পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊՀ বিভূতি-রচনাবলী থেকে আপীলের কেস আনচেন । মেজবাবু মামলা-মোকদমা নাকি খুব ভাল বোঝেন, কুঞ্জ নায়েব সেদিন বলছিল। অপরে কি ক'রে ধৰ্ম্মহিষ্ঠান করে, তারা কি মানে, কি বিশ্বাস করে, এসব দেখে বেড়াতে আমার বড় ভাল লাগে । একদিন হাওড়া পুলের ওপারে হেঁটে অনেক দূর বেড়াতে গেলুম। এক জায়গায় একটা ছোট মন্দির, জায়গাটা পাড়াগা-মত, অনেক মেয়েরা জড় হয়েচে, কি পূজো হচ্চে। আমি মন্দির দেখে সেখানে দাড়িয়ে গেলাম-দেবতার স্থানে পূজা-অৰ্চনা হতে দেখলে আমার বড় কৌতুহল হয় দেখবার ও জানবার জন্তে । একটা বড় বটগাছের তলায় ছোট মন্দিরট, বটের ঝুরি ও শেকড়ের দৃঢ় বন্ধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা—মন্দিরের মধ্যে সিঁদুর-মাখানে গোল গোল পাথর, ছোট একটা পেতলের মূৰ্ত্তিও আছে। শুনলাম ষষ্ঠদেবীর মূৰ্ত্তি। বাড়ি থেকে মেয়ের নৈবিন্তি সাজিয়ে এনেচে, পুরুত ঠাকুর পুজো করে সকলকে ফুলবেলপাত নিৰ্ম্মাল্য দিলেন— ছেলেমেয়েদের মাথায় শাস্তিজল ছিটিয়ে দিলেন । সবাই সাধ্যানুসারে কিছু কিছু দক্ষিণ দিলে পুরুত ঠাকুরকে, তারপর নিজের নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে, নৈবিদ্যির খালি থালা হাতে সবাই বাড়ি চলে গেল। কাছেই একটা পুকুর, পুরুত ঠাকুর আমার হাতেও দুখান বাতাসা ও ফুলবেলপাতা দিয়েছিলেন—বাতাসা দুখান খেয়ে পুকুরে জল খেলাম—ফুলবেলপাত পকেটে রেখে দিলাম। ছোট গ্রামখানা—দূরে রেলের লাইন, ভাঙা পুকুরের ঘাটটা নির্জন, চারিধারেই বড় বড় গাছে ঘেরা–শাস্ত, স্তন্ধ অপরাহ্ল-অনেক দিন পরে এই পূজোর ব্যাপারট, বিশেষ ক'রে মেয়েদের মুখে একটা ভক্তির ভাব, পূজোর মধ্যে একটা অনাড়ম্বর সারল্য আমার ভাল লাগল। হাওড়া-পুল পার হয়েচি, এক জায়গায় একজন ভিখারিণী আধ-অন্ধকারের মধ্যে চেচিয়ে কার সঙ্গে ঝগড়া করচে আর র্কাদচে । কাছে গিয়ে দেখলাম ভিখারিণী অন্ধ, বেশ ফসর্ণ রং, হিন্দুস্থানী—বুদ্ধ না হ'লেও প্রৌঢ় বটে। তার সামনে একখানা ময়লা স্তাকড়া পাতা— সেটাতে একটা পয়সাও নেই—গোটা-দুই টিনের কালো তোবড়া মগ, একটা ময়লা পুটুলি, একটা ভাড়—এই নিয়ে তার কারবার। সে একটা সাত-আট বছরের মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করচে–হিন্দীতে বলচে–তুই অমন ক’রে মারবি কেন ? তোকে আমি ভিক্ষে ক'রে থাইয়ে এত বড়টা করলাম আর তুই আমাকেই মার দিতে শুরু করলি—আমার কপাল পোড়া, নইলে নিজের পেটের সস্তান এমন বদ হবে কেন ? দ্যাথ দেখি কি দিয়ে মারলি, কপালটা কেটে গেছে— মেয়েটা হি-হি ক’রে হাসচে এবং কৌতুকের সঙ্গে রাস্তা থেকে ধুলো বালি খোয়া কুড়িয়ে ছুড়ে ছুড়ে মাকে মারছে। আমি মেয়েটাকে একটা কড়া ধমক দিয়ে বললাম—ফের মাকে যদি আমন করবি, তবে পুলিসে ধরিয়ে দেবো। পকেটে হাত দিয়ে দেখি, আনা যাতেক পয়সা আছে—সেগুলো সব তার ময়লা নেকৃড়াখানায় রেখে দিয়ে বললুম—তুমি কেঁদে না বাছা—আমি কাল এসে তোমায় আরও পয়সা দেবো । তোমার মেয়ে আর মারবে না। যদি মারে তো বলে দিও, কাল আমি দেখে নেবে।-- এমন ছন্নছাড়া করুণ দুরবস্থার রূপ জীবনে কোনদিন দেখিনি। পরদিন হাওড়া-পুলে গিয়েছিলাম কিন্তু সেদিন বা আর কোনদিন সেই অন্ধ ভিখারিণীর দেখা পাইনি। তাকে কত খুজেছি, ভগবান জানেন। প্রতিদিন শোবার আগে তার কথা আমার মনে হয়। মনে মনে বলি, আটঘরার বটতলায় তোমায় প্রথম দেখেছিলুম ঠাকুর, তোমার মুখে অত