পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ 않e ভাবলুম—এবার রাত ভোর হয়ে এসেচে। আর সে কি আনন্দ ! সেই নীচের কলতলায় গিয়ে মান করে আসব। o yপূজোর ছুটি আজ শেষ হয়ে স্কুল খুলেচে । আজ এসেচি বনগী থেকে। পরশু ঘাটশিলা থেকে যাই বারাকপুরে। মহাষ্টমীর দিন কল্যাণীকে নিয়ে ঘাটশিলা যাব পূৰ্ব্ব থেকেই ঠিক ছিল—সপ্তমীর দিন নকফুলে জয়গোপাল চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ি নিমন্ত্রণ খেয়ে এসে পরদিন সকালেই রওনা । শেষরাত্রে ঘাটশিলা পৌছব। মেসে ওকে নিয়ে এসে দেখি দাৰ্জিলিং-এ দেখা সেই ছেলেটি ও স্কুলের দুটি ছাত্র উপস্থিত। ওদের সাথে গল্পগুজব করে কেটে গেল সময়টা । তারপর রমাপ্রসন্নের বাড়ি নিয়ে গেলুম। তারা জলটল খাওয়ালে। ফিরেই হাওড়া স্টেশনে গিয়ে খানিকটা অপেক্ষা করার পরে নাগপুর প্যাসেঞ্জার ধরলুম। মিতে আছে ওখানে—শেষরাত্রে আমাকে ঘাটশিলা পৌছুতেই সে তামাক সেজে নিয়ে এল। তারপর ভোর হতেই বেড়াতে বেরুই আমরা । গালুডিতে দ্বিজুবাবুর সঙ্গে হেঁটে যাবার দিন যথেষ্ট আমোদ পেয়েছিলাম—আর আমোদ পেয়েছিলাম নোয়ামুণ্ডি লাইনে বেড়াতে যাবার দিন। গালুডিতে কোজাগরী পূর্ণিমার দিন নীরদবাবু, মিস দাস, প্রোফেসর বিশ্বাস সবাই মিলে রবীন্দ্রনাথের শেষ রক্ষা অভিনয় হল। তারপর ঘাটশিলার ভট্চাজ সাহেবের বাড়িতে একদিন পার্টি উপলক্ষে আমরা নিমন্ত্রিত ছিলাম— সেদিনও খুব আনন্দ করা গেল ! নোয়ামুণ্ডি যাবার দিন ভোররাত্রে নাগপুর প্যাসেঞ্জর ধরে মিতে ও আমি ঘাটশিলা থেকে প্রথমে যাই টাটা। সেখান থেকে একখানা Special Train ধরে চাইবাসা। চাইবাসা বেশ সুন্দর জায়গা—অনেক এ্যাকোসিয়া গাছ রাস্তার দুধারে । বাজারে বড় বড় আতা বিক্রি হচ্চে, আমরা দু'তিন পয়সার আত কিনে রাস্তার সাকোতে বসে পেট ভরে খেলুম—তারপর রেল লাইন ধরে স্টেশনে হাজির । ঝিনকিপানি স্টেশনে থৈ থৈ করচে মুক্ত দিগন্ত—অমন মুক্তরূপ ভূমিত্র আমি বড় ভালবাসি-বেশী দেখি নি অমন দৃশু—এটা নিশ্চয়ই। কেন্দপোসি ছাড়িয়ে দুধারে বিজন অরণ্যভূমি, বনে সহস্র টগর (micalia champak) ফুলের গাছ—আর শেফালী—কি একটা ফুলের ঘন সুগন্ধে ত্রিশ মাইল দীর্ঘ রাস্তার প্রতি মুহূৰ্ত্তটি রেলের কামরা আমোদ করে রেখেচে । নোয়ামুণ্ডি ছাড়িয়ে বন আরও বেশী—সত্যিই সে বনের শোভা ও গাম্ভীৰ্য্য মনে অন্ত ভাব জাগায়—তা শুধু কমনীয় সৌন্দর্ঘ্যের ভাব নয়—যা জাগায় বাংলাদেশের বনঝোপ, সে যেন চৌতালের ধ্রুপদ—মনে গম্ভীর ভাব জাগায়। ফিল্মের অভিনেত্রীর হালকা প্রেমের মিষ্টি মুরের গান নয়—ফৈয়াজ খার মালকোষ কিংবা পুরিয়া। গাম্ভীৰ্য্য আছে, উদাত্ত ভাব জাগায়—অথচ মিষ্টত্ব বলতে সাধারণতঃ লোকে যা বোঝে তা কম। যখন ফিরি তখন চারিধারে লৌহ-প্রস্তরের ছড়াছড়ি দেখে ভগবান সম্বন্ধে বড় একটা অদ্ভুত ভাব মনে এসেছিল—পদার্থ, নক্ষত্র জগৎ, বিশ্বের বিরাটত্ব প্রভৃতি নিয়ে। জঙ্গলের মাথায় পশ্চিম আকাশে শুকতার, মাঝ-আকাশে বৃহস্পতি । রাত ১২টার ট্রেনে ঘাটশিলা এসে নামলুম। তারপর আর একদিন গালুডি যেতে হল নীরদবাবুর গৃহপ্রবেশ উপলক্ষ্যে। সেদিন মিতে, মিতের স্ত্রী, বৌম, কল্যাণী সবাই গিয়েছিল। পশুপতিবাবুর স্ত্রীকে সেখানে দেখলুম। খুব খাওয়া-দাওয়া হল । e আসবার আগের দিন সৌরীন মুখুয্যের ভাইপো এসে বল্লে—ধারাগিরি আমরা যাব কি না। আমি ফুলজুরি পাহাড়ের কোলে গালুডি রোডের ধারে যে আম গাছ, ওখানে বলে রইলুম—