পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্ট্রি-প্রদীপ եԳ থেকে। এই তো নিতু ও মাসেও এসেছিল। আহ, বাছাকে কি অপমান করলে সবাই মিলে । আমার কপালে কেবল চারদিকে অপমান ছাড়া আর কিছু জোটে না— কেন চাকরি ছেড়ে দিলাম ? কেন এভাবে ঘুরে ঘুরে বেড়াই ? এখন দেখতে পাচ্চি সীতার বিবাহ হয়ে গেলেই আমার কৰ্ত্তব্য শেষ হয়েচে ভাবা উচিত ছিল না। মাকে আমি উপেক্ষা করে এসেচি এতদিন, দাদা সাধ্যমত অবিপ্তি করেচে–কিন্তু আমি কিছুই করিনি। কেন আমার এমনধারা মতিগতি হ’ল ? কোথায় আমার কৰ্ত্তব্য, সে সম্বন্ধে আমি অন্ধ ছিলাম কেন ? লজ্জিত ও অমৃতপ্ত স্বরে বললাম—ম, আঙুর খাবে?.আঙর এনেছি, ভাল আঙুর শেয়ালদ’ থেকে— —ভূতোকে বললাম, একটা আলো দিয়ে আয়, তা দেয় নি দেখচি–বলতে বলতে ছোটকাকীমা ঘরের দোরের কাছে এসে আমায় দেথে থমকে দাড়িয়ে বললেন—কে বসে ওখানে ? আমি অপরাধীর মত কুষ্ঠিত স্বরে বললাম—আমি কাকীমা । এগিয়ে এসে বললেন-কে, নিতু ? —না, আমি । কাকীমা অবাক হয়ে বললেন—ওম, জিতু যে দেখচি, কোথেকে, কি ভাগি তোমার মায়ের ? তারপর, কি মনে ক’রে ? আমি মাথা হেঁট ক'রে বসে রইলাম, কি আর বলব। কাকীমা বললেন—তোমার কাগুজ্ঞান যে কবে হবে, তা ভেবেই পাই নে । একেবারে এ-কটা বছর নিরুদেশ নিখোজ —আর এই এভাবে মাকে ফেলে রেখে ! তোমাদের একটু জ্ঞান নেই যে এটা কার বাড়ি ? এখানে কে ছাথে তোমার মাকে ? সবই তো জান—বয়েস হয়েচে, এখনও বুদ্ধি হ’ল না ? বটুঠাকুর বাড়ি নেই, একটা ডাক্তার-বছি কে দেথায় তার নেই ঠিক । হরি ডাক্তারকে একবার আনতে হয়—টাকাকড়ি কি আছে ? নেই বোধ হয়, সে দেখেই বুঝিচি—নেই। আচ্ছা, টাকা আমি দেব এখন, ভেবো না, ডাক্তার আনে । ছোটকাকীমার পায়ের ধুলো নেবার ইচ্ছা হ’ল। এ বাড়িতে সবাই পশু, সবাই অমানুষ— সত্যিকার মেয়ে বটে ছোটকাকীমা। রাত্রেই ডাক্তার এল । ওষুধপত্রও হ’ল। দাদাকে পত্র দিলাম পরদিন সকালে । আমায় নিয়ে খুব হৈ-চৈ হ'ল। জ্যাঠাইমা আমায় রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে খেতে দেবেন না —আমি জাতবিচার মানি নে, বাগদি দুলে সবার হাতে খেয়ে বেড়াই, এসব কথা কে এসে গায়ে বলেচে। নানা রকম অলঙ্কার দিয়ে কথাটা রাষ্ট্র হয়েচে গায়ে । মায়ের অবস্থা শেষরাত থেকে বড় খারাপ হ’ল । সকালে আমাকে আর চিনতে পারেন না—ভুল বকতেও লাগলেন । সন্ধ্যার সময় একটা মিটমিটে টেমি জলচে ঘরের মেঝেতে—আমি একা বসে আছি মায়ের শিয়রে, এমন সময় বাইরে উঠোনে একখানা গরুর গাড়ি এসে দাড়াবার শব্দ হ’ল। একটু পরেই ব্যস্তসমস্ত ভাবে মাটিতে আঁচল লুটোতে লুটোতে সীতা ঘরে ঢুকল। আমার দেখে বললে, ছোড়দা ? মা কেমন আছেন ছোড়দা ? আমি ওর দিকে চেয়ে রইলাম। সীতা একেবারে বদলে গিয়েচে, মাথায় কত বড় হয়েচে, দেখতেও কি মুন্দর হয়েচে—ওকে চেনা যায় না আর । মাকে বললাম—ম, ওমা, সীতা এসেচে,- | মা চাইলেন, কি বললেন বোঝা গেল না। বোধ হয় বুঝতে পারলেন না যে সীতা