পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 9 বিভূতি-রচনাবলী টেমির মিটমিটে অস্পষ্ট আলোয় রাতদুপুরে তার সেই অদ্ভুত সারা গায়ে, মুখে, মাথায় তুলোমাথা মূৰ্ত্তি বার বার মনে আসতে লাগল—আমার মনে সে রাত্রি, সে-মূৰ্ত্তি চিরদিনের জন্ত আঁকা হয়ে আছে । ঐ রকম কি আমারও হবে! মাকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে রইলাম সারারাত | মনে মনে কতবার আকুল আগ্রহে প্রার্থনা করলাম—প্রভূ যীশু, তুমি দেবতা, তুমি আমার এ রোগ সারিয়ে দাও, আমায় পাগল হতে দিও না । আমায় বঁচাও”। সকালে একটু বেলায় রোদ উঠলে পানী মারা গেল । জ্যাঠাইমা সকলে উঠে বোঁদের কুটনো কুটবার উপদেশ দেবেন, কি কি রান্না হবে তা ঠিক ক’রে দেবেন –এ বাড়িতে ভাগ্নে-বেী ছাড়া কেউ গাই দুইতে পারে না—এদিকের কাজ সেরে জ্যাঠাইম। তাকে সঙ্গে নিয়ে গেম্বুলে নিজের চোথের সামনে দুধ দেয়াবেন— গীত৷ বলে, পাছে ভাগ্নে-বে নিজের ছেলেমেয়েদের জন্তে কিছু সরিয়ে রাখে বোধ হয় এই ভয়ে। তারপর তিনি স্নান ক’রে গরদের কাপড় পরে ঠাকুরঘরে ঢুকবেন—সেখানে আহ্নিক চলবে বেলা এগারোটা পৰ্য্যন্ত, সে-সময়ে ঠাকুরঘরের দোরে কারুর গিয়ে উকি দেবার পর্যন্ত হুকুম নেই। সবাই বলে জ্যাঠাইমা বড় পুণ্যবতী । পুণ্যবতীই তো ! একদিন যে-ছবি দেখেছিলাম, ভুলিনি কোনদিন । জ্যাঠাইমা ঠাকুরঘর থেকে বার হয়ে এসে বারান্দায় দাড়িয়েচেন, পরনে গরদের শাড়ী, কপালে সি দুর, চন্দনের টিপ, টকটকে চেহারা—এমন সময় আমার মা একরাশ বাসি কাপড় নিয়ে গোবরছড়ার বালতি হাতে পুকুরের ঘাটে যাচ্চেন, পরনের ময়লা কাপড়ের জায়গায় জায়গায় কাদা গোবরের ছাপ, রুক্ষ চুল ; বেলা বারোটার কম নয় ; সকাল থেকে মার মুখে এক ফোটা জল পড়েনি— জ্যাঠাইম ডেকে বললেন—বে, রান্নাঘরের ছোট জালার জল কি কাল তুমি তুলেছিলে ? আমি না কতবার তোমায় বারণ করেচি ছোট জালায় তুমি জল ঢালবে না? বড় জালায় বেশী না পার তো তিন কলসী ক'রে ঢেলেও তে| বেগার শোধ দিলে পার ? ছোট জালার জল জ্যাঠামশায়, জ্যাঠাইমা বা কাকার খান। জ্যাঠাইমার এ কথা বলার উদ্বেগু এই যে, ম গুরুমন্ত্র নেননি, মায়ের হাতের জল অতএব শুদ্ধ নয়, সে জল ওঁরা খাবেন কি ক’রে ? সত্যিই তো জ্যাঠাইমা পুণ্যবতী। নইলে তিনি ঠাকুরঘরে পবিত্র দেহে পবিত্র মনে এতক্ষণ জপ-আহ্নিক করছিলেন, আর মা মরছিলেন বেলা বারোটা পৰ্য্যন্ত গোয়াল-আস্তাকুড় ঘেটে— মা নাস্তিক মাতাল কেরানীর স্ত্রী, তার ওপর আবার মেমের কাছে লেখাপড়া শিখে জাত খুইয়েচেন, কেন ওঁরা জল খেতে যাবেন মার হাতের ? আমার মনে হ’ল ঠাকুরও শুধু বড়মানুষের, পুণ্যও বড়মানুষের জন্তে–মইলে মায়ের, ভাগ্নেবোঁয়ের, ভুবনের মায়ের সময় কোথায় তারা নিশ্চিন্ত মনে, শুচি হয়ে, গরদ পরে তার পায়ে ফুলতুলসী দেবে ? বোধ হয় এই সব নান কারণে জ্যাঠাইমাদের বাড়ির গৃহদেবতার প্রতি আমি অনেকটা চেষ্টা করেও কোনো ভক্তি আনতে পারতাম না। এক-একবার ভেবেচি হয়ত সেটা আমারই দোষ, আমার শিক্ষা হয়েসে অন্তভাবে, অন্ত ধর্মাবলম্বী লোকেদের মধ্যে, তাদের কাছে যে দয়া মমতা পেয়েছি, আর কোথাও তা পাইনি বলেই । ছেলেবেলা থেকে যীশুখৃষ্ট্রের কথা পড়ে আসচি, তার করুণার কথা শুনেচি, তার কত ছবি দেখেচি। আমার কাছে একখানা ছবি