পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 8S পড়ল আমাকে বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলতে হবে। ওদের রান্নাবাড়ির উঠোনে, মেয়েরা সব রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে খানিকটা ভাবলাম কি বলব ? সেখানে একটা বাশের ঘেরা পাচিলের গায়ে ঠেসানো ছিল । সেইটের দিকে চেয়ে আমার মাথায় বুদ্ধি এসে গেল। ওই বাশের ঘেরাটা হবে যেন আমার স্ত্রী, আমি যেন চাকরি করে বাড়ি আসছি, হাতে অনেক জিনিসপত্র। ঘরে যেন সবে ঢুকেছি, এমন ভাব ক'রে বললাম—“ওগো কই, কোথায় গেলে, ফুলকপিগুলো নামিয়ে নাও না ? ছেলেটার জর আজ কেমন আছে ?" মেয়েরা সব হেসে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ল । আমার উৎসাহ গেল আরও বেড়ে । আমি বিরক্তির মুরে বললাম, "আঃ, ঐ তো তোমার দোষ ! কুইনিন দেওয়া আজ খুব উচিত ছিল । তোমার দোষেই ওর অসুখ যাচ্ছেন্ন। খেতে দিয়েছ কি ?” আমার স্ত্রী অপ্রতিভ হয়ে খুব নরম মুরে কি একটা জবাব দিতেই রাগ পড়ে গেল আমার । বললাম—“ওই পুটলিটা খোলে, তোমার একজোড় কাপড় আছে আর একটা তরল আলতা—", মেয়ের আবার খিল খিল করে হেসে উঠল । e বীরুর ছোট বৌদিদি মুখে কাপড় গুজে হাসতে লাগলো। আমি বললাম—“ইয়ে করে, আগে হাত-পা ধোয়ার জল দিয়ে একটু চায়ের জল চড়াও দিকি ? সেই কখন ট্রেনে উঠেচি —বাকুনির চোটে আর এই দু-কোশ হেঁটে খিদে পেয়ে গিয়েছে—আর সেই সঙ্গে একটু হালুয়া—কাগজের ঠোঙা খুলে দেখে কিশমিশ এনেছি কিনে, বেশ ভাল কাবুলী—” বীরুর কাকীমা তো ডাক ছেড়ে হেসে উঠলেন । বীরুর মা বললেন—“ছোড়া পাগল ! কেমন সব বলচে দেখ, মাগো মা, উঃ-—আর হেসে পারিনে " বীরুর ছোট বৌদিদির দম বন্ধ হয়ে যাবে বোধ হয় হাসতে হাসতে। বললে—“ও মা, আমি যাব কোথায়! ওর মনে মনে ওই সব শখ আছে, ওর ইচ্ছে ওর বিয়ে হয়, বেী নিয়ে অম্নি সংসার করে—উঃ মা রে!” সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে । আমি রান্নাঘরে বসে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করচি। রান্না এখনও শেষ হয় নি। আমি বললাম—"চিংড়ি মাছটা কেমন দেখলে, খুব পচেনি তো ? কালিয়াটায় ঝাল একটু বেশি করে দিও।” বীরুর কাকীমা বললেন, “হারে তুই কি কেবল খাওয়া-দাওয়ার কথা বলবি বৌয়ের সঙ্গে ?" কিন্তু আর কি ধরনের কথা বলব খুঁজে পাইনে। ভাবলাম খানিকক্ষণ, আর কি কথা বলা উচিত? আমি এই ধরনের কথা সকলকে বলতে শুনেছি স্ত্রীর কাছে। ভেবে ভেবে বললাম— “খুকীর জন্তে জামাটা আনবে, কাল ওর গায়ের মাপ দিও তো। আর জিজ্ঞেস করে কি রঙ ওর পছন্দ—ন, না-এখন আর ঘুম ভাঙিয়ে জিজ্ঞেস করবার দরকার নেই, ছেলেমানুষ ঘুমুচ্ছে, থাক। কাল সকালেই—” খুব গভীর মুখে এ-কথা বলতেই মেয়ের আবার হেসে উঠল দেখে আমি ভারি খুশি হয়ে উঠলাম। আরও বাহাদুরি নেবার ইচ্ছায় উৎসাহের স্বরে বললাম— "আমি নেপালী নাচ জানি—চা-বাগানে থাকতে আমি দেখে দেখে শিখেছি।" মেয়েরা সবাই বলে উঠলে, “তাও জানিস নাকি ? বা রে 1 তা তো তুই বলিস নি কোনো দিন ? দেখি—দেখি—” - “কিন্তু আর একজন লোক দরকার যে ? আমার সঙ্গে আর কে আসবে ? সীতা থাকলে ভাল হ’ত । সেও জানে। আপনাদের বীণা কোথায় গেল ? সে হলেও হয়।” এ কথায় মেয়ের কেন যে এত হেসে উঠল হঠাৎ, তা আমি বুঝতে পারলাম না। বীণা