পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ لانا প্রেমময় মুক্ত মহাপুরুষ, তার কাছেও ধর্মের দলাদলি থাকে কখনো ? যে দেশের, যে ধৰ্ম্মের, যে জাতিরই হোক তিনি সবারই—যে তাকে জানে, তিনি তার, যে না জানে, তিনি তারও। একদিন গঙ্গার ধারে বেঞ্চির ওপরে বসে জনকতক লোক গল্প করচে—শুনলাম বরানগরে কুঠির ঘাটের কাছে একটা বাগান-বাড়িতে একজন বড় সাধু এসেচেন, সবাই দেথতে যাচ্চে । দু-এক দিনের মধ্যে একটা ছুটি পড়ল, বেলুড়ে নেমে গঙ্গা পার হয়ে কুঠির ঘাটের বাগানবাড়ি খোজ করে বার করলাম। বাগান-বাড়িতে লোকে লোকারণ্য, সকলেই সাধুজীর শিস্য, মেয়েরাও আছে। ফটকেব কাছে একজন দাড়িওয়ালা লোক দাড়িরেছিল, আমি ফটকের কাছে গিয়ে আমার আসার উদ্দেশ্য বলতেই লোকটা দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধ'রে বললে —ভাই, এস এস, তোমাকে নেওয়ার জন্তেই যে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি। আমি পছন্দ করিনে যে কেউ আমার গলা জড়িয়ে ধরে—আমি ভদ্রভাবে গলা ছাড়িয়ে নিলাম। লোকটা আমায় বাগানের মধ্যে নিয়ে গেল। আমি কৌতুহল ও আগ্রহের সঙ্গে চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। বা-দিকের রোয়াকে একদল মেয়ে বসে একরাশ তরকারি কুটছে—একটা বড় গামলায় প্রায় দশ সের ময়দা মাখা হচ্চে,—যেদিকে চাই, খাওয়ার আয়োজন । 創 —সাধুর দেখা পাবো এখন ? —তিনি এখন ধ্যান করচেন । তার প্রধান শিষ্য জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী ও-ঘরে আছেন, চল ভাই তোমায় নিয়ে যাই । কথা বলচি এমন সময় একজন ভদ্রলোক এলেন, সঙ্গে একটি মহিলা—ফটকের কাছে তারা মোটর থেকে নামলেন । একজন বালক-শিষ্যকে ভদ্রলোকটি কি জিজ্ঞেস করলেন—সে তাদের সঙ্গে ক’রে নিয়ে এল আমার সঙ্গের দাড়িওয়ালা লোকটির কাছে । ভদ্রলেকটি তাকে বললেন —স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে এসেচি, তিনি কোথায় ? —কোথা থেকে আসচেন আপনারা ? —ভবানীপুর, এলগিন রোড থেকে । আমার নাম বিনয়ভূষণ মল্লিক। দাড়িওয়ালা লোকটির শরীরের ইস্ক্রপ কজা যেন সব ঢিলে হয়ে গেল হঠাৎ—সে তিন ভাগে ভেঙে হাত কচলে বললে—আজে আসুন, আমুন, বুঝতে পেরেচি, আমুন । এই সিড়ি দিয়ে আমুন—আসুন মা-লক্ষ্মী— আমি বিস্মিত হলাম। এই যে বললে সাধুজী ধ্যানে বসেচেন—তবে ওঁরা গেলেন যে ! লোকটি ওঁদের ওপরে দিয়ে আবার নেমে এল । আমার একটা হলঘরে নিয়ে গেল । সেখানে জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলে । জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারীর পরনে গেরুয়া আলখাল্লা, রং ফসর্ণ—আমার সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার করলেন । তিনি আপিসের কাজে দেড়শো টাকা মাইনে পেতেন—ছেড়ে স্বামীজীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। স্বামীজী বলেচেন তিনি তিনটে মহাদেশ উদ্ধার করবেন, সাধনার সিদ্ধিলাভ করলেই বেরিয়ে পড়বেন সে উদ্দেশ্যে । স্বামীজীর দেওয়া মন্ত্র জপ করে তিনি অভূত ফল পেয়েচেন নিজে—এই সব গল্প সমবেত দশকের কাছে করছিলেন । আমি কৌতুহলের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম—কি ফল পেরেচেন মন্ত্রের ? তিনি বললেন—মন্ত্র জপ করতে করতে মনে হয় যেন কোথায় পাহাড়ের উপরে বসে আছি। স্বামীজী বলেন—এ একটা উচ্চ অবস্থা । আমি আরও আগ্রহের মুরে বললাম—আর কিছু দেখেন ? তিনি বললেন, জ্যোতিঃদর্শন হয় মাঝে মাঝে। —সে কি রকম ?