পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী مواوينا , দুপুরে সীতার সম্বন্ধে মাকে বললাম। মায়ের ইচ্ছে নয় ওখানে সীতার বিয়ে দেওয়া, তবে মা নিরুপায়, এ বাড়িতে র্তার কোন কথা খাটে না। আমি বললাম—আমি কোথাও চাকরি খুজে নিই মা। সীতার বিয়ে নিজে থেকে দেব। মা বললেন—শোন কথা ছেলের। তুই লেখা-পড়া ছেড়ে এখন করবি কি ? তোদের মুখের দিকে চেয়ে এখানে কষ্ট করে পড়ে থাকি। নিতুর তো কিছু হ’ল না, তুই বি-এটা পাস করু। সীতার কপালে যা থাকে হবে । তুই এখন চাকরিতে কত টাকা পাবি যে সীতার বিয়ে দিবি নিজে ? মাঝে পড়ে তোর পড়াটা হবে না। আর শোন, এ নিয়ে কোন কথা যেন বলিস নে কারুর সঙ্গে । তোর জ্যাঠাইমা শুনতে পেলে রক্ষে রাখবে না । মা এত ভয় করেও চলেন ওদের | প্রথম জীবনে কোন কষ্ট পান নি, তারপর চা-বাগান থেকে এসে দুঃখের মধ্যে পড়ে গিয়ে এমন ভীতু হয়ে উঠেচেন। সদাই ওঁর ভয় থাকে জ্যাঠাইমা ওঁদের দু-জনকে এ বাড়িতে জায়গা দিতে না চাইলে, আমার লেখাপড়া না হয়, সীতার বিয়ে নিয়ে দাদা জড়িয়ে পড়ে—এই সব । সীতাকে জলে ফেলে দিতে পারব না, মা যাই বলুন। জ্যাঠামশায়দের বাড়িতে বেশীক্ষণ আমার থাকলে স্থাপ লাগে। গায়ের বাইরে নির্জন মাঠে গিয়ে বসে ভাবি সীতার সম্বন্ধে কি করা যায়। কিন্তু হঠাৎ কেমন ক’রে অন্ত চিন্তা এসে পড়ে। এই রৌদ্রালোকিত দুপুরে এক বসলেই তার কথা আমার মনে পড়ে। মন থেকে দূর করতে পারি নে। প্যালেস্টাইনের উষর, পর্বতময় মরুদেশের রৌদ্র—সারা গায়ে ঘাম ঝরচে তার, রোদে মুখ রাঙা, নিজের ভারী ক্রুশটা নিজেই বয়ে চলেছেন বধ্যভূমিতে । পিছনের অন্ধ জনতা জানে না যে ঝড়ে গ্যালিলির সমুদ্রের নোনা জলে দুকুল ছাপিয়ে মাঝে মাঝে যে তরঙ্গ ওঠায়, তাও তুচ্ছ হয়ে যাবে সে বৃহত্তর তুফানের কাছে, আজকার দিনটি জগতে যে তুফান তুলবে। তারা জানে না যে মানুষের মনে ব্যথা না দেওয়ার চেয়ে বড় আচার নেই, প্রেমের চেয়ে বড় ধৰ্ম্ম নেই। র্তার আবির্ভাব কে ব্যর্থ করবে —ঐ বজ্ৰ-বিদ্যুতের মত শক্তিমান তার বাণী । বিষ্ণুর সুদৰ্শন যে শক্তির প্রতীক । নিত্যকালের দেবত র্তার, দেশের অতীত, কালের অতীত, সকল দেশের, সকল অবতারের স্বগোত্র । তারপর আমি যেন কোথায় চলে গিয়েচি । সেখানে নদী, মাঠ, বন সবই আছে, কিন্তু সবই যেন ঝাড়লন্ঠনের কাচের পরকলার মধ্যে দিয়ে দেখচি। রাত কি দিন বুঝতে পারলাম না, মাথার ওপরকার আকাশে তারা নেই। অথচ সুর্যও দেখলাম না আকাশে । আমি যেন সেখানে বেশ সহজ অবস্থাতেই আছি। একটু পরেই মনে হ’ল সে জায়গাটাতে আমি অনেক বার গিয়েচি, নতুন নয়, ছেলেবেলা থেকে কতবার গিয়েচি। একটা বাড়ি আছে সেখানে, বাড়িতে যারা আছে তারা আমার সঙ্গে গল্প করে, কত কথা বলে—স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যেন মনে হয় তারা আমার খুব পরিচিত। কতবার তাদের দেখেচি । সেখানে গেলেই আমার মনে পড়ে যায় সেখানকার পথ-ঘাট, ওইখানে মাঠের মধ্যে একটা পুরোনো বাড়ি আছে, ওরও পাশে সেই বনটা । সেখানে যেমনি যাই, মজা এই যে অমনি মনে হয় এ তো নতুন নয়, সেই যে একবার ছেলেবেলায় চা-বাগানে থাকতে এসেছিলাম ! কিন্তু সে দেশটা যেন অন্ত রকম, যখন সেখানে থাকি তখন স্বালবিক মনে হ'লেও, পরে মনে হয় সেটা এই পৃথিবীর মত নয়। সেখানে আমি কতক্ষণ ছিলাম জানি নHউঠে দেখি গাছে ঠেস দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু এত ঘুম ঘুমিয়েচি—উঠে চোখ মুছে চারিদিকে চেয়ে দেখি প্রায় সন্ধ্য হয়ে এসেচে। কেবল এইটুকু আমার মনে ছিল, স্বপ্নের দেশে কাকে যেন জিজ্ঞেস করেছিলুম—