পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 《) আমি চোখ মুছে বললুম—না। ও কিছু না— - আমার তখন কথা বলতে ভাল লাগচে না। সীতার বিবাহ নিশ্চয়ই হচ্ছে, আজ এখুনি হচ্ছে । আমি ওকে বড় ভালবাসি—আমার চোখকে ফাকি দিয়ে জ্যাঠামশায় ওর বিবাহ দিতে পারবেন না। আমি সব দেখেচি । নবীন মুহুরীকে বললাম—তুমি আমাকে ছুটি দাও আজ, শরীরটা ভাল নেই, একটু শোব। পরদিন বড়বাবুর চাকর কলকাতা থেকে এল। মায়ের একখানা চিঠি কলকাতার ঠিকানায় এসে পড়েছিল, মায়ের জবানি জ্যাঠামশায়ের লেখা আসলে। ২রা অগ্রহায়ণ সীতার বিয়ে, সেই জ্যাঠামশায়ের ঠিক করা পাত্রের সঙ্গেই। তিনি কথা দিয়েচেন, কথা খোয়াতে পারেন না । বিশেষ অত বড় মেয়ে ঘরে রেখে পাচজনের কথা সহ করতে প্রস্তুত নন। আমরা কোন কালে কি করব তার আশায় তিনি কতকাল বসে থাকেন—ইত্যাদি ! বেচারী সীতা ! ওর সাবান মাখ, চুলবাধ, মিথ্যে শৌধীনতার অক্ষম চেষ্টা মনে পড়ল। কত ক'রে ওর মুখের দিকে চেয়ে এতকাল কিছু গ্রাহ করিনি। বেশ দেখতে পেলাম ওর ঘন কালো চুলের সিতিপাটি ব্যর্থ হয়ে গেল—ওর শুভ্ৰ, নিম্পাপ জীবন নিয়ে সবাই ছিনিমিনি থেললে । b | > || এখান থেকে কলকাতায় যাবার সময় হয়ে এল। বিকেলে আমি বটতলার পুকুরের ঘাটে বসে মাছ ধরা দেখচি, নবীন মুহুরী এসে বললে—তোমায় ডাকচেন মেজবাবু। ওর মুখ দেখে আমার মনে হ’ল গুরুতর একটা কিছু ঘটেছে কিংবা ও-ই আমার নামে কি লাগিয়েচে । নবীন মুহুরী এরকম বার-কয়েক আমার নামে লাগিয়েচে এর আগেও । কারণ তার চুরির বেজায় অসুবিধে ঘটচে আমি থাকার দরুণ। মেজবাবু চেয়ারে বসে, কুঞ্জ নায়েবও সেখানে দাড়িয়ে । মেজবাবু আমাকে মানুষ বলেই কোনো দিন ভাবেননি। এ পর্য্যন্ত আমি পারতপক্ষে র্তাকে এড়িয়েই চলে এসেচি। লোকটার মুখের উগ্র দাম্ভিকতা আমাকে ওঁর সামনে যেতে উৎসাহিত করে না। আমায় দেখে বললেন—শোন এদিকে। কলকাতায় গিয়ে তুমি অন্ত জায়গায় চাকুরির চেষ্টা করবে। তোমাকে এক মাসের নোটিশ দিলাম। —কেন, কি হয়েচে ? —তোমার মাথা ভাল না, এ আমিও জানি, নবীনও দেখেচে বলচে । হিসেব-পত্রে প্রায়ই গোলমাল হয়। এরকম লোক দিয়ে আমার কাজ চলবে না। স্টেটের কাজ তো ছেলেখেলা নয় | নবীন এবার অামার শুনিয়েই বললে-এই তো সেদিন আমার সামনেই হিসেব মেলাতে মেলাতে মৃগীরোগের মত হয়ে গেল—আমি তো ভয়েই অস্থির— মেজবাবুকে বিদ্বান বলে আমি সন্ত্রমের চোখেও দেখতাম—বললাম—দেখুন, তা নয়। আপনি তো সব বোঝেন, আপনাকে বলচি । মাঝে মাঝে আমার কেমন একটা অবস্থা হয় শরীরের ও মনের, সেটা বলে বোঝাতে পারি নে—কিন্তু তখন এমন সব জিনিস দেখি, সহজ অবস্থায় তা দেখা যার না । ছেলেবেলার আরও অনেক দেখতুম, এখন কমে গিয়েচে । তখন বুঝতাম না, মনে ভয় হ’ত, ভাবতাম এসব মিথ্যে, আমার বুঝি কি রোগ হয়েচে । কিন্তু এখন