পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbア বিভূতি-রচনাবলী বলল না, সম্পূর্ণ অষ্টমনস্ক হয়ে গেলাম। কি একটা কষ্ট হতে লাগল বুকের মধ্যে—যেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আটকে আসচে। মনে হ’ল চুপ করে বসে থাকতে পারব না, এক্ষুনি ছুটে মুক্ত বাতাসে বেরুতে হবে । সেই রাত্রে আমি তাকে চিঠি লিখতে বসলাম—চিঠি লিখে ছিড়ে ফেললাম। আমার লিখে আবার ছিড়লাম। সেদিন থেকে র্তাকে উদ্দেশ ক’রে চিঠি লেখা যেন আমার কলেজের টাস্কের সামিল হয়ে দাড়লো—কিন্তু লিখি আর ছিড়ে ফেলি । - দিন-পনের পরে ঠিক করলাম, আজ চিঠি দেবই । সেদিন বেলা দেড়টার মধ্যে কলেজ থেকে ফিরে এলাম—গ্রীষ্মের দুপুর, সবাই ঘুমুচ্চে। আমি বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম, সিড়ির পাশে দোতলায় তঁর ঘর, তিনি ঘরে বসে সেলাই করছিলেন—আমি সাহস করে ঘরে ঢুকে চিঠি দিতে পারলাম না, চলে আসছিলাম, এমন সময় তিনি মুখ তুলেই আমায় দেখতে পেলেন, আমি লজ্জায় ও ভয়ে অভিভূত হয়ে সেখান থেকে সরে গেলাম, ছুটে নীচে এলাম—পত্র দেওয়া হ'ল না ; সাহসই হ'ল না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথে পথে উল্লাস্তের মত ঘুরে বেড়ালাম লক্ষ্যহীন ভাবে । সারাদিন ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে অনেক রাত্রে বাড়ি যখন ফিরি, রাত তখন বারোট। বাড়িতে আবার সেদিন লক্ষ্মীপূজা ছিল । খেতে গিয়ে দেখি রান্নাঘরের সামনের বারনায় আমার খাবার ঢাকা আছে, শৈলদি চুলচেন রান্নাঘরের চৌকাঠে বসে। মনে মনে অনুতাপ হ’ল, সারা বিকেল খাটুনির পরে শৈলদি বেচারী কোথায় একটু ঘুমুবে, আর আমি কি ন। এভাবে বসিয়ে রেখেচি ! আমাকে দেথে শৈলদি বললে—বেশ, কোথায় ছিলি এতক্ষণ ? কথার উত্তর দিতে গেলে মুশকিল, চুপচাপ খেতে বসলাম—শৈলদি বললে—ন থেয়ে চন্‌ ঢন করে বেড়িয়ে বেড়িয়ে কণ্ঠার হাড় বেরিয়ে গিয়েচে । চা থেতেও আসিস নে বাড়ির মধ্যে, কালোকে দিয়ে বাইরের ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিলেও পাওয়া যায় না-থাকিস্ কোথায় ? খানিকক্ষণ পরে পাতের দিকে চেয়ে বললে—ও কি, ভাল ক'রে ভাত মাখ। ঐ ক’টি খেয়ে মানুষ বচে ভাই ? তোরা এখন ছেলেমানুষ, খাবার বয়স। লুচি আছে ভোগের, দেবো ? পায়েস তুই ভালবাসিস, এক বাটি পায়েস আলাদা করা আছে। কষ্ট মাছের মুড়ে ফেললি কেন, চুষে চুষে খা । আহা, কি ছিরি হচ্ছে চেহারার ! পরদিন কিসের ছুটি । আমি দোতলার ছাদে কালোকে ডাকতে গিয়েচি তার প্রাইভেট টিউটর নীচে পড়তে এসেচে বলে । সন্ধার অন্ধকার হয়েছে । ওপরে উঠেই আমি একেবারে ছোটবৌঠাক্রুনের সামনে পড়ে গেলাম। র্তার কোলে মেজদির দেড় বছরের খুকী মিন্ট –সে খুব ফুটফুটে ফসর্ণ বলে বাড়ির সকলের প্রিয়, সবাই তাকে কোলে পাবার জন্তে ব্যগ্র । ছোটবৌঠাকরুন হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালেন খুকীকে কোলে ক’রে । আমি বিস্মিত হ’লাম, কপালে ঘাম দেখা দিল । খুকী আমায় চেনে, সে আমার কোলে বাঁপিয়ে আসতে চায় । ছোটবৌঠাকুরুন আমার আরও কাছে এগিয়ে এসে দাড়ালেন—খুকীকে আমার কোলে দিলেন। তার পায়ের আঙুল আমার পায়ের আঙুলে ঠেকল । আমি তথন লাল হয়ে উঠেচি, শরীর যেন ঝিম্ ঝিম্ করচে। কেউ কোন দিকে নেই। ছোটবৌঠাকরুন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে মুর নিচু করে বললেন—আপনি আর বাড়ির মধ্যে আসেন না কেন আজকাল ? অামার ওপর রাগ এখনও যায়নি ? আমি অতি কষ্ট্রে বললাম—রাগ করব কেন ?