পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ዓJ) করুণা মাখানে, মানুষকে এত কষ্ট দাও কেন ? তা হবে না, তার ভাল করতেই হবে তোমায়, তোমার আশীৰ্ব্বাদের পুণ্যধারায় তার সকল দুখ ধুয়ে ফেলতে হবে তোমাকে। এর মধ্যে একদিন কালীঘাটের মন্দিরে গেলুম। সেদিন বেজায় ভিড়—কি একটা তিথি উপলক্ষে মেলা যাত্রী এসেচে। মেয়েরা পিষে যাচ্ছে ভিড়ের মধ্যে, অথচ কেউ এদের সুবিধে-অসুবিধে দেখবার নেই। আমার সামনেই একটি তরুণী বধূ হোচট খেয়ে পড়ে গেল—আমি একজন প্রৌঢ়া বিধবাকে বললাম—গেল, গেল, ও মেয়েটির হাত ধরে তুলুন– কাদামাখা কাপড়ে বন্ধটি দিশাহারা ভাবে উঠে দাঁড়াল, আমি তার সঙ্গের লোকদের খোজ নিয়ে ভিড়ের ভেতর থেকে অতিকষ্টে খুজে বার করলাম—ভিড়ের দ্বারা চালিত হয়ে তারা অনেক দূর গিয়ে পড়েছিল। এত করেও অনেকেরই দেবদর্শন ঘটল না, পাণ্ডারা সকলকে মন্দিরে ঢুকতে দিচ্ছে না শুনলুম, কেন তা জানিনে। মেয়েদের দুঃখ দেখে আমার নিজের ঠাকুর দেখার ইচ্ছে আর রইল না। আষাঢ় মাসের শেষ দিন। বৈকালের দিকটা মেজবাৰু মোটরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, বেলা পাচটার সময় ফিরে এসে আমার হিসেবের খাতা দেখাতে ডেকে পাঠালেন। রোজ তিনি দুপুরের পরে আপিসে বসে থাত সই করেন, আজ তিনি ছিলেন না। মেজবাবুকে খাতা দেখানে বড় মুশকিলের ব্যাপার, আবার মেজবাবুকে আমার একটু ভয় হয়, তার ওপয়ে তিনি প্রত্যেক খরচের খুঁটিনাটি কৈফিয়ত চাইবেন। খাতা দেখতে দেখতে মুখ না তুলেই বললেন—তামাকওয়ালার ভাউচার কোথায় ? আমি বললাম—তামাকওয়ালা ভাউচার দেয়নি। খুচরো দোকান—ওরা ভাউচার রাখে না— মেজবাবু ভ্ৰ কুঁচকে বললেন—কেন, নবীন মুহুরী তো ভাউচার আনতো ? র্তার মুখ দেখে মনে হ'ল তিনি আমার অবিশ্বাস করচেন। আমি জানি নবীন মুহুরী যেখানে ভাউচার মেলে না—মনিবকে বুঝিয়ে দেবার জন্তে সেখানে ভাউচার নিজেই বানাতো। আমি সে মিথ্যার আশ্রয় নিই না। বললাম—আপনি জেনে দেখবেন ওরা ভাউচার কখনো দেয় না। আমি এসে পৰ্য্যন্ত তো দেখছি— আমি যেখানে দাড়িয়ে কথা বলচি, তার সামনেই বড় জানালী—তার ঠিক ওপরে— মেজবাবুর অফিসের সামনাসামনি একটা শানবাধানে চাতাল। অন্দরমহলের একটা দোর দিয়ে চাতালটার আসা যায় বলে জানলায় প্রায়ই পরদা টাঙানো থাকে। আজ সেটা গোটানো ছিল । আমি একবার মুখ তুলতেই জানালা দিয়ে নজর পড়ল, অন্দরের দরজার কাছে দাড়িয়ে কাদের ছোট একটি খোক, নিতান্ত ছোট, বছর দুই বয়স হবে। বোধ হ'ল যেন দরজা খোলা না পেয়ে চুপ করে দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। আমি ভাবচি, বেশ খোকাটিতে, কাদের থোকা? এ বাড়িতে যতদূর জানি অত ছোট ছেলে কারুর তো নেই? এ ওখানে এল কার সঙ্গে? মেজবাবু বললেন—এদিকে মন দাও, ওদিকে কি দেখচ ? আমি বললাম—কাদের খোকা দাড়িয়ে রয়েচে ওখানে—আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম— ওই যে দাড়িয়ে রয়েচে চাতালের দরজায়, বাড়িতে ঢুকতে পাচ্চে না বোধ হয়। মেজবাবু সেদিকে চেয়ে বললেন—কই ? কোথায় কে ? ঠিক সেই সময় অন্দরের দরজা খুলে মেজবাবুর স্ত্রী (তাকে অনেকবার মোটরে উঠতে