পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ునరి কাল শনিবার বারাকপুরে গিয়েছিলুম। আর বছর তো সারা বর্ষাকাল ও শরৎকাল দেশে যাই নি। গোপলনগরের বাজারে প্রথমেই গুটকের সঙ্গে দেখা। শুামাচরণদাদা দেখি বাজারে আসচে, তার মুখে শুনলুম কালী এসেচে। ভাদ্র মাসের বৈকাল, শুকনো পথ-ঘাট, বৃষ্টি নেই এবার, আকাশ নীল, গাছপালা ঘন সবুজ। বাড়ি গিয়ে দেখি বলা বোষ্টম আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েচে । আমি ইছামতীর ধারে গিয়ে কতক্ষণ বসে রইলাম, ঘোলা জল ঘাসভর মাঠ ছুয়েচে । ওপারের মাঠে ঘাড়া ঝোপে সন্ধ্যার ছায়া নামল, আকাশে কত রকম রঙিন রঙের খেলা দেখা গেল, আমি জলে নেমে স্বান করলাম । আমাদের বাড়ির পেছনে বাশবনে অন্ধকার হয়ে গিয়েচে—পাকা তালের গন্ধ পাওয়া যাচ্চে শুামাচরণদাদাদের বাগান থেকে। একটা তাল পড়ার শব্দ পেলুম। বাড়ি এসে খানিকট বসে আছি, মনে হচ্ছে খুকু যেন এবার এল বিলবিলের ধারের পথটা দিয়ে। এবার ওদিকে বড় বন । সন্ধ্যার পরে খুব জ্যোৎস্না উঠল। এমন পরিপূর্ণ জ্যোৎস্না শুধু কোজাগরী পূর্ণিমার কথা মনে এনে দেয়, আর মনে আনে খুকুর কথা, ন'দিদিদের বাড়ি থেকে এসে আমার উঠোনে জ্যোৎস্নায় দাড়িয়ে গল্প করত ! কালী এসেচে, ওদের বাড়ি কতক্ষণ কালীর সঙ্গে, সুপ্রভার সঙ্গে গল্প করলুম। সুপ্রভার বিষয়ে অনেক কিছু জিগ্যেস করল। আজ রবিবার সকালে কালী ও আমি প্রথমে গিয়ে বসলুম বাওড়ের ধারে ছুতোরঘাটার বটতলায়। কলকাতা থেকে অনেকদিন পরে গ্রামে গিয়ে বনঝোপ দেখে বাচলাম। এ সব না দেখে আমি থাকতে পারিনে—সকালের বাতাসে নাটার্কাটা ফুলের সুগন্ধ, বনটিয়া ডাকচে, কলামোচা পাখী ঝোপের মাথায় খেলা করচে। সইম যাচ্ছেন নাইতে,আমায়বল্লেন—কবে এলে বিভূতি ? তার সঙ্গে গল্প হল খানিকক্ষণ । তারপর আমি আর কালী বেলডাঙা হয়ে মরগাঙের ধারে বাবলা তলায় কতক্ষণ বসলুম, কালী ঘোঙ কুড়োলে, কুঠার মাঠের জলার ধারে একটা নিবিড় ঝোপে দুজনে বসলুম। আর সব জায়গাতেই সুপ্রভার পত্ৰখানা পড়চি—একবার, দুবার কতবার যে পড়া হল । দুজনে আবার আমাদের ঘাটে নাইতে এলুম, কালী সিট কি জালে চিংড়ি মাছের বাচ্চ ধরলে। আমি যখন রোয়াকে বসে থাকি, তখন যেন আবার মনে হল খুকু আসচে “এখুনি তেলাকুচে ঝোপের আড়ালে গিয়ে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে সে আসবে--- ঘুমিয়ে উঠে বিকেলে কালীর বাড়ি গেলুম। ওরা হাটে গেল, আমি আমাদের ঘাটে এসে বসলুম—ওখান থেকে নৌকো করে কুটার মাঠে এসে ঘাসের ওপর বনসিম ঝোপের ছায়ায় বসে সুপ্রভার পত্ৰখানা আবার পড়ি। সুপ্রভা কোথায় কতদূরে আজ। কল্যাণী•••ওর কথাও মনে হয়। এরা সব চলে গেল, তাই ভগবান যেন এই স্নেহময়ী মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার স্থ' শনিবার পরে তবে ওর সঙ্গে দেখা হবে। জন্মাষ্টমীর ছুটিতে ঘাটশিলা যাব । সুপ্রভাকে লিখেচি সেদিন সেখানে পত্র দিতে। সন্ধ্যার ট্রেনে চলে আসব। হাট থেকে বৃদ্ধ মুসলমানের ফিরচে আমাদের গারে । কারো মাথায় ধাম, কারো মাথায় ঝুড়ি। সবাই জিগ্যেস করে—বাবু করে আলেন? আরামডাঙার আবদুল, হুটুর সরা—সবাই। গোপালনগর স্টেশনে অনেকক্ষণ বসলুম। কত নক্ষত্র উঠচে– আজ সারাদিন পরিপূর্ণ শরতের রৌদ্র । বনগীয়ের কাছে ট্রেন আসতেই কল্যাণীর কথ। মনে হল । একবার মনে হল নেমে ওর সঙ্গে দেখা করে কাল ট্রেনে যাব । মেসে এসে সেবার পত্র ஆ/ এবার ভাল লেগেচে বাওড়ের ধারে বটতলায় বল, ইটার মাঠে ছায়াসিন্ধ ঝোপট, মরগাঙের