পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ Ե(է দণ্ডায়মানা একটি নারীমূৰ্ত্তির দিকে চেয়ে আমার মনে হ’ল দাড়ানোর ভঙ্গিটা আমার পরিচিত। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পারলাম নHআঙর কিনতে চলে গেলাম। ফিরবার সময় দেখি ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডের কাছে একটি পচিশ-ছাব্বিশ বছরের যুবকের সঙ্গে দাড়িয়ে শ্রীরামপুরের ছোট বৌঠাকুরুন। আমি কাছে যেতেই বৌঠাকরুণ চমকে উঠলেন প্রায় । বললেন—আপনি ! কোথেকে আসচেন ? এমন চেহারা ? আমি বললুম—আপনি একটু আগে মেয়েদের ওয়েটিং-রুমের কাছে দাড়িয়ে ছিলেন ? —হঁ্য, এই যে আমরা এখন এলাম যোগবাণীর গাড়িতে—আমরা শ্রীরামপুরে যাচ্চি। ইনি মেজদা, একে দেখেন কি কখনও ? যুবকটি আমায় বললে—আপনি তা হ’লে একটু দাড়ান দয়া করে—আমি একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসি—এখানে দরে বনচে না— 蜀 সে চলে গেল। ছোট বৌঠাকরুন বললেন—মাগো কি কালীমূৰ্ত্তি চেহারা হয়েচে । বড়দি বলছিল আপনি নাকি কোথায় চলে গিয়েছিলেন, খোজ নেই—সত্যি ? —নিতান্ত মিথ্যে কি ক’রে বলি ! তবে সম্প্রতি দেশে যাচ্চি । ছোট বৌঠাকুরুন হাসিমুখে চুপ ক’রে রইলেন একটু, তার পর বললেন—আপনার মত লোক যদি কখনও দেখে থাকি ] আপনার পক্ষে সবই সম্ভব। জানেন, আপনি চলে আসবার পর বড়দির কাছ থেকে আপনার সম্বন্ধে অনেক কথা জিজ্ঞেস ক'রে করে শুনেচি। তখন কি অত জানতাম । বড়দি বাপের বাড়ি গিয়েচে আশ্বিন মাসে—আপনার সঙ্গে দেখা হবে’খন। আচ্ছ, আর শ্রীরামপুরে গেলেন না কেন ? এত ক’রে বললাম, রাখলেন না কথা ? আমার ওপর রাগ এখনও যায়নি বুঝি ? —রাগ কিসের ? আপনি কি সত্যি ভাবেন আমি আপনার ওপর রাগ করেছিলাম ? ছোট বৌঠাকুরুন নত মুখে চুপ করে রইলেন। —বলুন ! ছোট বৌঠাকুরুন নতমুখেই বললেন—ও কথা যাক। আপনি এরকম ক'রে বেড়াচ্চেন কেন ? পড়াশুনো করলেন না কেন ? —সে সব অনেক কথা । সময় পাই তো বলব একদিন । —আসুন না আজ আমাদের সঙ্গে শ্রীরামপুরে ? দিনকতক থেকে যান, কি চেহারা হয়ে গিয়েচে আপনার | সত্যি, আমুন আজ । —না, আজ নয়, দেশে যাচ্চি, খুব সম্ভব মায়ের বড় অমুখ— ছোট বৌঠাকুরুন বিস্ময়ের মুরে বললেন—কই, সে কথা তো এতক্ষণ বলেননি। সম্ভব মানে কি, চিঠি পেয়েচেন তো, কি অসুখ ? একটু হেসে বললাম—ন, চিঠি পাইনি। আমার ঠিকানা কেউ জানতো না। স্বপ্নে দেখেছি— ছোট বৌঠাকুরুন একটু চুপ করে থেকে মৃদু শান্ত স্বরে বললেন—আমি জানি। তখন জানতাম না আপনাকে, তখন তো বয়সও আমার কম ছিল । বড়দি তার পর বলেছিল। একটা কথা রাখবেন ? চিঠি দেবেন একখানা 7 অন্ততঃ একখানা লিখে খবর জানাবেন — ছোট বৌঠাকুরুন আগের চেয়ে সামান্ত একটু মোটা হয়েছেন, আর চোখে সে বালিকাসুলভ তরল ও চপল দৃষ্টি নেই, মুখের ভাব আগের চেয়ে গভীর। আমি হেসে বললাম—আমি চিঠি না দিলেও, শৈলদির কাছ থেকেই তো জানতে পারবেন খবর—