পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

á之 বিভূতি-রচনাবলী আমার ঠাকুর শুধু কেন, তোমার ঠাকুর সবারই ঠাকুর— বলতে বলতে দর দর করে তার চোখে জল পড়তে লাগল । আমি অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু একটু পরে বনমালীর কান্নার বেগ থামলে গর্বের মুরে বললাম—খুব গোপনীয় কথা বললাম ওকে—কারও কাছে এ পর্য্যন্ত মুখ ফুটে কথাটা বলিনি। বললাম—আমার ঠাকুর অন্য কেউ নয়, আমার ঠাকুর যীশুখ্ৰীষ্ট—আমার কাছেও ছবি আছে— - বনমালী ই ক'রে আমার দিকে চেয়ে রইল—তারপর অপ্রতিভভাবে বললে—ও তোমরা খৃষ্টান ? : আমি চুপ ক’রে রইলাম। বনমালী ভেবে বললে—র্তার কাছে সব সমান— আমি বললাম—কার কাছে ? —শ্ৰীহরির কাছে ভাই, আবার কার কাছে ? তার কাছে কি আর হিন্দু, মোছলমান, খৃষ্টান আছে ? তিনি যে পতিতপাবন—অধমের ঠাকুর— আমার মনে ব্যথা লাগল এই ভেবে, বনমালী আমাকে অধম মনে করেচে। যীশুখৃষ্টকে ও ছোট করতে চায় । আমি বললাম—যীশুর কাছেও সব সমান । পাপীদের জন্যে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন–জান ? মথিলিখিত সুসমাচারে লিখেচে, যে তাহাতে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন— মথি-লিখিত মুসমাচারের বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। বনমালী কিন্তু সংস্কৃতে শ্ৰীকৃষ্ণের ধ্যান আবৃত্তি করে আমায় শ্ৰীকৃষ্ণের রূপ বুঝিয়ে দিলে—আরও অনেক কথা বললে । আমি দু-তিন দিন তার কাছে গেলাম, তার ঠাকুর সম্বন্ধে শুনবার জন্তে । জ্যাঠাইমাদের বাড়ির সকলের চেয়ে ও বেশী জানে ওদের ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে—এ আমার মনে হ’ল । কিন্তু বনমালী আমার খ্ৰীষ্টভক্তি ভাল চোখে দেখলে না, বললে—হিন্দু হয়ে ভাই এ তোমার ভারি অদ্ভুত কাও যে তুমি অপরের দেবতাকে ভক্তি করো। গীতায় বলেচে, স্বধৰ্ম্মে নিধনং শ্ৰেয়ঃ পরধৰ্ম্মে ভয়াবহ:—অর্থাৎ নিজের ধৰ্ম্মে— আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম, হিন্দু আমি কখনই না। আমরা যেখানে যে-অবস্থায় মানুষ হয়েচি সেখানে হিন্দুধর্মের কথা কিছু শুনিনি কোনো দিন ; কেউ বলত না । যা বলত, তাই শুনেচি, তাই বিশ্বাস করেচি—ত মনে লেগেচে । এতে আমার কি কোনো দোষ হয়েচে ভাই ? সেদিন সন্ধ্যার সময় আমাদের দালানে আমি বসে পড়চি, এমন সময় কার পায়ের শব্দ শুনে চেয়ে দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম—ছোটকাকীমা দাড়িয়ে 1 ছোটকাকীমা বড়মানুষের মেয়ে, তিনি তো কস্মিনকালে আমাদের ভাঙা দালানে পা দেননি-বিশেষ করে আমাদের জু-চোখে তিনি দেখতে পারেন না কোনো কালে—বরং মেজকাকীমা সময়ে অসময়ে নরম হন, ছোট কাকীমার মুখে মিষ্টি কথা কোনো দিন শুনিওনি। আমাদের ঘরে আর কেউ নেই— দাদা এখনও ফেরেনি—সীতা ও মা জ্যাঠাইমাদের অন্দরে । আমি দাড়িয়ে উঠে থতমত থেয়ে বললাম—কি কাকীমা ? ছোটকাকীমা এদিক-ওদিক চেয়ে নীচু স্বরে বললেন—তোর সঙ্গে কথা আছে জিতু। আমি বললাম—কি বলুন ?