পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ0Ե বিভূতি-রচনাবলী কি, বটে ? রাগে অপমানে কাজলের মখে রাঙা হইয়া গেল । ইহাদের হাতে মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা তাহার এই প্রথম । সে ছেলেমানষি সরে চিৎকার করিয়া বলিল—মখপড়ি, হতচ্ছাড়া তুমি মাললে কেন ? বিশ্বেশ্ববর তাহার গালে জোরে এক চড় বসাইয়া দিয়া বলিল-আমি কেন, এসো তো কত্তার কাছে একবার—এসো । কাজল পাগলের মত যা তা বলিয়া গালি দিতে লাগিল । চড়ের চোটে তখন তাহার কান মাথা ঝাঁ-ঝা করিতেছে, এবং বোধ হয় এ অপমানের কোনও প্রতিকার এখানকার কাহারও নিকট হইতে হইবার আশা নাই, মহে হ'-মধ্যে ঠাওরাইয়া বুঝিয়া চিৎকার করিয়া বলিল— আমার বা-বাবা আসক, বলে দেব, দেখো-দেখো তখন— বিশেবখবর হাসিয়া বলিল-আচ্ছা যাও, তোমার বাবার ভয় আমি একেবারে গতের মধ্যে যাব আর কি ? আজ পাঁচ বছরের মধ্যে খোঁজ নিলে না, ভারী তো – হয়ত একথা বলিতে বিবেশবর সাহস করিত না, যদি গে না জানিত তাঁহার এ জামাইটির প্রতি কতার মনোভাব কিরুপ । কাজল রাগের মাথায় ও কতকটা পাছে বিশ্বেবর দাদামশায়ের কাছে ধরিয়া লইয়া যায় সেই ভয়ে, পুকুরের দক্ষিণ-পাড়ের নারিকেল বাগানের দিকে ছটিয়া যাইতে যাইতে বলিতে লাগিল –দেখো না, দেখো তুমি, বাবা আনকে না-পরে পিছন দিকে চাহিযা খুব কড়া কথা শনানো হইতেছে, এমন সরে বলিল -তোমার পেটে খি-খিচুড়ি আছে, খি-খিচুড়ি খাবে – খিচুড়ি ? 韓 নদীর বাঁধাঘাটে সেদিন সন্ধ্যাবেলা বসিয়া বসিয়া সে অনেকক্ষণ দিদিমার কথা ভাবল । দিদিমা থাকিলে বিশ্বেশ্বর মহারী গায়ে হাত তুলিতে পারিত ? সে জবাপাতার বেগনি খায় তো ওর কি ? ঐ একটা নক্ষত্র খসিয়া পড়িল । দিদিমা বলিত নক্ষত্র খসিয়া পড়িলে সে সময় পথিবীতে কেউ না কেউ জন্মায় । মরিয়া কি নক্ষত্র হয় ? সে যদি মারা যায়, হয়তো অমনি আকাশের গায়ে নক্ষত্র হইয়া ফুটিয়া থাকিবে। আরও মাস কয়েক পরে, ভাদ্রমাসের শেষের দিকে । দাদামশায়ের বৈকালিক মিছরির পানা খাওয়ার শ্বেত পাথরের গেলাসটা তাহার বড় মামামা মাজিয়া ধুইয়া উপরের ঘরের বাসনের জলচৌকিতে রাখিতে তাহার হাতে দিল । সিড়িতে উঠিবার সময় কেমন করিয়া গেলাস হাত হইতে পড়িয়া চুরমার হইয়া গেল ভাঙিয়া । . কাজলের মুখ ভয়ে বিবণ হইয়া গেল, তাহার ক্ষুদ্র হৃৎপিন্ডের গতি যেন মিনিটখানেকের জন্য বন্ধ হইয়াগেল, যাঃ, সব নাশ। দাদামশায়ের মিছরিপানার গেলাসটা যে ! সে দিশেহারা অবস্থায় টুকরাগুলো তাড়াতাড়ি খুটিয়া খটিয়া তুলিল পরে অন্য জায়গায় ফেলিলে পাছে কেহ টের পায়, তাই তাড়াতাড়ি আরব্য উপন্যাস যাহার মধ্যে আছে সেই বড় কুাঠের সিন্দাকটার পিছনে গোপনে রাখিয়া দিল। এখন সে কি করে । কাল যখন গেলাসের খোঁজ পড়িবে বিকালবেলা, তখন সে কি জবাব দিবে ? কাহারও কাছে কোন কথা বলিল না, বাকী দিনটুকু ভাবিয়া ভাবিয়া কিছু ঠিক করিতেও পারিল না ; এক জায়গায় বসিতে পারে না, উদ্বিগ্ন মনখে ছটফট করিয়া বেড়ায়— ঐ রকম একটা গেলাস আর কোথাও পাওয়া যায় না ? একবার সে এক খেলড়ে বন্ধকে চুপি চুপি বলিল,—ভাই তো-তোদের বাড়ি একটা পাথরের গে-গেলাস আছে ?