পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত సిషి নিজের প্রথম বইখানির দিনে দিনে প্রবদ্ধমান পাণ্ডুলিপিকে সে সস্নেহ প্রতীক্ষার চোখে দেখে—বইয়ের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কত কথা তাহার আগ্রহভরা বক্ষপন্দনে আশা, আনন্দের সঙ্গীত জাগায়—মা যেমন শিশুকে চোখের সম্মুখে কান্নাহাসির মধ্য দিয়া বাড়িতে দেখেন, দর দরে বক্ষে তাহার ভবিষ্যতের কথা ভাবেন—তেমনি । বই-লেখার কন্টটুকু করার চেয়ে বইয়ের কথা ভাবিতে ভাল লাগে । বসুদের কথা বইয়ে লেখা থাকিবে ?-কত লোকের কথা । গরীবদের কথা । ওদের কথা ছাড়া লিখিতে ইচ্ছা হয় না । পথে ঘাটে, হাটে, গ্রামে, শহরে, রেলে কত অদ্ভুত ধরণের লোকের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়াছে জীবনে—কত সাধু-সন্ন্যাসী, দোকানী, মাস্টার, ভিখারী, গায়ক, পতুল-নাচওয়ালা, আমপাড়ানি, ফেরিওয়ালা, লেখক, কবি, ছেলে-মেয়ে—এদের কথা । আজিকার দিন হইতে অনেক দিন পরে—হয়তো শত শত বৎসর পরে তাহার নাম যখন এ-বছরের-ফোটা-শালফুলের মঞ্জরীর মত—কিংবা তাহার ঘরের কোণের মাকড়সার জালের মত —কোথায় মিলাইয়া যাইবে, তখন তাহার কত অনাগত বংশধর কত সকালে সন্ধ্যায়, মাঠে, গ্রাম্য নদীতীরে, দুঃখের দিনে, শীতের সন্ধ্যায় অথবা অন্ধকার গহন নিস্তম্বধ দপর রাত্রে, শিশিরভেজা ঘাসের উপর তারার আলোর নীচে শুইয়া-শুইয়া তাহার বই পড়িবে—কিংবা বইয়ের কথা ভাবিবে। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কত আশংকাও জাগে । যদি কেউ না পড়ে ? আবার ভাবে, পৃথিবীর কোন অতীতে আদিম যুগের শিল্পীদল দগম গিরিগুহার অন্ধকারে বাষ, বাইসন, ম্যামথ অকিয়া গিয়াছিল— প্রাচীনদিনের বিস্মত . প্রতিভা এতকাল পর তাহার দাবি আদায় করিতেছে—নতুবা ক্যাটারিয়া, দদ"ঞ ও পিরেনিজের পবিতগুহাগলায় দেশবিদেশের মনীষী ও ভ্রমণকারীদের এত ভিড় কিসের ? তেলাকুচা লতাটা শুকাইয়া গিয়াছে ; কিন্তু সে জীবন দিয়া ফলটাকে মানুষ করিয়া গিয়াছে যে ! আত্মদানের ফল ব্যথা যাইবে না। কত গাছ গজাইবে ওর বীজে-– নিজের প্রথম বইখানি—মনে কত চিন্তাই আসে। অনভিজ্ঞ মন সবতাতেই অবাক হইয়া যায়, সবতাতেই গাঢ় পুলক অনুভব করে । এই তাহার বই লেখার ইতিহাস । কিন্তু প্রথম ধাক্কা খাইল বইখানার পাডুলিপি হাতে দোকানে দোকানে ঘুরিয়া। অজ্ঞাতনামা লেখকের বই কেহ লওয়া দরে থাকুন, ভাল করিয়া কথাও বলে না। একটা দোকানে খাতা রাখিয়া যাইতে বলিল । “দিন পাঁচেক পরে তাহাদের একখানা পোস্টকাড পাইয়া অপ ভাল কাপড় পরিয়া, জতা বরিশ করিয়া বন্ধীর চশমা ধার করিয়া দর দর; বক্ষে সেখানে গিয়া হাজির হইল । অত ভাল বই তাহার—পড়িয়া হয়ত উহারা অবাক হইয়া গিয়াছে । দোকানের মালিক প্রথমে তাহাকে চিনিতে পারিল না, পরে চিনিয়া বলিল—ও ! ওহে সতীশ, এ'র সেই খাতাখানা একে দিয়ে দাও তো—বড় আলমারির দেরাজে দেখো । অপর কপাল ঘামিয়া উঠিল । খাতা ফেরত দিতে চায় কেন ? সে বিবণ মুখে বলিল —আমার বইখানা কি— না। নতুন লেখকের বই নিজের খরচে তাহারা ছাপাইবে না। তবে যদি সে পাঁচ শত টাকা খরচ দেয়, তবে সে অন্য কথা । অপর অত টাকা কখনও এক জায়গায় দেখে নাই। পরদিন সকালে বিমলেন্দ; অপর বাসায় আসিয়া হাজির ৷ বৈকালে পাঁচটার সময় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনের মাঠে লীলা আসিবে, বিশেষ করিয়া বলিয়া দিয়াছে