পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ○○ কাকীমা বললেন—পানী যে-রাতে মারা যায়, সেদিন তুই আমার কি বলছিলি মনে আছে ? আমার ভয় হ’ল,—বললাম—না, কাকীমা । ছোটকাকীমা হঠাৎ আমার হাত দুটো তার দু'হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন—বল বাবা জিতু, সেদিন তোর কথা সবাই উড়িয়ে দিয়েছিল, আমি কিন্তু তারপর সব বুঝেছিলাম, কাউকে বলিনি। পানী ছেড়ে গিয়ে আমায় পাগল ক'রে রেখে গিয়েচে–তুই বল জিতু। আমার মাকে তুই দেখেছিলি সে রাত্রে, তিনি পানীকে ভালবাসতেন, তাই নিতে এসেছিলেন—মরে গিয়েও র্তার পানীর কথা— আমি জানতাম না যে পানীর দিদিম মারা গিয়েচেন । আমি বিস্ময়ের মুরে, জিজ্ঞেস করলাম—আপনার মা বেঁচে নেই ? —না, পানী তার কাছ থেকে ফাঙ্কন মাসে এল, তিনি অষাঢ় মাসে তো মারা গেলেন । তুই পানীকে দেখতে পাস জিতু ? তোকে সেদিন সবাই পাগল বললে, কিন্তু আমি তারপর ভেবে দেখলাম তোর কথার একটুও পাগলামি নয়—সব সত্যি । তুই আমার মাকে দেখতে পেয়েছিলি—সত্যি বল না জিতু বাবা, পানীকে দেথিস্ ? 鬱 আমার চোখেও জল এল । ছোট কাকীমাকে এত কাতর দেখিনি কখনও—তা ছাড়া পানীকে আমিও বড় ভালবাসতাম এ বাড়ির ছেলেমেয়েদের মধ্যে । বললাম—না কাকীমা, পানীকে আমি কোনো দিন দেখিনি—আপনার পা ছুয়ে বলতে পারি— ছোটকাকীমা আরও কি বলতে যাচ্ছিলেন, মেজকাকার গলার স্বর শুনে তিনি পালিয়ে গেলেন । ছোটকাকীমার কথা শুনে আমি কিন্তু আকাশ-পাতাল ভাবতে বসলাম । আমি সেদিন সত্যি সত্যি কাউকে দেখেছিলাম তবে ? সে যেই হোক, পানীর দিদিমাই হোক, মরাই হোক বা জীবন্তই হোক্ ! এটা তা হ’লে আমার রোগ নয় ? আর কেউ তবে দেখে না কেন ? কিংবা হয়ত ছোটকাকীমা মেয়ের শোকে বুদ্ধি হারিয়েছেন, কি বলচেন না বলচেন, উনিই জানেন না। ওঁর কথার উপর বিশ্বাস কি ? | や 間 জ্যাঠামশায়দের বাড়ি আরও বছর দুই কেটে গেল এই ভাবেই । যত বছর কেটে যায়, এদের এখানে থাকা আমার পক্ষে তত বেশি কঠিন হয়ে পড়তে লাগল। আমার বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে অনেক জিনিস আমি বুঝতে পারি আজকাল, আগে আগে অত বুঝতাম না। এ বাড়িতে থাক। আমার পক্ষে আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল এইজন্যে যে, আমি চেষ্টা করেও জ্যাঠাইমাদের ধর্ম ও আচারের সঙ্গে নিজেকে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পেরে উঠলাম না । এরা খুব ঘটা করে যেটা ধৰ্ম্ম বলে আচরণ করেন, আমার মনের সঙ্গে সেটা তো আদৌ মেলে না—আমি মনে যা বলি, বাইরে তাই করি—কিন্তু ওঁরা তাতে চটেন । ওঁদের ধর্থের যেটা আমার ভাল লাগে—সেটাকে ওঁরা ধৰ্ম্ম বলেন না । কিন্তু একটা ব্যাপার হয়েচে এই, আগে ভারতাম শুধু জ্যাঠাইমাদের বাড়িতেই বুঝি এই রকম, এখন বয়স বাড়বার সঙ্গে বুঝতে পেরেছি—এ গ্রামের অধিকাংশই এই রকম—জ্যাঠাই