পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• 8૭ বিভূতি-রচনাবলী স্বান করবে, সকলেই মুক্তি পাবে ? শিব বললেন, তা নয় পাৰ্ব্বতী। চলো তোমায় দেখাব। * দুজনে কাশীতে এলেন মণিকণিকার ঘাটে। শিব বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের শব সেজে ঘাটের ধারে পড়ে রইলেন। পাৰ্ব্বতী তার স্ত্রী সেজে পাশে বসে কাদতে লাগলেন। যারা এল, তাদের বললেন আমার বৃদ্ধ স্বামী মারা গিয়েচেন, এর সৎকার করার ব্যবস্থা আপনার করুন। কিন্তু একটা মুশকিল আছে, শব যিনি স্পর্শ করবেন, তার সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হওয়া চাই, নইলে শবম্পর্শেই মৃত্যু ঘটবে। এ-কথা শুনে সাহস ক’রে কেউ এগোয় না। সবাই ভাবে পাপ তে কতই করেচি। প্রাণ দিতে যাবে কে ? সারাদিন কাটলো । সন্ধ্যা নামে-নামে। একজন চণ্ডাল ঘাটের ধারে অশ্রুমুখী ব্রাহ্মণপত্নীকে দেখে কি হয়েচে জিজ্ঞাসা করলে। পাৰ্ব্বতী সকলকে যা বলে এসেচেন তাকেও তাই বললেন । চণ্ডাল শুনে ভেবে বললে—তার জন্য ভাবনা কি মা ? অাজ গঙ্গাস্নান করলে তো নিষ্পাপ হবোই, এত বড় যোগ যখন, এ জন্ম তো দূরের কথা শত জন্মের পাপ ক্ষয় হয়ে যাবে পাজিতে লিখেচে । তা দাড়ান, আমি ডুবট দিয়ে আসি এবং একটু পরেই ডুব দিয়ে উঠে এসে বললে—ম ধরুন ওদিক, আমি পায়ের দিকটা ধরচি–চলুন নিয়ে যাই । শিব নিজমূৰ্ত্তি ধারণ করে চণ্ডালকে বর দিলেন। পাৰ্ব্বতীকে বললেন—পাৰ্ব্বতী দেখলে ? এই লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে এই লোকটি মাত্র আজকার যোগের ফল লাভ করবে। মুক্তি যদি কেউ পায় এই চণ্ডালই পাবে। গল্পটা আমার ভারি ভাল লাগল। সে-দিনকার চৈতন্যচরিতামৃতে পড়া সেই কথাটা মনে পড়ল—জ্যাঠাইমাকে বলেছিলাম, জ্যাঠাইমা বিশ্বাস করেন নি। ওঁদের শাস্ত্রের কথাতেই ওঁর বিশ্বাস নেই। অথচ মুখে হিন্দুয়ানি তো খুব দেখান! আর আমাকে, মাকে, সীতাকে, দাদাকে বলেন খিরিস্টান । আজকার গুরুদেবের এই গল্পটা কি জ্যাঠাইমা কাকীমার বুঝতে পারলেন ? চণ্ডালের ওপর আমার ভক্তি হ’ল । আমি যেন মনে মনে কাশী চলে গিয়েচি, আমি যেন মণিকণিকার ঘাটে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণবেশী শিব ও ক্ৰন্দনরতা পাৰ্ব্বতীকে প্রত্যক্ষ করেচি। ও-বছর বড়দিনের সময় মিশনারী মেমেরা আমাদের রঙীন কার্ড দিয়েছিল, ছোট একথান। ছবিওয়াল বই দিয়েছিল । তাতে একটি কথা সোনার জলে বড় বড় ক’রে লেখা আছে মনে পড়ল—তাহার। ধন্ত যাহার। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছে। কারণ তাহারা জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে। তার পরদিন সন্ধ্যাবেলাতেও গুরুদেব আমলকীতলায় আসন পেতে বসে গল্প বলছিলেন ছেলেমেয়েদের । একবার উঠে আহ্নিক করতে গেলেন, আবার এসে বসলেন । মেয়েরাও এলেন । কথা বলতে বলতে হঠাৎ আমার দিকে আঙুল দিয়ে বললেন—ও ছেলেটি কে ? রোজ রোজ দেখি দাড়িয়ে থাকে। এস, এল বাবা, এদিকে এস । প্রথমটা আমার বড় লজ্জা হ’ল কিন্তু কেমন একটা আননাও হ’ল। একটু এগিয়ে গেলাম। জ্যাঠাইমা বললেন–ও আমার এক খুড়তুতে দেওরের ছেলে। ওরা এখানে থাকতো না, চাবাগানে ওর বাবা কাজ করতো। এখানে এসে অসুখ হয়ে মারা গেল ; আর তো কেউ নেই, ওরা এ বাড়িতে থাকে । r গুরুদেব বললেন—এল দেখি বাবা, হাতটা দেখি, সরে এস । তারপর জ্যাঠাইমাদের দিকে চেয়ে বললেন—খুব লক্ষণযুক্ত ছেলে । এর বয়স কত ?