পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ዓ¢ সাম্প্রদায়িক ধৰ্ম্মানুষ্ঠান কি রকম। o গ্রামে এদের প্রকাও বাড়ি, বাগান, দীঘি, এরাই গ্রামের জমিদার। তবে বছরে এই একবার ছাড়া আর কখনও দেশে আসেন না। কুঞ্জ নায়েব বাকী দশ মাস এখানকার মালিক । একটা খুব বড় ফাক মাঠে মেলা বসেচে—এখানকার দোকান-পসারই বেশী। অনেকগুলো খাবারের দোকান, মাটির খেলনার দোকান, মাছুরের দোকান। একটা বড় বটগাছের তলাটা বাধানে, সেটাই নাকি পীঠস্থান। লোকে এসে সেইখানে পুজো দেয়—আর বটগাছটার ডালে ও ঝুরিতে ইট বাধা ও লাল নীল নেকৃড়া বাধা। লোকে মানত করার সময় ওই সব গাছের গায়ে বেঁধে রেখে যায়, মানত শোধ দেওয়ার সময় এসে খুলে দিয়ে পূজো দেয়। বটতলার সারি সারি লোক ধর্ণ দিয়ে শুয়ে আছে, মেয়েদের ও পুরুষদের ধর্ণ দেওয়ার জায়গা আলাদা আলাদা। o বড়বাবু ও মেজবাবুতে মোহন্তের গদিতে বসেন—কৰ্ত্তা নীলাম্বর রায় আসেননি, তার শরীর সুস্থ নয়। এদের বেদীর ওপরে আশপাশে তাকিয়া, ফুল দিয়ে সাজানে!, সামনে ঝকঝকে প্রকাও রূপোর থালাতে দিন-রাত প্রণামী পড়চে। দুটে থালা আছে—একটাতে মোহন্তের নজর, আর একটাতে মানত ও পুজোর প্রণামী । so নবীন মুহুরী, বেচারাম ও আমার কাজ হচ্চে এই সব টাকাকড়ির হিসেব রাখা। এর আবার নানা রকম রেট বাধা আছে, যেমন—পাচ সিকার মানত থাকল গদীর নজর এক টাকা, তিন টাকার মানতে দুটাকা ইত্যাদি। কেউ কম না দেয় সেটা মুহুরীদের দেখে নিতে হবে, কারণ মোহন্তরা টাকাকড়ির সম্বন্ধে কথা বলবেন না । কাজের ফঁাকে আমি বেড়িয়ে দেখতে লাগলাম চারিধার। সবারই সঙ্গে মিশে এদের ধৰ্ম্মমতটা ভাল ক’রে বুঝবার আগ্রহে যাদের ভাল লাগে তাদেরই নানা কথা জিজ্ঞেস করি, আলাপ করে তাদের জীবনটা বুঝবার চেষ্টা করি। কি অদ্ভুত ধৰ্ম্মবিশ্বাস মানুষের তাই ভেবে অবাক হয়ে যাই। কতদূর থেকে যে লোক এসেচে পোটুলাপুটলি বেঁধে, ছেলেমেয়ে সঙ্গে নিরেও এসেচে অনেকে। এখানে থাকবার জায়গা নেই, বড় একটা মাঠে লোকে এখানে-ওখানে এই কাৰ্ত্তিক মাসের হিমে চট, শতরঞ্জি, হোগলা, মাছুর যে যা সংগ্রহ করতে পেরেছে তাই দিয়ে থাকবার জায়গা তৈরি করে তারই তলায় আছে —কেউ বা আছে শুধু গাছতলাতে। যে যেখানে পারে মাটি খুঁড়ে কি মাটির ঢেলা দিয়ে উন্থন বানিয়ে রান্না করচে। একটা সজনে-গাছতলায় এক বুড়ী রান্না করছিল—সে একাই এসেচে হুগলী জেলার কোন গা থেকে। তার এক নাতি হুগলীর এক উকিলের বাসার চাকর, তার ছুটি নেই, বুড়ী প্রতি বছর এক আসে। আমার বললে—বডড জাগ্রত ঠাকুর গো বটতলার গোসাই । মোর মালসি গাছে ক্যাটাল মোটে ধরতে নি, জালি পড়ে আর খসে খসে যার। তাই বয়, বাবার থানে ক্যাটাল দিয়ে আসবে, হে ঠাকুর র্ক্যাটাল যেন হয়। বললে না পেত্যয় যাবে ছোটর-বড়র এ-বছর সতেরো গগু এচড় ধরেচে গোসাইয়ের কিরূপায়। আর এক জায়গায় খেজুরডালের কুঁড়েতে একটি বোঁ বসে রাধচে। আর তার স্বামী কুঁড়ের বাইরে বসে খোল বাজিয়ে গান করচে। কাছে যেতেই বসতে বললে। তারা জাতে কৈবৰ্ত্ত, বাড়ি খুলনা জেলার, পুরুষটির বয়স বছর চল্লিশ হবে। তাদের ছোট্ট একটি ছেলে মায়ের কাছে বসে আছে, তারই মাথার চুল দিতে এসেচে। পুরুষটির নাম নিমৰ্চাদ মণ্ডল। স্বামী-স্ত্রী হু-জনেই বড় ভক্ত। নিমৰ্চাদ আমার হাতে