পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ولانا দাদার কাছ থেকে আটঘরায় এলাম। আসবার সময় সীতার জন্তে ভাল সাবান কিনে নিয়ে এলাম, বই পড়তে ভালবাসে বলে দু-তিনখান বাংলা বইও আনলাম। সীতা বড় হয়ে উঠেচে-মাথায় খুব লম্বা হয়েচে, দেখতে সুন্দর হয়েচে আরও । আমার হাত থেকে সাবান নিয়ে হেসে বললে—দেখি দাদা কেমন সাবান আমার একখানাও আস্ত সাবান ছিল না। একখানা সানলাইট সাবান আনিয়েছিলুম বাজার থেকে—সে আধখানা হয়ে গিয়েচে । সীতার সে পুরোনো অভ্যাস এখনও আছে, কথা বলতে বলতে হঠাৎ খোপায় হাত দিয়ে দেখে ঠিক আছে কি-না। লম্বা ঢেঙা, চওড়া নক্সা-পাড় কাপড় পরনে, খোপার ধরনও সেকেলে । আজকাল শহরে দেখে এসেচি ও-রকম খোপা উঠে গিয়েচে । ও-ধরনের কাপড় পরলে সেখানে লোকে হাসবে, বেচারী সীতা । লেখাপড়া শেখবার, বই পড়বার ওর কত আগ্রহ ! অথচ এই পাড়াগায়ে পরের বাড়ি দাসীবৃত্তি ক’রেই ওর জীবন কাটল । না হ’ল লেখাপড়া শেখ, না মিটল কোন সাধ। অথচ ওর বুদ্ধি ছিল এত চমৎকার, মিশনারী মেয়েরা কত প্রশংসা করত, ওকে কি ভালই বাসত মিস নর্টন । কিন্তু কি হ’ল ওর ? এখন, সেই কত কাল আগেকার পুরোনো বইগুলোই পড়চে, কিছুই শেখেনি, কিছুই দেখেনি। সীতা বললে—দাদা পাস করেচ ? —পাসের খবর এখনও বেরোয় নি। পাস করবে। ঠিকই । —পাস হলে আমার জানিও দাদা । আমি তোমাকে একটা জিনিস প্রাইজ দেবো । —কি জিনিস রে ? —একটা মনিব্যাগ বুনাচ লাল উলের । তোমার জন্তে একট, বড়দার জন্তে একটা । তোমাদের নাম লিখে দেবো । মিস নর্টন আমাদের দিত কত কি প্রাইজ—না ? —মিস নর্টনকে তোর মনে আছে সীতা ? তুই তো তখন খুব ছোট । —খুব মনে আছে, তার দেওয়া জিনিস আমার বাক্সে এখনও রয়েচে। দেখলেই তাদের কথা মনে পড়ে । জ্যাঠামশায় আমায় ডেকে বললেন–জিতু শোনো। এখন তুমি বড় হয়েচ, তোমার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করাই ভাল । সীতার বিয়ে না দিলে নয় । ওর পনের-ষোল বছর হ’ল, আর ঘরে রাখা যায় না । কিন্তু এদিকে টাকাকড়ি খরচ করবে কে ? হাজার টাকার কমে আজকাল ভদ্রলোকের ঘরের বিয়ের কথাই তোলা যায় না। দেখে এসেচ তো শহর-বাজারে ? তা আমি এক জায়গায় ঠিক করেচি ; পাত্রটির বাপ আমার এখানে এসেছিল। জমিজমা আছে, চাষা গেরস্ত, খেতে পরতে কষ্ট পাবে না। আখের চাষই আছে অমন বিশ-বাইশ বিঘে । পাত্রটি চাষবাস দেখে, রং একটু কালো—ত হোক, পুরুষ মানুষের রঙে কি আসে যায়, তবে বংশ ভাল, কামদেব পণ্ডিতের সন্তান, সবে তিন পুরুষে ভঙ্গ, আমাদেরই স্বঘর। আমি বললাম—লেখাপড় কতদূর করেচে ? —লেখাপড়া কি আর এম-এ, বি-এ পাস করেচে ? তবে বাংলা ছাত্রবৃত্তি পৰ্য্যন্ত পড়েচে, দিব্যি হাতের লেখা। হ্য, একটা কথা ভুলে যাচ্ছি,—অল্পদিন হ’ল পাত্রটির প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েচে—তবে সে কিছু নয়, বয়েস কমই। একটি বুঝি ছেলে আছে ওপক্ষের । ছাত্রবৃত্তির কথায় আমার মতিলালের উটের কবিতাটি মনে পড়ল। আমি বললাম—আচ্ছা আমি ভেবে বলব জ্যাঠামশাই । লেখাপড়া জানে না আর তাতে দোজবরে, এতে বিয়ে দেওয়া আমার মন সরে না। সীতার মত মেয়ে, আপনি বলুন না জ্যাঠামশাই ?