পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ Vو¢ দরকার থাকে, তবে আলাদা-করা হারের জন্ত কুড়িট টাকা তোলা আছে—তাই থেকে নিয়ে যা, দেবো এখন। হার এর পর দেখব –সাত-পাচ ভেবে টাকা নেওয়াই ঠিক করলাম । শৈলদির ওপর বড় জুলুম করা হয়, নইলে শৈলদিকে মনে হয় না যে সে পর। এত আপনার মত ক'জন আপনার লোকই বা দেখে ? মায়ের পরেই শৈলদিকে ভক্তি করি। সে লুকিয়ে টাকা দিয়েচে—তাকে আর বিপন্ন করবো না । যে দাদা সকাল আটটার কমে বিছানা থেকে উঠত না, তাকে ভোর পাচটার সময় উঠে কারখানায় গিয়ে কাজে লাগতে হয় । আমিও দাদার সঙ্গে গেলাম । কারখানার মালিকের নাম মতিলাল দাস, বয়েস পঞ্চাশের ওপর, তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী আছে সংসারে, আর দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়ে । দাদা মতিলালের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রীকে মাসীমা বলে ডাকে । মতিলাল আমায় দেখে বললে—তুমি নিতাই ঠাকুরের ভাই ? বেশ, বেশ । আজকাল কি বই পড়ায় তোমাদের ? তার প্রশ্ন শুনে আমার হাসি পেল । আমি জবাব দেবার আগেই মতিলাল বললে— আমাদের সময়ে যে-সব বই পড়ানো হ’ত, আজকাল কি আর সে-সব বই আছে ? এই ধর পদ্যপাঠ, তৃতীয় ভাগ, যদুবাবুর । আহা ! কুজপৃষ্ঠ স্থ্যজদেহ উষ্ট্র সারি সারি কি আশ্চৰ্য্য শোভাময় যাই বলিহারি কি সব শব্দ লাগিয়েচে দেখেচ একবার। ভাষার জ্ঞান হ’ত কত পড়লে ! বলো দিকি স্থ্যজদেহ মানে কি ? আমাদের হরিশ পণ্ডিত পড়াত কালনার স্কুলে, আমি তখন ছাত্রবৃত্তি পড়ি। তখন ছাত্রবৃত্তি পড়লে মোক্তার হ’ত, দারোগা হ’ত। এখন হয়েচে তো সব ছেলেখেলা ৷ আমি এসেছি শুনে মতিলালের স্ত্রী দুপুরে খেতে বললে । আমায় দেখে বললে—এস বাবা, তুমি নিতাইয়ের ভাই ? তুমিও মাসীমা বলে ডেকে। কাছে দাড়িয়ে থেকে মালীম দাদাকে রান্না দেখিয়ে দিতে লাগল, কারণ আমরা খেতে চাইলেও ওরা রোধে আমাদের খেতে দেবে কেন ? মাসীম সংসারে নিতান্ত এক মতিলালের ও-পক্ষের ছেলেমেয়েরা বাপের তৃতীয় পক্ষের পরিবারকে দু-চোখ পেড়ে দেখতে পারে না, বা এখানে থাকেও না কেউ । অথচ মাসীমার ইচ্ছে তাদের নিয়ে মিলেমিশে সংসার করা। আমরা খেতে বসলে কত দুঃখ করতে লাগল। —এই দ্যাখো বাবা, কেষ্টকে বলি বৌমাকে নিয়ে এখানে এস, এসে দিব্যি থাক । বৌমাটি বড় চমৎকার হয়েচে । তা যদি আসে । সেই নিয়ে রেখেচে শ্বশুরবাড়ি, কালনার কাছে দাইহাট—সেখানেই থাকে। আমার নিজের পেটে তো হ’ল না কিছু, ওরাই আমার সব—ত এমুখো হয় না কেউ। বড় মেয়ে দুটি শ্বশুরবাড়ি আছে, আনতে পাঠালে বলে, সৎমায়ের আর অত আত্যিস্থয়ো দেখাতে হবে না । শোন কথা। আমার মা বলে কেউ ডাকেও না । ডাকলে তাদের মান যাবে। মাসীমাকে খুশী করবার জন্তে আমি কারণে-অকারণে খুব ‘মাসীম মাসীমা’ বলে ডাকতে লাগলাম। আমাদের পাতে আবার মালীম খেতে বসলেন, বললেন—ব্রাহ্মণের পেরসাদ পাবো, ওতে কি আর ছোট বড় আছে বাবা ? আমার মনে অস্বস্তি হ’ল ; আমি তো এদের এসব মানিনে, ব্রাহ্মণের ধৰ্ম্ম পালন করিনে, সে কথা তো ইনি জানেন না। অথচ খুলে বললে মাসীমার মনে কষ্ট দেওয়া হবে হরত। বি. র. ৪–৫