পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯৮ বিভূতি-রচনাবলী স্টীমারে যখন পার হচ্চি, ময়মনসিং জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার পিংনা বলে একটা স্টেশনে এসে স্টীমার দাড়াল। আমি কল্পনা করলুম সন্ধ্যায় নেমে আমি অনেকদিন পরে যেন কল্যাণীদের বাড়ি ওর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। হরেন ঘোষ আমার সঙ্গে ময়মনসিং স্টেশনে দেখা করলে। আবার বিদ্যাময়ী হোস্টেলট ভাল করে দেখলুম। মায়া ও কল্যাণী এখানে পড়ত। হরেন ঘোষকে রমা দেবীর দেওয়া খাবার খাওয়ালুম। সিরাজগঞ্জে ট্রেনে উঠেই শুয়ে পড়লুম। ঘুম ভেঙে একেবারে দেখি ঈশ্বরদি। তারপরেই ঘুমিয়ে পড়লুম—দেখি রাণাঘাট। ভোর হবার দেরি নেই। আবার ঘুমিয়ে পড়লুম—দেখি নৈহাটি। দেশে এসে গিয়েচি। স্টীমারের এঞ্জিনের কল প্রতিবারই দেখি–এবারও দেখলুম। পূজোতে খুব বেড়ানো গেল এবার। ঘাটশিলা, বনগ, বারাকপুর, চাটগাঁ, ময়মনসিং—বহু জায়গা । কলকাতায় নেমে দেথি শ্রাবণ মাসের মত মেঘাচ্ছন্ন দিনটা । বৃষ্টিও বেশ নামল দুপুরে। আজই বনগী হয়ে বারাকপুর যাব। আনন্দের বিষয় এই যে, ১৯১২ সালে ব্রাহ্মণবেড়িয়া, হয়ে চাটগা থেকে যখন কলকাতায় ফিরি, তখন আমি ৪১নং মীর্জাপুরের যে দিকের মেসটায় থাকতুম–এবারেও সেইখানে এসে উঠেচি । আজ স্কুল খুলেচে । বনগা থেকে এলুম। আগের লেখাটা লিখবার পরে বারাকপুরে দুদিন ছিলুম। আমার উঠোনের গাছে খুব শিউলিফুল ফুটেচে। খুকুর কথা কেবলই মনে হল সেখানে গিয়ে। কুঠার মাঠে যেখানে বসে ‘আরণ্যক’ লিখতুম, সেখানটাতে বসে কতক্ষণ কাটালুম। নৌকো করে বিকেলে খুকুর মার সঙ্গে বনগা আসবার সময় মনে পড়ল—১৯৩৯ সালের আষাঢ় মাসে খুকুর মা, খুকু এবং আমি বনগায়ে এসেছিলুম। কল্যাণীর সঙ্গে দুদিন কাটিয়ে গেলুম ঘাটশিলা। সেখানে এল বিভূতি মুখুজ্যে। তাকে নিয়ে ভট্চাজ সাহেবের মোটরে গালুডি। প্রোফেসার বিশ্বাসের বাড়িতে মেয়েদের পার্টিতে আমাদের নিমন্ত্রণ হল। সেই রাত্রেই রাচি রওনা হই বিভূতিকে নিয়ে । মুরী জংশন থেকে রাচি যাওয়ার রেলপথের দু’ধারে অরণ্য সৌন্দর্য্যের তুলনা হয় না। পরদিন রাচি থেকে অনেকগুলি মেয়ে ও কলেজের ছেলেদের সঙ্গে হুড রু ও জোনা জলপ্রপাত দেখতে গেলুম। জোনাতে সন্ধ্যার আগে একখানা পাথরে বসে কত কি ভাবলুম। হুডকুর চেয়ে জোনা ভালো লাগলো। কি জনহীন নিস্তব্ধতা চারিদিকের ! মেয়েদের আসতে দেরি হতে লাগল, আমি ও বিভূতি ঘাসের উপর শত্তরঞ্চ পেতে শুয়ে রইলুম কতক্ষণ। স্বপ্রভা, খুকু, কল্যাণী, গৌরী—সবার কথাই মনে হয়। ওদের সবাইকে আমার প্রীতির অর্ঘ্য নিবেদন করি মনে মনে । সুপ্রভার চিঠি পেয়েছি রাচি এসেই। জোনাতে সে চিঠিখানা আমার পকেটে । জঙ্গলের মধ্যে বসে কতবার পড়ি। কল্যাণীর চিঠিখানাও। রাচি শহরটি বেশ সুন্দর ! মুনিৰ্ম্মল বস্ব ওখানে বেড়াতে গিয়েচে, তার সঙ্গে একদিন মাঠের ধারে বেড়াতে গেলুম। রাচি থেকে ফিরে ঘাটশিলা এসে দেখি ছোটমামা এবং হুটুর শ্বশুর সেখানে। কমল একদিন বেড়াতে এল। চলে এলুম কলকাতা। সেইদিন ছিল সকালে হাওড়ার পুল খোলা । স্টীমারে গঙ্গা পার হই। ন’টার ট্রেনে মানকুণ্ডু। খুকু আমাকে দেখে কি খুশি ! কত গল্প, কত কথা। বাইরের দরজায় খিল দিয়ে এসে বসল। এতদিন পরে ও স্বীকার করলে, ছাদ থেকে রাঙা গামছা ও-ই উড়িয়েছিল। চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। দেখে কষ্ট হল বড়। আসবার সময় বয়ে-চেয়ে দেখলে দেখতে পাবেন আমি জানালায় দাড়িয়ে আছি। সত্যি দাড়িয়েই রইল। সুপ্রভার কথা কত হল। কল্যাণীর কথাও