পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ¢ፃ মুখে হাসি টিপে চোখ বুজে শুয়ে । 鱷 সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল। আমি লজ্জায় লাল হয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের বার হয়ে গেলাম। বা রে, এ কি কাণ্ড ওদের ? কেন আমায় নিয়ে এ রকম করা ? তা ছাড়া— ছিঃ–ন, ওকি কাও 1 ছোটবৌঠাকুরুন স্বেচ্ছায় এ ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছেন নিশ্চয় । আমার রাগ হ’ল তার ওপরে। এর দিন-দুই পরে আমি আমার নিজের ঘরে এক বসে আছি, এমন সময় হঠাৎ ছোটবৌঠাকরুনকে দোরের কাছে দেখে অবাক হয়ে গেলাম—তিনি আমার ঘরে কখনও আসেননি এ পর্য্যন্ত । কিন্তু তিনি যেমনি এলেন, তেমনি চলে গেলেন, একটু দাড়ালেন না, যাবার আগে ঘরের মধ্যে কি একটা ফেলে দিয়ে গেলেন । 戰 আমি বিস্মিত হয়ে তুলে দেখলাম একখানা ভাজ করা ছোট কাগজ—একখানা চিঠি ! ছোট চিঠি, দু-কথায়— "সেদিন যা ক’রে ফেলেচি, সেজন্য আপনার কাছে মাপ চাই । আমি নিজের ইচ্ছেতে কিছু করিনি। দলে পড়ে করেচি, ক’দিন ধরে ভাবচি আপনার কাছে মাপ চাইব—কিন্তু লজ্জায় পারিনি ! আমি জানি আপনার মন অনেক বড়, আপনি ক্ষমা করবেন।" পত্রে কোন নাম নেই। আমি সেখান বার বার পড়লাম--তারপর টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললাম—কিন্তু টুকরোগুলো ফেলে দিতে গিয়ে কি ভেবে আমার একটা ছোট মনিব্যাগ ছিল, তার মধ্যে রেখে দিলাম । সেদিন থেকে আমার কি হ’ল, আমি একা থাকলেই ছোটবৌঠাকরুনের কথা ভাবি ৷ কিছুতেই মন থেকে আমি তার চিন্তা ছাড়াতে পারিনে । দু-পাচদিন ক’রে হপাথনেক কেটে গেল । আমি বাড়ির মধ্যে তেমন আর যাইনে—অত্যন্ত ভয়, পাছে এক আছি এমন অবস্থায় ছোটবৌঠাকুরুনের সঙ্গে দেখা হয়ে পড়ে । ছোটবৌয়ের রান্নার পালার দিন আমি সকাল সকাল খেয়ে নি, যখন অনেক লোক রান্নাঘরে থাকে। যা যখন দরকার হয়, শৈলদি কি সেজদির কাছে চাই—ওদের গলা না শুনতে পেলে বাড়ির মধ্যে যেতে সাহস হয় না । সেজদি একদিন বললেন,—জিতু, তুমি কলেজ থেকে এসে খাবার খাওয়া ছেড়ে দিলে নাকি ? বিকেলে তো বাড়ির মধ্যে থাকই না, আসই না, কোথাও থেকে খেয়ে আস বুঝি ? আমি জানি বিকেলের চা-খাবার প্রায়ই ছোটবেী তৈরি করেন—আর সে সময় বড় একটা কেউ সেখানে থাকে না । যে যার থেয়ে চলে যায়। ইচ্ছা ক’রেই বিকেলে চ খেতে যাই নে। পয়সা যেদিন থাকে, স্টেশনের দোকান থেকে খেয়ে আসি । শীত কেটে গেল, বসন্ত যায়-যায় । আমার ঘরে জানলার ধারে বসে পড়চি, হঠাৎ জানলার পাশের দরজা দিয়ে ছোটবৌঠাকুরুন কোথা থেকে বেড়িয়ে এসে বাড়ি ঢুকচেন, সঙ্গে শৈলদির ছেলে কালো। তিনি আমায় দেখতে পাননি। আমি অপলকে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলাম র্তার দিকে। তাকে যেন নতুন রূপে দেখলাম—আরো কতবার দেখেচি, কিন্তু আজ দেখে মনে হ’ল এ-চোখে আর কখনও দেখিনি তাকে । তার কপালের অমন মুনীর গড়ন, পাশের দিক থেকে তার মুখ যে অমন মুত্র দেখায়, ভুরুর ও চোখের অমন ভঙ্গি—এসব আগে তো লক্ষ্য করিনি ? যখন কেউ দেখে না, তখন তার মুখের কি অদ্ভুত ধরনের ভাব হয় । তিনি বাড়ির মধ্যে ঢুকে যেতেই আমার চমক ভাঙলো। বই খুলে রেখে দিলাম—পড়ার আর মন