পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

속 হওয়াই তার লক্ষ্য । সত্যের মুখোখখি দাঁড়াবার শক্তি থাকলে অপর তার নিজের জীবনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে স্পষ্টভাবে তার চিন্তায় কমে ব্যক্ত করতে পারত। সে কলকাতায় এসেছিল জীবনকে প্রসার করতে । এক বছর কলকাতায় কাটিয়ে অপর বুঝতে পারল তার জীবনের প্রসারতা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে, জগৎ এবং জীবনকে সে নতুন চোখে দেখতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু ‘মনের প্রসারতা' ব্যাপারটি কি এবং কেমন করে অপর তা আয়ত্ত করল আমরা পাঠকরা তা জানি না । ‘মনের প্রসারতা" লাভে তার জীবনের গতি এবং লক্ষ্যের কি পরিবতন হল, তার প্রমাণও পাই না । আমরা শুধ দেখি, অপর নিজের মনের ধোঁয়া তার চলার পথকে আচ্ছন্ন করেছে এবং অস্বচ্ছ আলোকে পথ চলতে গিয়ে পদে পদে সে হোচট খেয়েছে, দিগভ্ৰান্ত হয়েছে । যেআলোতে প্রাণের প্রদীপ জলে এবং পদযাত্রা সহজ হয়, সে আলো অপর মনে পৌছয় নি । সে কলেজের ক্লাস পালিয়েছে, বন্ধদের কাছে নিজের অর্থ ও বংশ গৌরবের মিথ্যা বড়াই করেছে, বাইরের পোশাক এবং বাইরের ঘরের আসবাবপত্র দেখে মানুষের মনুষ্যত্ব বিচার করেছে, অন্ন এবং বাসস্হানের ধাঁধায় ঘোরাঘুরি করে উদ্ধাত্ত সময়ে পড়া-পড়া খেলা করেছে। পঠনীয় বিষয়ের মধ্যে কখনও গ্রীস ও রোমের জীবনযাত্রা প্রণালী, কখনও কীটস, কখনও হল্যান্ড রোজের নেপোলিয়ান, কখনও চাঁদের দেশের পাহাড়শ্রেণী, কখনওবড়লোকের জীবনী। অপর পঠিত গ্রন্থের তালিকা এবং বিষয়-সচী দিয়ে লেখক আপন কতব্য শেষ করেছেন । কিন্তু পড়াটাই তো আসল নয়। চিন্তা-কম-আদশ-জীবনভাবনার উপর অধীত বিদ্যার প্রভাবটাই আসল । সে-বিচারে অধ্যয়ন অপর খেলার অঙ্গ ৷ শৈশবে সে গলঞ্চ লতা দিয়ে বাড়ীর উঠোনে টেলিগ্রাফের তার বসাত, যৌবনে সে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ে— দটোতে কোনো পাথক্য নেই, দুটোই খেলা। আমরা দেখি, কলকাতায় যে-ব্যাপারটি সম্পকে অপর সবাপেক্ষা বেশি সচেতন এবং যে-ব্যাপারটি তাকে সবাপেক্ষা বেশি পীড়িত করেছে তা হলো অন্নকটে । ক্ষুধা এবং ক্ষন্নিবৃত্তির চিন্তা লেখক এবং অপর দুজনকেই বড় বেশি রকম উদভ্ৰান্ত করেছে । ‘অপরাজিত' পড়ে অপর জন্য কষ্ট হয়, অপর প্রস্টার জন্য কষ্ট হয়। নিশ্চিশিদপুরের নীল আকাশের নীচে যে মগধ বালকটি হেসে-খেলে, নেচে-দলে বড় হয়েছে, লেখক তাঁকে কলকাতার খাঁচায় ছাতু খাইয়ে হত্যা করেছেন। নিশ্চিন্দিপুরের তরণ গরুড়কে অসীম সাহসিকতায় লেখক যৌবনে নিয়ে এসেছেন কিন্তু তার উড়বার আকাশ দিতে পারেন নি । চিন্তা-অধ্যয়ন-জনসংসগ"-প্রধানত এই তিন উপায়ে মানুষের মনের প্রসারতা আসে, জীবনভাবনা স্পষ্ট হয়। অপর চিন্তার জগৎ এবং জীবন সম্পকে কোনো জিজ্ঞাসা জাগে নি। সে চিন্তাশীল নয়, ভাবপ্রবণ। অধ্যয়ন তার খেলা । এবং সমগ্র অপরাজিত"-র জনতার মধ্যে অপর একটি সম্প্রজনুব্যক্তিরও সাক্ষাৎ পায় নি। এমন কি ক্লাইভ স্ট্রীটের দালাল আবদলে তাকে প্রবঞ্চনা করেছে, ছাত্রী প্রীতি অপমান-করেছে, সরেশদার মা নববষের প্রথম দিনটিতে তাকে না খাইয়ে বিদায় দিয়েছে, চাঁপদানীর কুল থেকে সে অসম্মানে বিতাড়িত হয়েছে। কলকাতার অসন্মানের-অভাবের-অনশনের-শ্ৰীহীনতার দিনগুলি অপর জীবনের অগ্নিপরীক্ষা । কিন্তু অগ্নিতে জীবনের, কোন খাদ পড়ল, কোন বর্ণ ভাস্বর হয়ে উঠল তা দেখতে পাই না । অগ্নিপরীক্ষার প্বেকার এবং পরের অপর পাথক্য আমরা দেখতে চাই, কিন্তু দেখতে পাই না। কলকাতা-জীবনের মেঘ অপর মনের মাটিতে ধারা-বষণ না করেই শরতের মেঘের মত হাওয়ায় টুড়ে গেছে। ছাত্রজীবনের পর শ্ৰীগোপাল মল্লিক লেনে তের টাকার ভাড়াতে নীচু একতলা ঘরে অপর দ্বাপত্য জীবন । লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন, "শতকরা নিরানব্বই জনের বেলা যা হয়,