পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 8ጫ আমার লক্ষণযুক্ত বলতে—বিশেষতঃ অত ছেলের মাঝ থেকে—জ্যাঠাইমা কাকীমার নিশ্চয়ই খুব খুশি হননি। জ্যাঠাইমা প্রমাণ করবার চেষ্টা করলেন আমার বয়স নাকি পনেরো বছর—আমি ওঁর ছেলে হাবুর চেয়েও দেড় বছরের বড়। আসলে আমার বয়স তেরোজ্যাঠাইমার বড় ছেলে হাবুকে আমরা হাবুদ বলে ডাকি, সে আমাদের সবার চেয়ে দু-বছরের বড়। স্কুলে তার বয়েস লেখানো আছে, তাই ধরে বলচি । তারপর গুরুদেব আমার জিজ্ঞেস করলেন—কি পড় বাবা ? আমি কোন ক্লাসে পড়ি বললাম। ধাতুরূপ কতদূর পড়েচ ? লুঙ, লিট্‌ বোঝ । এই শোনো একটি শ্লোক— সোধ্যৈষ্ঠ বেদাংস্লিদশানযষ্ট পিতৃনতাঙ্গাৎ সমমংস্তে বন্ধুন বাজৈষ্ঠ ষড়বর্গমরংস্তনীতে সমূলঘাতংন্তবধীদরীংশ্চ । হেসে বললেন—কত রকম ধাতুর ব্যবহার দেখেচ ? এ হল ভটিকাব্যের শ্লোক। আমার বেশ ভাল লাগলো, গুরুদেবকেও এবং তার শ্লোককেও । আমি এর আগে সংস্কৃত শ্লোক বেশি শুনিনি। চা-বাগানে কেউ বলতেন। শ্লোকটা আমি মুখস্থ ক’রে নিলাম। একদিন তিনি বাড়ির পাশের মাঠে শুকনো পাতা দিয়ে আগুন জেলেচেন । আমায় দেখে বললেন—এসে জিতু— আমি বললাম—কি করবেন আগুন জেলে ?• • • —তামাক পোড়াবো— আমি বললাম, আমি পুড়িয়ে দিচ্চি। গুরুদেব অনেক সংস্কৃত শ্লোক আমাকে শোনালেন । কুবেরের শাপে এক যক্ষ গৃহ থেকে বহুদূরে কোন পৰ্ব্বতে নিৰ্বাসিত হয়েছিল, বাড়ির জন্তে ভেবে ভেবে তার হাতের সোনার বালা ঢল হয়ে গিয়েছিল, তারপর আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে সেই পাহাড়ের মাথায় বর্ষার নতুন কালে মেঘ নামল—এই রকম একট, শ্লোকের মানে । আমি তো সংস্কৃত পড়ি মোটে ঋজুপাঠ, কিন্তু আমাকেই তিনি আগ্রহের সঙ্গে এমনি ভাল ভাল অনেক শ্লোক শোনাতে লাগলেন—যেন আমি কত বুঝি ! এবার মনে হ’ল আমার নিজের কথা যা কাউকে কখনও বলিনি এ পর্য্যন্ত—তার কাছে খুলে বলি, আমার মনের সন্দেহ, আমার ঐসব অদ্ভুত জিনিস দেখার ব্যাপার, জ্যাঠাইমাদের সঙ্গে আচার-ব্যবহার নিয়ে আমার মত না মেলা,—সকলের ওপর ঠাকুরদেবতা সম্বন্ধে আমার অবিশ্বাস—এসব খুলে বলে তিনি কি বলেন শুনি। তার ওপর এমন একটা শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল আমার ! যেন মনে হ’ল এর কাছে বললে ইনি সব বুঝিয়ে দিতে পারবেন আমাকে । এত বড় লোক ইনি, এত পণ্ডিত, কত কথা জানেন । কিন্তু সুবিধে হ’ল না। বলি-বলি করেও বলতে আমার কেমন লজ্জা হ'ল । তিন দিন এমনি কেটে গেল, তারপর তিনি চলে গেলেন । আমার কিন্তু বলতে পারলেই ভাল হত। একজন ভাল লোককে আমার সব কথা বলা দরকার। অথচ এখানে তেমন কোন লোককে আমি বিশ্বাস করিনে—কারুর ওপর আমার ভক্তি হয় না । আমি আজকাল নির্জনে বসলেই অদ্ভুত সব জিনিস দেখি। যখন তখন, তার সময় নেই