পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రీe বিভূতি-রচনাবলী ওপর বিরূপ—দুবেলা তাদের অনাদর আর মুর্থনাড়া সহ করা আমাদের অসহ্য হয়ে উঠেছে। চা-বাগানের দিনগুলোর কথা মনে হয়, সেখানে আমাদের কোনো কষ্ট ছিল না—অবস্থা ছিল অত্যন্ত সচ্ছল, ছেলেবেলায় সীতাকে ভুটিয়া চাকরে নিয়ে বেড়াত আর থাপা মানুষ করেছিল আমাদের । ছ-বছর বয়স পর্যন্ত আমি থাপার কাধে উঠে বেড়াতাম মনে আছে। আমাদের এই বর্তমান দুরবস্থার জষ্ঠ বাবাকে আমরা মনে মনে দায়ী করেছি। বাবা কেন আবার ভাল হয়ে সেরে উঠুন না ? তা হ’লে আর আমাদের কোনো দুঃখই থাকে না । কেন বাবা ওরকম পাগলামি করেন ? ওতে লজ্জায় যে ঘরে বাইরে আমাদের মুখ দেখাবার জো নেই। সেদিন সকালে সেজ খুড়ীমা এসে আমাদের সঙ্গে খুব ঝগড়া বাধালেন। মেজ খুড়ীমাও এসে যোগ দিলেন। তাদের বাগানে বাতাবি নেবু গাছ থেকে চার-পাচটা পাকা নেবু চুরি গিয়েছে। ੇ। এসে মাকে বললেন—এ আমাদেরই কাজ-আমর খেতে পাইনে, আমরাই নেবু চুরি করে ঘরে রেখেছি। তারা সবাই মিলে আমাদের ঘর খানাতল্লাসী করতে চাইলেন। মা বললেন—এসে দেখে যান মেজদি, আমার ঘরে তো লোহার সিন্দুক নেই যে সেখানে আমার ছেলেমেয়েরা নেবু লুকিয়ে রেখেছে”এসে দেখুন— শেষ পর্য্যন্ত বাবা ঘরে আছেন বলে তারা ঘরে ঢুকতে পারলেন না, কিন্তু সবাই ধরে নিলে যে নেবু আমাদের ঘরে আছে, খানাতল্লাসী করলেই বেরিয়ে পড়ত। খুব ঝগড়াঝাটি হ’ল— তবে সেটা হ’ল একতরফ, কারণ এ পক্ষ থেকে তার জবাব কেউ দিল না । জ্যাঠাইমা এ বাড়ির কত্রী, তাকে সবাই মেনে চলে, ভয়ও করে। তিনি এসে বললেন—হয় তোমরা বাড়ি থেকে চলে যাও, নয়ত ঘরের ভাড়া দাও । সীতা এসে আমাকে বলল—জ্যাঠাইমা এবার বাড়িতে আর থাকতে দেবে না, না দেবে না দেবে, আমরা কোথাও চলে যাই চল দাদা । দিন-দুই পরে জ্যাঠামশাইদের সঙ্গে কি একটা মিটমাট হ'ল। ঠিক হ’ল যে দাদা চাকরির যোগাড় করতে কলকাতায় যাবে, ঘরে আমরা আপাততঃ কিছুকাল থাকতে পাব । কিন্তু বাড়ির ও পাড়ার সবাই বললে পাগলটাকে আর বাড়ি রেখে দরকার নেই, ওকে জলেজঙ্গলে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আয় । সত্যি কথা বলতে গেলে বাবার উপর আমাদের কারুর আর মমতা ছিল না । বাবার চেহারাও হয়ে উঠেছে অদ্ভূত। একমাথা লম্ব চুল জট পাকিয়ে গিয়েছে—আগে আগে মা নাইয়ে দিতেন, আজকাল বাবা কিছুতেই নাইতে চান না, কাছে যেতে দেন না, কাপড় ছাড়েন না.গায়ের গন্ধে ঘরে থাকা অসম্ভব । মা একদিনও রাত্রে ঘুমুতে পারেন না-বাবা কেবলই ফাই-ফরমাশ করেন—জল দাও পান দাও আর কেবলই বলেন খিদে পেয়েছে। কখনও বলেন চ ক’রে দাও । না পেলেই তিনি আরও ক্ষেপে ওঠেন—এক মা ছাড়া তখন আর কেউ সামলে রাখতে পারে ন—আমরা তখন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাই, মা বুঝিয়ে-মুজিয়ে শাস্ত করে চুপ করিয়ে রাখেন, নয়ত জোর করে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বাতাস করেন, পা টিপে দেন–কিন্তু তাতে বাবা সাময়িক চুপ করে থাকেন বটে, ঘুমোন না। পাগল হয়ে পৰ্য্যস্ত বোধ হয় একদিনও বাবার ঘুম হয় নি। নিজেও ঘুঘুবেন না ; কাউকে ঘুমুতেও দেবেন না— সারারাত চীৎকার, বকুনি, ইংরেজি বক্তৃত, গান—এই সব করবেন। সবাই বলে, ঘুমুলে নাকি বাবার রোগ সেয়ে যেত । শেষ পৰ্য্যম্ভ হয়ত মা মত দিয়েছিলেন, হয়ত বলেছিলেন,—তোমরা যা ভাল বোঝ করে। 髒 常