পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●● বিভূতি-রচনাবলী একখানা বই দিয়ে বললে—পড়ে শোনাও তো বাবু, দু-আনা দিয়ে মেলা থেকে কাল কেনলাম একখানা। বইখানার নাম ‘বটতলার কীৰ্ত্তন' । স্থানীয় ঠাকুরের মাহাত্ম্যসূচক তাতে অনেকগুলো ছড়া। বটতলার গোর্সাই ব্ৰহ্মার সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে এসে আস্তানা বেঁধেচেন, কলিরাজ ভয়ে তার সঙ্গে এই সন্ধি করলে যে বটতলার হাওয়া যত দূর যাবে ততদূর পর্য্যস্ত কলির অধিকার থাকবে না। বটতলার গোসাই পাপীর মুক্তিদাতা, সৰ্ব্ব জীবের আশ্রয়, সাক্ষাৎ শ্ৰীহরির একাদশ অবতার। কলিতে নতুন রূপ শুন মন দিয়া বটতলে স্থিতি হৈল ভক্তদল নিয়া খেদে কহে কলিরাজ, এ বড় বিষম কাজ মোর দশা কি হবে গোসাই ? ঠাকুর কহিলা হেলে, মনে না করিহ ক্লেশে থান ত্যজি কোথাও না যাই । শ্ৰীদাম মুবল সনে হেথায় আসিব বটমূলে বৃন্দাবন স্বষ্টি করি নিব। নিমৰ্চাদ শুনতে শুনতে ভক্তিগদগদকণ্ঠে বললে—আহা! আহা ! বাবার কত লীলাখেলা ! তার স্ত্রীও কুঁড়ের দোরগোড়ায় এসে বসে শুনচে । মানে বুঝলাম এরা নিজেরা পড়তে পারে না, বইপড়া শোনার আনন্দ এদের কাছে বড় নতুন, তা আবার যার ওরা ভক্ত, সেই বটতলার গোসাই সম্বন্ধে বই। নিমৰ্চাদ বললে—আচ্ছ, বটতলার হাওয়া কত দূর যায় দার্তাকুর ? —কেন বল তো ? –এই যে বলচে কলির অধিকার নেই ওর মধ্যি, তা কত দূর তাই শুধুচ্চি। —কত দূর আর, তা আধ ক্রোশ, বড়জোর— নিমৰ্চাদ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কি ভেবে বললে—কি করবো দ-ঠাকুর, দেশে লাঙল-গরু ক’রে ফেলেচি, কুড়ো-দুই জমিতে এবার বাগুন রুইয়ে রেখে এসেচি–নয়ত এ বাবার থান ত বিন্দাবন, আপনি পড়লেন—এ স্বগ গো ছেড়ে বিলির মোষের মত বিলি ফিরে যাই দ-ঠাকুর ? কি বলিস রে তুই, সরে আর না এদিকে, দাতাকুরকে লজ্জা কি, উনি তো ছেলেমানুষ । নিমৰ্চাদের স্ত্রী গলার স্বরকে খুব সংযত ও মিষ্টি করে, অপরিচিত পুরুষ মানুষের সামনে কথা বলতে গেলে মেয়েরা যেমন মুরে কথা বলে তেমনি ভাবে বললে—হঁ্যা ঠিকই তো। বাবার চরণের তলা ছেড়ে কোথাও কি যেতে ইচ্ছে ক’রে ? নিমৰ্চাদ বললে—দু-মণ কোষ্ট ছিল ঘরে, তা বলি বিক্ৰী ক'রে চল বাবার থানে বাবার ছিচরণ দর্শন করে আলি আর অমনি গঙ্গাছেনটাও সারবো। টাকা বাবা যোগাবেন, সেজন্ত ভাবিনে। ওরে শোন, কাল তুই তো ধরা দিবি সকালে, আজ রাতে ভাতে জল দিয়ে রেখে দিল— জিজ্ঞেস ক’রে জানলাম ছেলের অসুখের জন্তে ধর্ণ দেবার ইচ্ছে আছে ওদের। নিমৰ্চাদের বে বললে—বুঝলেন দাদাঠাকুর, খোকার মামা ওর মুখ দেখে তিনটে টাকা দিলে খোকার হাতে। তখন পয়সার বড় কষ্ট যাচ্চে, কোষ্টা তখন জলে, কাচলি তো পয়সা ঘরে আসবে ? তো বলি, না, এ টাকা খরচ করা হবে না। এ রইল তোলা বাবার থানের