পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 б বিভূতি-রচনাবলী তখন বেলা প্রায় ১১টা। ওখান থেকে সোজা হেঁটে এলুম চালকী। পথে কত ঘেটুবনের শোভা—উচু পুকুরের পাড়টাতে চালকীর। ছেলেবেলায় যেখানে বসে কলের গান শুনেছিলুম, সেই দালানটা ভাঙা অবস্থায় দেখলুম। মিতেদের বাড়ির ওপর দিয়ে জাহ্নবীর বাড়ি এলুম। জাহ্নবীর ঘরে এসে কল্যাণীকে নিয়ে দাড়ালুম। কতদিন পরে আবার দাড়ালুম এসে জাহ্নবীর ঘরে । ওরা ডাব খাওয়ালে, ভাত খাওয়ালে। দুপুরের পরে সকলে হেঁটে চলে এলুম বনগী । চাপাবেড়ের পথে এল বৃষ্টি। একটা গাছের খোড়লে সবাই ঢুকে বসি । বৃষ্টি গেল কেটে খানিকট পরে । বেলা চারটাতে বনগী ফিরি। কাল জাহ্নবীর বনগার বাসায় গিয়েচি, পাচী ডেকে নিয়ে গিয়ে চা করে দিলে, পায়েস খাওয়ালে। অনেকদিন পরে ওদের বাড়িতে গেলুম। তার আগে মানকুণ্ডু খুকুর সঙ্গে গিয়েছিলুম একদিন। খুকু পুকুরের ধার দিয়ে আমাকে আসতে দেখেই ছুটে এল। ছাড়তে চাইলে না—তখুনি চা করে, খাবার করে খাওয়ালে । গত রবিবারে বনগ্রাম সাহিত্য-সম্মেলন হয়ে গেল। তার আগের দিন আমি, কল্যাণী, কামু, বেণু সব বেরিয়ে চাপাবেড়ের ঘেটুফুল দেখতে গেলুম—ওরা সব খাবার তৈরী করে নিয়ে গেল। কি সুন্দর ঘেটুফুল ফুটেচে চাপাবেড়ের ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাঠের ধারে । বিকেল বেল, আমরা বিলের মধ্যে দিয়ে মাঠের বনের ছায়ায় বসলুম। সবাই মিলে চা ও খাবার খেলুম। ওরা সব ছুটোছুটি করলে। কোলিক ডাকচে বনে, নীল আকাশ, ভারী আনন্দ পেলুম সেদিন। সাহিত্যসম্মেলন তার পরদিন । গজেন, হরিপদদা ও খুকু এল—ওদের চা ও খাবার খেতে দিলুম। নববর্ষের আজ প্রথম দিন। গত বর্ষে অনেক ঘটনা ঘটে গেল । সুপ্রভার বিবাহ ও আমার বিবাহ তাদের মধ্যে দুটি প্রধান ঘটনা। পূৰ্ব্বের জীবন একেবারে বদলে গিয়েচে । আজ বনগা থেকে এলুম রাত ন’টার ট্রেনে। কাল বারাকপুরে চড়ক দেখতে গিয়েছিলুম অনেক দিন পরে । আমি, গুটুকে ও নদু—তিন জনে যাই । অনেকদিন আগের মত চড়কতলার কাদামাটি দেখলুম। শিবের জন্তে ধান ছড়ানো। বাড়ির পেছনে বঁাশতলায় বেড়াতে গিয়ে তেমনি শুকনো ফলের বীজের বন্ধ, পাখীর ডাক। তেমনি কোকিল ডাকচে–যেন গোটা জীবনটা সামনে পড়ে আছে মনে হল । বাবা ও মাও যেন আছেন | বার্ণপুরে সাহিত্য-সম্মেলনে ও সপ্তাহে কল্যাণীকে নিয়ে গিয়েছিলুম। সেখানে একদিন ওরা মোটর নিয়ে রতিবাটি কয়লার খাদ দেখাতে নিয়ে গেল আমাদের । জীবনে এই প্রথম কয়লার খাদ দেখা হল, বিভূতি মুখুয্যেও সঙ্গে ছিল। ১লা বৈশাখ খুব ঝড়-বৃষ্টি হয়ে গেল আজ বনগায়ে। দুটি লোক হাটে গাছ-চাপা পড়ে মারা গেল । কচা মারা গিয়েচে, বারাকপুরে গিয়ে সকলের মুখে সে বিবরণ শুনলাম। বড়ই শোচনীয় স্বত্যু । কতদিন পরে আবার দেখলুম চড়ক—সেই কথাই বার বার মনে হচ্চে—এমন ধরণের লাঠি খেলা সেই দেখতুম বাল্যকালে, আবার কতকাল পরে যেন মনে দেশের আমাদের ঘরবাড়ি ঠিক তেমনি আছে, তেমনি পক্ষী-কাকলী-মুখরিত, শুকনো ফলের বীজের গন্ধামোদিত আমার বাল্য