পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૦ বিভূতি-রচনাবলী ম} চিঠি লিখেছেন, দেখবার জন্ত ব্যস্ত হয়েচেন । আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে হয় না শুধু জ্যাঠাইমাদের ব্যবহারের জন্ত । গেলেই মায়ের দুঃখ দেখতে হবে। দাদা এক বাতাসার কারখানায় চাকরি পেয়েচে, মাসে কিছু টাকা অতি কষ্টে পাঠায় । সীতা বড় হয়ে উঠল— তারই বা কি করা যায় ? দাদা একাই বা কি করবে ! পিকারিং সাহেব আমার হাতে গীতা দেখে একদিন বললেন—তুমি এসব পড় নাকি ? বাইবেল কি তোমার সকল আধ্যাত্মিক অভাব পূর্ণ করে না ? - আমি বললাম—পড়ে দেখতে কি দোষ আছে সাহেব ? তাছাড়া আমি তো খৃষ্টান নই, আমি এখনও হিন্দু। — নৌকাতে পা দেওয়া যায় না, মাই বয়। তুমি খৃষ্টান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হও—নয়তো তুমি বাইবেল পড় কেন ? —সাহেব, যদি বলি ইংরেজী ভাষা ভাল ক'রে শেখবার জন্তে ? পিকারিং সাহেব হে হে ক’রে হেসে উঠল । বললে—তোমার আত্মার পরিত্রাণ তার চেয়েও বেশি দরকারী । যীশুতে বিশ্বাস না করলে আত্মার ত্রাণ নেই । তিনি আমাদের সকলের পাপের ভর নিজে নিয়ে ক্রুশের নিষ্ঠুর মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যীশুর ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হও, তোমার পাপ তার রক্তে ধুয়ে যাবে। এস, আমার সঙ্গে গান কর। তারপর সাহেব নিজেই গান ধরল – Nothing but the Blood of Jesus Oh, precious is the flow. That can make me white as snow, No othor fount I know Nothing but the Blood of Jesus, পিকারিং সাহেবকে আমার খুব ভাল লাগে । খুব সরল, ধৰ্ম্মপ্রাণ লোক। স্ত্রী মারা গিয়েচে আজ দশ-বারো বছর, আর বিয়ে করেনি,—টেবিলের ওপর নিকেলের ফ্রেমে বাধানে৷ স্ত্রীর ফটো সৰ্ব্বদা থাকে। মাঝে মাঝে আমায় জিজ্ঞেস করে—আমার স্ত্রী দেখতে কেমন ছিল, ভাল না? ফটো দেখে মিসেস পিকারিংকে সুন্দরী মনে হয়নি আমার, তবু বলি খুব চমৎকার । পিকারিং সাহেবের ধৰ্ম্মমত আমার কাছে কিন্তু অনুদার ঠেকে—কিছুদিন এদের সঙ্গে থেকে আমার মনে হয় জ্যাঠাইমারা যেমন গোড়া হিন্দু—খৃষ্টানদের মধ্যেও তেমনি গোড় খৃষ্টান আছে । এরা নিজের ধৰ্ম্মটি ছাড়া আর কারুর ধৰ্ম্ম ভাল দেখে না। এদের সমাজে সংকীর্ণতা আছে –এদেরও আচার আছে—বিশেষতঃ একটা নির্দিষ্ট ধরনে ঈশ্বরের উপাসনা না করলে উপাসনা ব্যর্থ হ’ল এদের মতে । একখানা কি বইয়ে একবার অনন্ত নরকের গল্প পড়লাম । শেষবিচারের দিন পর্য্যন্ত পাপীরা সেই অনন্ত নরকের অনন্ত আগুনের মধ্যে জলবে পুড়বে, খৃষ্টধৰ্ম্মে দীক্ষিত হবার আগেই যদি কোন শিশু মারা যায়—তাদের আত্মাও যাবে অনন্ত নরকে । এসব কথা প্রথম যেদিন শুনেছিলাম, আমাকে ভয়ানক ভাবিয়ে তুলেছিল। তারপর মনে হ’ল, কেন যীশু কি এতই নিষ্ঠুর ? তিনি পরিত্রাণের দেবতা, তিনি সকল পাপীকেই কেন পরিত্রণ করবেন না ? যে র্তাকে জানে, যে তাকে না জানে—সবাইকে সমান চোথে তিনি কেন না দেখবেন ? তার কাছে খৃষ্টান ও অধৃষ্টানে প্রভেদ থাকবে কেন ? বরং যে অজ্ঞানান্ধ তার প্রতি তার অনুকম্পা বেশী হবে—আমার মনের সঙ্গে এই খৃষ্টের ছবি খাপ খায় । তিনি