পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ నినd মনে পড়ল। পরদিন সকালে উঠে আমি বাসাডের ম্যাঙ্গনীজ কোম্পানীর পথটা দিয়ে ফুলডুংরির পেছন দিয়ে দূরের পাহাড়শ্রেণীর দিকে চললুম। মেঘান্ধকার সকাল, সজল হাওর বইচে, ছু ধারে বন সবুজ হয়ে উঠেচে বর্ষায়, পাথরগুলো কালো দেখাচ্ছে গাছপালার তলায় । সেবার সেখানে ভিক্টোরিয়া দত্ত, আমি, নীরদবাবু, সুবর্ণ দেবীর চ খেয়েছিলুম, সেই উচু পাহাড়ের কাটিংটা দিয়ে বড় বড় গাছের তলা দিয়ে সোজা চললুম—দুধারে কি নিবিড় বন, পাথরের শুপ ছড়ানো, বড় একটা বটগাছ। এটা যেখানে নীচু হয়ে গেল, তার বা দিকে একটা নিবিড় কুঞ্জবন ও লতাবিতান—বসবার ইচ্ছে থাকলেও বসতে পারলুম না, বেলা হয়ে গেল। একটা পাহাড়ী ঝর্ণ পার হয়ে ( দুধারে কি শোভা সেখানে !) ওপারে গেলুম। বা দিকে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা মুড়ি পথ ধরে কিছুদূর গিয়েই দেখি সেই ঝর্ণাটা রাস্ত আটকেচে । আর না গিয়ে সেই ঝর্ণার ধারে যেখান দিয়ে খুব তোড়ে জলটা বইচে কুলুকুলু শবে—সেখানে জলে পা ডুবিয়ে বসে রইলুম। স্বপ্রভার ও কল্যাণীর চিঠি দুখান সেই ঘন বনের মধ্যে ঝর্ণার ধারে জনহীন আরণ্য প্রকৃতির নীরবতার মধ্যে বসে কতবার পড়ি। হাতীর ভয় করছিল বড়। এ সময় বুনো হাতীর সময় । বৃষ্টি এল। একটা পথিক লোক কাছে এসে বসল। ও বল্লে—এখানে হাতীর ভয় নেই— তবে সকাল সকাল চলে যান বাবু। কুরুডির পথ দিয়ে ঘুরে আবার সেই ঝর্ণাটা পার হয়ে চলে এলুম। একটা ছোট ফর্স মেয়ে কপালে সিদ্বর দিয়েচে—আমি যেমন বললুম, “তোর নাম কি খুকি ?” অমনি ছুটে পালাল। আমি কত কি গাছপালার মধ্যে দিয়ে গ্রাম পার হয়ে এসে ম্যাঙ্গানিজ কোম্পানীর পথটা ধরলুম। বড় বৃষ্টি পড়চে—ধেীয়া ধোরা মেঘ ঘুরে ঘুরে উড়চে পাহাড়ের চূড়ায় নীল বনরেখাকে বেষ্টন করে। বেলা দুটাের সময় ঘাটশিলায় পৌছলুম—বৌমা ভাত নিয়ে বসে আছেন। আমি তাড়াতাড়ি বাধের জলে স্নান সেরে এসে খেয়ে সকলকে উদ্ধার করলুম। দুপুরে খুব ঘুমুই। তুলসীবাবু মোটর নিয়ে এসে ফিরে গেল। রাত্রে দ্বিজুবাবুর বাড়ি নিমন্ত্রণ। অমরবাবু ও বাসার চাকর বিনোদ রাত ১২টায় নাগপুর প্যাসেঞ্জারে উঠিয়ে দিয়ে গেল । অনেককাল আগে এই সময় আমি আজমাবাদের কাছারীতে ছিলুম ভাগলপুরে। জন্মাষ্টমীর ঠিক তেমনি মেঘান্ধকার সন্ধ্য-অনেক বছর আগে বারাকপুরের বাড়িতে যে রকম ছিল ১২ ভাদ্র, জন্মাষ্টমীর দিন। মণি চালে প্রদীপ দেখাচ্ছিল, গৌরী আমায় বললে— এলো, এসো, ও কিছু না—কোথায় আজ ওরা সব ? আজ ১১ই ভাদ্র । কতকাল আগে এমনি বেলাটিতে আমি কত আগ্রহের সঙ্গে বাড়ি গিয়েছিলুম সে কথা মনে পড়ল। আবার এই সময়ে এমন বর্ষার দিনে আমি আজমাবাদ কাছারতেও ছিলুম। এ সময় আমি এক পয়সার খড়িমাটি কিনে কত আগ্রহ নিয়ে ট্রেনে চলেচি। পূজোর ছুটি এসে গেল। মধ্যে G. B. Association থেকে আমার একটা অভিনন্দন দিলে—পশুপতিবাবু, জ্যোৎস্না বৌম, শৈলদ, তারাশঙ্কর—আরও অনেকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি আনন্দময় হয়ে উঠেছিল। এবার বড় লিখবার তাগিদ, কাল রাত্রে একটা গল্প লেখা শেষ হয়েচে—আজ থেকে লেখা বন্ধ। এবার রাচি হতে সাহিত্য সন্মিলনীতে সভাপতিত্ব করবার তাগিদ এসেচে। এবার চাটগ যাবার ইচ্ছেও আছে। আজকাল শরতের বৈকালে স্কুলের ছাদ থেকে কিম্বা পথে বাবার সময়ে দূর আকাশের দিকে