পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ 8న জ্যোৎস্না। পৌঁছুতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । কুঠীর মাঠে বেড়িয়ে এসে ন'দির সঙ্গে একটু বসে গল্প করি। শিউলি ফুলের মুবাসের সঙ্গে বনমরচে ফুলের গন্ধ মিশিয়ে জ্যোৎস্নারাত্রি মধুর করে তুলেচে শত অতীত স্থতির পুনরুদ্বোধনে। ফণি রায়ের পরিবারবর্গ থাকে বন্ধুদের বাড়ি। কতদিন পরে ওদের বাড়ি বসে চ খেলুম। তারপর গদা কামারের বাড়ি গিয়ে ইন্দু, গজন, অমূল্য কামার প্রভৃতির সঙ্গে গান করি ও শুনি । পরদিন সকালে হয়তো বনগা থেকে সবাই পিকনিক্‌ করতে আসবে। ন’দি ও বুড়ী পিসীমার সঙ্গে গল্প করি মামুদের দাওয়ায়। পরদিন সকালে এলো থোকা ও সুরেন । স্নান সেরে বনমরচে ফুলের সুগন্ধের মধ্যে রইলুম বসে কতক্ষণ। তারপর চলে আসি বনগা । শুক্রবার মন্মথদার আডড । আজ ফিরচি ঘাটশিলা থেকে এইমাত্র। গত রবিবারে আবার ধারাগিরি গিয়েছিলুম— মিতের ও আমরা। এবার pass-এর নীচে সেই খরস্রোতার খাদ থেকে কুলুকুলু নদীজলের সঙ্গীত আমাদের কানে মধু বর্ষণ করলে। বন্ত পিটুলিয়, শিউলি—আরও কত কি বন্ত ফুল ফুটেচে বনে। ধারাগিরি যাওয়ার পথে গ্রাম ঝর্ণার কাছে আমরা চা খাচ্চি বসে—এমন সময় কুটু আর সুরেশ সাইকেলে করে এসে যোগ দিলে আমাদের সঙ্গে । তারপর ধারাগিরি পৌছে কল্যাণী, মিতের বে ওরা চড়ালে খিচুড়ি—আমরা উঠলুম পাহাড়ে—মিতে ও আমি। ওপরের সেই দুরারোহ পথ ধরে আমরা গেলুম ধারাগিরির স্রোত ধরে আরও নিবিড় বনের মধ্যে। বড় বড় শাল, আম ও মোটা মোটা লতা—বন্ত বিহঙ্গের কাকলি এখানে অপূৰ্ব্ব। মিতে একমনে শুনতে লাগল। কত বন্ত কুমুমের সৌরভ—আর সৰ্ব্বোপরি অসীম নিস্তব্ধতা । সোরুঝর্ণায় শিখী-নৃত্য—জ্যোৎস্নারাত্রে শিলাখণ্ডে ময়ুর-ময়ুরীর নৃত্যের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। বনদেবীর বাস করেন এ বনে। এসে খিচুড়ি খাওয়ার পূৰ্ব্বে বর্ণায় স্নান সমাপন করি। তারপর খাওয়া সেরে গরুর গাড়িতে রওনা। আবার সেই ঘাটটা সন্ধ্যার ছায়ায় অতিক্রম করি। ঘন বন নীচে, হাতী তাড়াবার জন্তে স্থানে স্থানে গাছের ওপরে মাচা । ভাত রোধে খাচ্চে বনের মধ্যে । আমরা আগে আগে—মিতেদের গাড়ি পেছনে। মিতে সকলের পিছনে হেঁটে আসচে। কল্যাণীর সঙ্গে আমি আসচি। কুটু ও মুরেশ সাইকেলে সবার পেছনে। দ্বিতীয় ঝর্ণ পার হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ক্রমে নক্ষত্র উঠল—ছায়াপথ জন্ম জম্ করতে লাগল। এখানে ওখানে উল্কা খসে পড়তে লাগল। রাত ন’টায় আমরা বাড়ি ফিরে ওবেলার রায় খিচুড়ি খাই। উমা ও শান্তি এবার যায় নি । মধ্যে আবার ঘাটশিলা গিয়েছিলুম। সাদা পাথরের স্তুপটার ওপরে বসে কল্যাণীকে নিয়ে গল্প করেছিলুম জ্যোৎস্নারাত্রে। তবে এবার বিশেষ দূর কোথাও বেড়ানো হয় নি—মিতের সঙ্গে ফুলডুংরির নীচের বনটায় একদিন সন্ধ্যাবেল গিয়ে বসেছিলাম। গত সপ্তাহে গিয়েছিলুম বনগী, বাড়ি বদল করে আমরা গিয়েচি বিনয়দার শ্বশুর মুটু মুন্সেফ যে বাসায় থাকত—সেই বাসাটায়। কাল রাত্রে শৈলজার 'নন্দিনী’ বইখানা দেখে এলাম। বাঙালীর মনে যে কান্নার ফোয়ার যোগাতে পারবে, সেই হাততালি পাবে। এ ছবিখানাতেও অনেকদিন পরে পুনর্মিলনের প্যাচ কষে দর্শকের চোখে জল আনার যথেষ্ট সুব্যবস্থা। তবে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েচে ছবিখান, এটা বলতেই হবে । কথাবাৰ্ত্তাও স্বাভাবিক। মুকুতি ও আমি গিয়েছিলাম ‘রূপবাণী'তে, শৈলজা আমাদের ফাস্ট ক্লাসে বসিয়ে দিলে, গল্প করলে অনেকক্ষণ কাছে বসে। ছবি ভাঙলে