পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ/ع অপু যে লেখক হবার চেষ্টায় আছে তার উল্লেখ অপরাজিতয় স্থানে স্থানে আছে, এবং সে ইচ্ছা যে তার শিশু-কালের থেকে তারও ইঙ্গিত আছে। অপরাজিতর নায়িকা লীলার খাতায় সে গল্প লিখত ; অপরাজিতর কাহিনী যার কথায় শেষ হয়েছে, সেই অন্ততম শৈশবসঙ্গিনী রানীর (রাদির) খাতায় শৈশবে লেখা আধখানা গল্প এখন শেষ করে দিয়ে তার হাতে পুত্রকে সমর্পণ করে অপু নিশ্চিন্ত হয়ে নিশ্চিন্দিপুর থেকে ছুটি নিচ্ছে। নিজের প্রথম লেখা বইখানি সম্বন্ধে অপরাজিতয় বিভূতিবাবু যা লিখেছেন তা উদ্ধৃত করছি । "বই লেখার কষ্টটুকু করার চেয়ে বই-এর কথা ভাবিতে ভাল লাগে। কাদের কথা বইএ লেখা থাকিবে ?-“কত লোকের কথা। গরীবদের কথা। ওদের কথা ছাড়া লিখিতে ইচ্ছা হয় না । পথে ঘাটে, হাটে, গ্রামে, শহরে, রেলে কত অদ্ভুত ধরণের লোকের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়াছে জীবনে—কত সাধুসন্ন্যাসী, দোকানী, মাস্টার, ভিখারী, গায়ক, পুতুল-নাচওয়ালা, আমপাড়ানি, ফেরীওয়ালা, লেখক, কবি, ছেলে-মেয়ে—এদের কথা।" ( २ ) যে মানুষ মাটির কাছাকাছি থেকে গাছপালার সঙ্গে সহসংবর্ধিত হয়, যাদের জীবনের সুখদুঃখের পালা রাত্ৰি-দিবার আলো-অন্ধকারের দোলার মতোই সুস্পষ্ট এবং চিরন্তন, এমন মানুষের এক"জন ছিলেন লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। শৈশব থেকে প্রৌঢ় যৌবন পর্যন্ত বিভূতিবাবু যে বাস্তব ও কল্পনা সঞ্জীবিত যে পারিপার্শ্বিকের মধ্যে নিবিষ্ট হয়ে প্রাণরস পান করেছিলেন সেই পারিপার্ধিকের উপর তার যে টান ছিল তা সাহিত্যিকের ভাবকল্পনা নয়, ভাণ-উচ্ছ্বাসও নয়, তা হল ব্যাকুল ভালো লাগার ‘মন কেমনের হাওয়ার পাক"। র্তার লেখার এ ভালো লাগার প্রকাশ হয়েছে সকরুণ nostalgia-য় । রবীন্দ্রনাথের কবিতা "যেতে নাহি দিব" ( ১৮৯২ ) এবং গান “এই তো ভাল লেগেছিল আলোর নাচন পাতায় পাতায়" (১৯১৬) বিভূতিবাবুর গল্প-উপন্যাসের cn ffè PI-romantic nostalgia—তার মর্মের ইঙ্গিত ধ্বনিত করে । যে জীবনের স্পন্ন বিভুক্তিবাবু পল্লীতে শহরে হাটে-বাজারে, ঝোপে-ঝাড়ে, অরণ্যে-পর্বতে, জঙ্গমে ও স্থাবরে অনুভব করে তার সঙ্গে মনের গাঁটছড়ায় বাধা পড়েছিলেন সেই সহজ সরল জীবনস্রোতের ক্ষণভঙ্গুর প্রবাহ তার রচনায়—গল্পে এবং গল্পের মালা উপন্যাসে—প্রতিফলিত হয়েছে। } বিভূতিবাবুর গল্পে আমরা profundity অর্থাৎ অগাধ-উত্তঙ্গ ভাব এমন কিছু পাব ন, কিন্তু যা প্রচুর পাব তা হল fundamentality অর্থাৎ তার সাধারণ পাঠকের মনে থই মেলা গভীরতা। "যেতে নাহি দিব” কবিতাটি রচনার অল্প কয়েক মাস আগে লেখা “বৰ্ষাযাপন” কবিতায় রবীন্দ্রনাথ তার ছোটগল্প লেখার প্রেরণা উপলক্ষ্যে এক ধরণের ছোটগল্পের মোটামুটি যে লক্ষণ নির্দেশ করেছিলেন বিভূতিবাবুর অধিকাংশ গল্পের লক্ষণও তাই । অধিকন্তু মন কেমনের মোচড় একটু বেশীমাত্রায় । রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিশ্বতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু-চারিটি অশ্রজল ।