পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షి বন্ধনের মধ্যে যে বন্ধন-মুক্তি সে-মুক্তির সংবাদ অপর জানা নেই। যে বন্ধনকে মেনে নিয়ে বন্ধন থেকে মন্ত হওয়ার উপায় জানে না, সে একটি বন্ধন এড়িয়ে আর একটি বন্ধনের ফাঁদে পা দেয়। অপর নিজের জীবনেই তা ঘটতে দেখেছি। সবজয়ার বন্ধন ছিন্ন হতে না হতেই অপণার বন্ধনে সে ধরা পড়েছে । অপণার বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে সে কি আবার কাজলের বন্ধনে ধরা পড়ে নি ? দরে গিয়েও কি সে কাজলের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পেরেছে ? মনে হয় না । বন্ধনকে স্বীকার করলে অপকে ভবঘুরে হওয়ার ভান করতে হত না । মানুষ অপর আদৌ ভবঘুরে নয়, অপর বলপনা ভবঘুরে r ভবঘরের জীবন অনাসক্তের জীবন । অপর তার পরিচিত পরিবেশ-পরিজনের সঙ্গে আসক্তিতে বন্ধ। এদের বাদ দিয়ে জীবনের কোনো আনন্দই তার কাছে আনন্দ নয়। যে-আনন্দের জীবন সে আবাল্য অন্বেষণ করে ফিরেছে সে-জীবনের সম্প্রধান তো সে পেয়েছিল নাগপরের অরণ্যে । ‘অপর এক সপণ নতন জীবন শরে হইল এ-দিনটি হইতে । এমন এক জীবন, যাহা সে চিরকাল ভালোবাসিয়াছে, যাহার স্বপ্ন দেখিয়া আসিয়াছে । কিন্তু কোনোদিন যে হাতের মঠায় নাগাল পাওয়া যাইবে তাহা ভাবে নাই।’ লক্ষ্যে পৌছে অপর আবার পরিচিত জীবনের মধ্যে ফিরে এল কেন ? নিশ্চিন্দিপুর, কাজল, লীলা, প্রণব, লীলাদি, মনসাপোতা, রাণাদি, রাণী, সতু—এরাই তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। দরের সপশ পাওয়ার জন্য, অধরাকে ধরবার উদ্দেশ্যে অপর যেখানেই যাক, পরিচিত নিকটকে ঘিরে তার আনাগোনা চলবে। প্রণবের কাছে অপর নিশ্চিন্দিপুরের কথা বলতে গিয়ে স্বীকার করেছে, এখানে বঝেছি জগতে কত সামান্য জিনিস থেকে কত গভীর আনন্দ আসতে পারে । তুচ্ছ টাকা, তুচ্ছ যশমান । আমার জীবনে এরাই হক অক্ষয় । এত ছায়া, এত ডাঁসা খেজুরের আতা ফুলের সগন্ধ, এত মতির আনন্দ আর কোথায় পাব ? হাজার বছর কাটিয়ে দিতে পারি এখানে, তব এ পরনো হবে না যেন।" তথাপি, ভবঘরের জীবন কেন ? যে-মাটিতে জীবন ধন্য, যে-আনন্দ জীবনে অক্ষয়, সেই মাটি, সেই আনন্দ ফেলে অপরিচিত দরে জগতে কিসের অন্বেষণ ? এর উত্তর অপর জানে না, সম্ভবত লেখকও না । আমি অপরাজিত"-র মধ্যে একটা ট্রাজেডি দেখতে পাই । কাছের পরিচিত জগৎকে অবহেলা করে দরের অপরিচিতের রোমান্স-সন্ধানের ট্রাজেডি। মনসাপোতায় যাজনবত্তিতে অপর মনে সায় ছিল না। তার ধারণা ছিল মনসাপোতায় ‘অন্ধকার, দৈন্য, নিভিয়া যাওয়া’ আর কলকাতায় জীবন, আলো, পটি, প্রসারতা।’ শেষে অপর বুঝেছে কত সামান্য জিনিস থেকে কত গভীর আনন্দ আসতে পারে।’ লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, ঘোরাঘুরি করে এই গভীর আনন্দ পাওয়া যায় না। অনেক চোখের জলে, অনেক পীড়নে অপর এ-শিক্ষা হয়েছে। শিক্ষা যখন হয়েছে তখন সে হতোদ্যম, আশাহত। তাই প্রশান্ত মহাসাগরের ফিজি ও সামোয়া দ্বীপে সে আত্মোগোপন করেছে । কিন্ত কাজলকে রেখে গিয়েছে সেই ক্ষুদ্র সঙ্কীণ জগতে । © নীরেন্দ্রনাথ রায় প্রশ্ন করেছিলেন, "জীবনের জটিলতাকে জানিলে তবেই জীবনকে জয় করা সাথ'ক, যে তাহা জানিল না সে কিসে অপরাজিত ? সঙ্গত প্রশ্ন । নীহাররঞ্জন রায় এই সঙ্গত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি। উত্তর "অপরাজিত"-র মধ্যেই আছে । অপ জীবন-যন্ধে অপরাজিত—একথা বিভুতিভূষণ এবং নীহারবাব স্বীকার করলেও নীরেন্দ্রনাথ রায়ের মত আমিও বিশ্বাস করতে পারি না। প্রণবের কাছে লেখা অপর চিঠিখানি বিজয়ীর চিঠি নয়, সে চিঠির মধ্যে আশাহত ব্যর্থজীবনের দ্বীঘ’বাস শুনতে পাই । ‘অপরাজিত'-তে জীবন-যন্ধ নেই, আছে দারিদ্র্যের পীড়ন । নিমমি দারিদ্র্য অপকে ভেঙে মনুষড়ে দিয়েছে, তার রঙীন বল্পগুলিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। অপরাজিত-র শেষে যে-অপকে দেখি—