পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8 বিভূতি-রচনাবলী নামতে দেখেচি ) বার হয়ে এলেন এবং খোকাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। মেজবাবু বললেন—কোথায় তোমার থোকা না কি ? আমি বিস্মিত হয়ে বললাম—বা রে, ওই তো উনি খোকাকে কোলে নিলেন । চোখ তুলে চাতালের দিকে চেয়ে মেজবাবুর স্ত্রীকে আর দেখতে পেলাম না, অন্দরের দরজাও বন্ধ, নিয়ে বোধ হয় বাড়ির মধ্যে চলে গিয়েচেন । মেজবাবু বললেন—কে নিয়ে গেলেন ? উনি মানে কি ? কি বকচ পাগলের মত ••• মেজবাবু আমার দিকে কেমন এক ধরনে চেয়ে রয়েছেন দেখলাম। আমি তার সে দৃষ্টির সামনে থতমত খেয়ে গেলাম—আমার মনে হ’ল মেজবাবু সন্দেহ করচেন আমার মাথা খারাপ আছে নাকি ? সঙ্গে সঙ্গে বিস্মিত হলুম একথা ভেবে যে এই ওঁর স্ত্রী দরজা খুলে এলেন, খোকাকে কোলে তুলে নিলেন, এই তো দিনমানে আর এই ত্রিশ হাতের মধ্যে চাতাল, এ উনি দেথতে পেলেন না কেন ? পরক্ষণেই চট করে আমার সন্দেহ হ’ল আমার সেই পুরানো রোগের ব্যাপার এর মধ্যে কিছু আছে নাকি ? এত সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে যে অন্ত কিছু আছে বা হতে পারে, এ এতক্ষণ অামার মনেই ওঠেনি। তা হ’লে কোন কথা কি বলতাম ? এক্ষুনি চাকুরি থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারে। বলতেই পারে, এর মাথা খারাপ, একে দিয়ে চলবে না। কিন্তু আমার বড় কৌতুহল হ'ল। সন্ধ্যার সময় মোহিনী ঝি আমার বারানার সামনে দিয়ে যাচ্চে, তাকে জিজ্ঞেস করলুম—শোন, আচ্ছা বাড়িতে দেড়-বছর দু'বছরের খোকা কার আছে বল তো ? কি বললে—এত ছোট থোকা তো কারুর নেই! সেইদিন রাত বারোটায় খুব হৈ-চৈ । মেজবাবুর স্ত্রীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন, লোক ছুটলো ডাক্তার আনতে। মেজবাবুর স্ত্রী যে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বা সন্ধ্যার পর থেকে পাস-করা ধাত্রী এসে বসে আছে এসব কথা তখন আমি শুনলাম। কারণ সবাই বলাবলি করচে। শেষরাত্রে শুনলাম তার একটি পুত্রসস্তান হয়েচে । মনে মনে বিস্মিত হ'লেও কারও কাছে এ নিয়ে আর কোন কথা বললাম না। নিজেই দেখি, অথচ নিজেই বুঝিনে এসবের মানে কি। চুপচাপ থাকাই আমার পক্ষে ভাল । এই ঘটনার পরে আমার ভয় হ'ল আমার সেই রোগ আবার আরম্ভ হবে । ও যখন আসে তখন উপরি-উপরি অনেকবার হয়—তার পর দিনকতকের জন্তে আবার একেবারেই বন্ধ থাকে। এইবার বেশী করে শুরু হলে আমার চাকুরি ঘুচে যাবে—সীতার কোন কিনারাই করতে পারব না। মেজবাবু হিসেবের খাতা লেখার কাজ দিলেন নবীন মুহুরীকে । তার ফলে আমার কাজ বেজায় বেড়ে গেল—ঘুরে ঘুরে এদের কাজে খিদিরপুর, বরানগর, কালীঘাট করতে হয়—আর দিনের মধ্যে সতের বার দোকানে বাজারে যেতে হয় চাকরকে সঙ্গে নিয়ে । খাওয়া-দাওয়ার নির্দিষ্ট সময় নেই, দিনে রাতে শুধু ছুটোছুটি কাজ। এই দোকানের হিসেব নবীন মুহুরীকে বুঝিয়ে দেওয়া একটা ঝঞ্চাট—রোজ সে আমাকে অপমান করে ছুতোয়-নাতায়, আমার কথা বিশ্বাস করে না, চাকরদের জিজ্ঞেস করে আড়ালে সত্যি সত্যি কি দরে জিনিসটা এনেচি। সীতার মুখ মনে ক’রে সবই সহ করে থাকি। কাত্তিক মাসে ওদের দেশের সেই মহোৎসব হবে—আমাদের সকলকে দেশে পাঠানে হ'ল। আমি অনেক আগে থেকেই শুনে আসচি—অত্যন্ত কৌতুহল ছিল দেখবো ওদের