি মরে গেলে, জগতের কার কি ক্ষতি | মুন্সেফবাবুর বাড়ি গিয়ে স্কুবেল। আডা দিই। বার্শিয়ার সম্বন্ধে অনেক রকম কথা হল। আবার ১১ই আগস্ট বনগী থেকে এলুম। বেলুর জন্মদিনে নিমন্ত্রণ ছিল, তা ছাড়া ছিল মাসিক সাহিত্য-বাসর। মায়াও ছিল এবার, গল্প-গুজবে বেশ কাটল। নদীতে ঘোল এসেচে, এদিন যখন স্নান করতে গেলুম তখন জল খুব ঘোলা। কল্যাণীর আসবার কথা বলে এলুম কলকাতায় ।