পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \రీసిసి বল্লুম। সেই দিনই রাত সাড়ে আটটার ট্রেনে বনগা। বঙ্গভ্র'র স্বধাংশু যাচ্ছিল, তাকে ডেকে আমার গাড়িতে তুলে নিয়ে গল্প করি আমার ভ্রমণের। বনগী পৌছে সুন্দর জ্যোৎস্নার মধ্যে হেঁটে চললুম। বাড়ির সব দরজা বন্ধ করে ওরা ঘুম দিচ্চে। মুনীতিদের বাড়ি এসে বসলুম। স্বধীরবাবু গিয়ে ডেকে তুল্পে। পরে একদিন কল্যাণীদের সঙ্গে নৌকো করে বারাকপুরে গেলুম পিক্‌নিক করতে। আমাদের পাড়ার ঘাটে বনসিমতলায় কল্যাণী রান্না করলে। গ্রামের ঝিবৌয়ের আলাপ করতে এল । ওরা আমার বাড়িতে বসে গান করলে । সব এল শুনতে । ইন্দু রায়ের বাডি গেল সবাই মিলে। জ্যোৎস্না রাত্রি, বাশবনের মাথায় আমাদের বাড়ির পিছনে বৃহস্পতি ও শনি জ্যোৎস্নাভরা আকাশেও যেন জলজল করচে। নৌকো ছাড়লুম। কল্যাণী আমার সঙ্গে বসে গল্প করলে নৌকোর বাইরে বসে। ঘাট-বাওড়ের এপারে জ্যোৎস্নাভরা মাঠের মধ্যে চা করলে। কি চমৎকার লাগছিল! একটা বড় উল্কা সে সময় বেগনি ও নীল রংঙের আলো জালিয়ে আকাশের জ্যোৎস্নাজাল চিরে প্রজলন্ত হাউইবাজির মত জলতে জলতে মিলিয়ে গেল । সুন্দর কাটল এবার পূজোর ছুটি । গাড়িতে গাড়িতে কাটল সারা ছুটিটা । কোথায় চাটগাঁ, কোথায় রাচি । আজ ফিরেচি কলকাতায় বরিশাল এক্সপ্রেসে বনগা থেকে । জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল ওপরের ওটা লিখবার পরে। গত অগ্রহায়ণ মাসে আমি বিবাহ করেচি। সম্প্রতি স্ত্রীকে নিয়ে ঘাটশিলা গিয়েছিলুম। একদিন মুবর্ণরেখা পার হয়ে পাহাড়-জঙ্গলের পথে চললুম ওকে নিয়ে। বনের মধ্যে একটা বর্ণ আছে, তার ধারে বড় বড় পাথর পড়ে আছে—এক ধরণের কি ঘাস গজিয়েচে । গোলগোলি ফুল (coelo sperma Govripium ) ফুটেচে তামাপাহাড়ে। দুজনে একটা পাহাড় ডিঙিয়ে ছোট পাথরে বসলুম ছায়ায় । তারপর ঝর্ণার জল খেয়ে চললুম পাহাড়ের দিকে। ওপরে যখন উঠেচি, তখন বেলা দুটো। ও গোলগোলি ফুল নিয়ে খোপায় পরলে। আমরা নেমে এলুম, তখন বেলা তিনটে । তারপর শিবরাত্রির ছুটিতে ওকে আনতে গিয়ে বৈকালে দুজনে গেলুম ফুলডুংরিতে। চারিধারের পাহাড়ের শোভা এই বৈকালে অপূৰ্ব্ব হয়েচে । অনেক রাত পৰ্য্যন্ত বসে থাকার পরে ফিরে গেলুম। গত মঙ্গলবারে ওকে নিয়ে বারাকপুরে গিয়েছিলুম। ও মায়ের ভাঙা কড়াখানার ওপরে ফুল দিলে, বড় ভালো লাগল আমার । বেশ মেয়ে কল্যাণী । আমরা কুঠার মাঠে গিয়ে কুল পাড়লুম সবাই মিলে। গুটুকে, ইন্দু রায়, সত্য সবাই ছিল। সন্ধ্যার সময় চলে এলুম। কাল ছিল স্কুলের ছুটি । সকাল বেলা বনগী থেকে বেরুলাম আমি, কল্যাণী, বেণু ও যাদ্ধ। বসন্তে ফেটুফুল দেখব এই ছিল আশা, প্রথমে গেলুম চাপাবেড়ের রাস্তার ধারের পুকুর পাড়ে। সেখান থেকে শুকনো পুকুরটার মধ্যে দিয়ে আমরা গেলুম ওপারে। তারপর গ্রামের পথে একটা তিত্তিরাজ গাছের তলায় ঘেটুবনের ধারে চাদর পেতে বসলুম। তিক্তিরাজের ফল পেকে ফেটে আছে গাছে—কেমন গন্ধ । যেতে যেতে চড়কতলার বনের একটা অংশের মধ্যে ঢুকে পড়লুম। বেতগাছ ও কয়েক প্রকার মতুন ধরনের গাছপালা দেখলুম। একটা কাঙ্গালীদের বাড়ি কুল পেড়ে খেলাম। তামাক লেজে দিলে ।